Advertisement
E-Paper

জামিন পেয়ে বেপাত্তা খুনে অভিযুক্তেরা

বৃহস্পতিবারের বারবেলা। ঘড়ির কাঁটা সবে দুপুর সওয়া ১২টা ছুঁয়েছে। কাজ দেখাশোনা করতে নিজের নির্মীয়মাণ বহুতল হোটেলে পৌঁছেছিলেন বছর বিয়াল্লিশের রামলক্ষ্মণ যাদব। সঙ্গে আরও তিন জন।আচমকা ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে এল গুলি।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৬ ০০:৩৪

বৃহস্পতিবারের বারবেলা। ঘড়ির কাঁটা সবে দুপুর সওয়া ১২টা ছুঁয়েছে। কাজ দেখাশোনা করতে নিজের নির্মীয়মাণ বহুতল হোটেলে পৌঁছেছিলেন বছর বিয়াল্লিশের রামলক্ষ্মণ যাদব। সঙ্গে আরও তিন জন।

আচমকা ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে এল গুলি। নিমেষে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন চার জন। ‘অপারেশন’ শেষ করে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়েই দু’টি দলে ভাগ হয়ে হেঁটে এলাকা ছেড়ে যায় দুষ্কৃতীরা।

২০১১ সালের ২ জুন আসানসোলের অন্যতম জনবহুল কোর্ট মোড় অঞ্চলের ঘটনা। ভরদুপুরে এই রকম দুষ্কৃতী হামলার খবর ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি। গুলিবিদ্ধদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জড়ো হয়ে যান কয়েকশো বাসিন্দা। আতঙ্কে দোকানবাজারে ঝাঁপ পড়ে যায় দ্রুত। এলাকা জুড়ে তুমুল হট্টগোলের মাঝেই খবর আসে, রামলক্ষণ-সহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এক জন গুরুতর ভাবে জখম।

রাজ্যে তখন সদ্য গঠিত হয়েছে নতুন সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনার খবর পেয়েই দুষ্কৃতীরা যেন পালাতে না পারে সে দিকে নজর রেখে রাজ্যের সীমানা সিল করার নির্দেশ দেন। এলাকায় সতর্কতা জারি করে পুলিশ ও প্রশাসনের উচ্চ কর্তাদের ঘনঘন বৈঠক হয়। এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা ও রাজ্য পুলিশের বড় কর্তারা। নিহতদের পরিবার পিছু দু’লক্ষ টাকা ও জখম ব্যক্তির চিকিৎসার খরচ সরকারের তরফে দেওয়ার ঘোষণা করা হয়।

সে দিনের ঘটনা মনে পড়লে আজও শিউরে ওঠেন এলাকার বাসিন্দারা। ঘটনাস্থলের পাশেই একটি বহুতলের আবাসিক বৃদ্ধা বলেন, ‘‘জানালা দিয়ে দেখেছিলাম, ওঁরা পড়ে যাওয়ার পরেও উঠে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ঝাঁকে ঝাঁকে ধেয়ে আসা গুলি খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে যান।’’ ঘটনার পরেই পুলিশ স্থানীয় তিন জনকে গ্রেফতার করেছিল। পরে ধৃতেরা জামিন পেয়ে যায়। তদন্তে পুলিশ আর বিশেষ এগোতে পারেনি। পরে তদন্তভার নেয় গোয়েন্দা দফতর।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে উত্তরপ্রদেশের জোনপুর থেকে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জেরায় স্বীকার করে, তারাই সে দিনের ঘটনায় গুলি চালিয়েছিল। জেরা করে পুলিশ আরও জানতে পারে, মুন্না নামে কোনও এক ব্যক্তি এই তিন জনকে ২০ লক্ষ টাকায় সুপারি দিয়েছিল। যদিও সেই মুন্নাকে আজ অবধি পুলিশ খুঁজে পায়নি। তবে, দিন কয়েক পরেই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মৃত রামলক্ষণের ছায়াসঙ্গী ধনঞ্জয় সিংহকে পুলিশ গ্রেফতার করে। গ্রেফতার করা হয় আরও দু’জনকে। বেশ কয়েক মাস পরে সকলেই জামিন পেয়ে যায়। ইতিমধ্যে পুলিশ আসানসোল আদালতে এই মামলার চার্জশিট জমা দিয়েছে।

ঘটনার পরে কেটে গিয়েছে পাঁচ বছর। যে নির্মীয়মাণ ভবনের সামনে ঘটনাটি ঘটেছিল, সেখানে এখন বড় হোটেল তৈরি হয়েছে। পরিবারের তরফে হোটেলের মূল দরজায় রামলক্ষণ যাদবের একটি মূর্তিও বসানো হয়েছে। তবে মামলা এখনও বিচারাধীন থাকায় নিহতদের পরিবারের তরফে কোনও মন্তব্য করতে চাওয়া হয়নি। তবে এই মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখন শুনানি চলছে।’’ তিনি জানান, জামিনে মুক্ত ওই তিন শ্যুটার-সহ মোট পাঁচ জন এখন বেপাত্তা। তাদের বিরুদ্ধে আদালত ওয়ারেন্ট জারি করেছে। জানা গিয়েছে, পুলিশ খোঁজ করেও পুরনো ঠিকানায় অভিযুক্তদের হদিস পায়নি। এখন শুধু ধনঞ্জয়বাবু শুনানিতে হাজিরা দিচ্ছেন।

Murder Court Verdict from judge
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy