E-Paper

চাকরি গিয়েছে, পদ নিয়েও অস্বস্তি দলে

২০১৪ সালে পরীক্ষা দিয়েছিলেন শান্তনু। চাকরি পান ২০১৮য়। কাঁদরা অতুলকৃষ্ণ হাই স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী হিসাবে কাজে যোগ দেন তিনি।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:৪১
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

শিক্ষাকর্মী বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর অভাবে শীর্ষ আদালতের রায়ের অনেক আগেই বৈদ্যুতিন-ঘণ্টা (বেল) ব্যবহার করা শুরু করেছিল স্কুলগুলি। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জেলার প্রায় ২৬৫ জন শিক্ষাকর্মী ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর ‘ছুটির ঘন্টা’ বেজে গেল, বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও এই রায় তাঁদের ফের লড়াইয়ে আশা জোগাচ্ছে বলে দাবি শিক্ষিকর্মী ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের।

চাকরি হারানোর এই তালিকায় রয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক (বর্ধমান উত্তর) নিশীথ মালিকের খুড়তুতো ভাই শান্তনু। যিনি বর্ধমান ২ ব্লকের গোবিন্দপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধানও। শান্তনুর চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে দাদার ‘ভূমিকা’ ছিল বলে দাবি করেছেন অনেকে। আবার এখন চাকরি যাওয়া নিয়ে দল অস্বস্তিতে পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মী থেকে বিরোধীরা।

‘ইউনাইটেড টিচিং অ্যান্ড নন-টিচিং ফোরামের’ (২০১৬)’ জেলার নেতারা দাবি করেছেন, শিক্ষকরা যখন ‘স্বস্তি’ পেয়েছেন, সেই পথ ধরে তাঁরাও ফের আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেবেন।

২০১৪ সালে পরীক্ষা দিয়েছিলেন শান্তনু। চাকরি পান ২০১৮য়। কাঁদরা অতুলকৃষ্ণ হাই স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী হিসাবে কাজে যোগ দেন তিনি। গত ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর থেকে আর স্কুলে যাননি। পরে ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে জিতে বর্ধমান ২ ব্লকের গোবিন্দপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হন। বিরোধীরা তো বটেই তৃণমূলের একাংশের দাবি, মাথার উপর বিধায়ক-দাদার ‘হাত’ থাকায় চাকরি পাওয়া থেকে পঞ্চায়েতের কর্তা হয়েছেন শান্তনু। চাকরি চলে যাওয়ায় সেটাই সামনে এসে গিয়েছে। মন্তব্য করতে চাননি বিধায়ক।

গোবিন্দপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল কর্মীদের একাংশের দাবি, বাড়ি বাড়ি ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ চলছে। শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের চাকরি চলে যাওয়া নিয়ে এমনিতেই আলোচনা চলছে। এ বার উপপ্রধানের নাম নিয়েও চর্চা হবে। কয়েক জন তৃণমূল কর্মী বলেন, “ভোটার তালিকা নিয়ে বাড়ি বাড়ি গেলেই উপপ্রধানের চাকরি যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। যার জবাব আমাদের কাছে নেই।” পঞ্চায়েত সূত্রে জানা যায়, এ দিন দুপুরের পরে পঞ্চায়েত গিয়েছিলেন শান্তনু। সদস্যদের সাধারণ সভার বৈঠক করে চলে আসেন। এক পঞ্চায়েত সদস্য বলেন, “দাদার মন ভাল ছিল না। অনেকেই রায় নিয়ে জিজ্ঞাসা করেছেন। বিধায়কেরও মান-সম্মান জড়িয়ে রয়েছে।”

শান্তনুর দাবি, “আমার চাকরির ব্যাপারে দাদার কোনও হাত নেই। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে নিয়েছি।’’ বিধায়কও বলেন, “চাকরির ব্যাপারে আমার কোনও হাত নেই। সবাই যোগ্য। এর বাইরে কোনও মন্তব্য করব না।”

চাকরিহারার তালিকায় জেলার ১০২৫ জনের নাম ছিল। তার মধ্যে শিক্ষাকর্মী ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ২৬৫ জন। বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের দাবি, সরকারের ১৭-১৮টি প্রকল্প স্কুলে চলছে। তার বেশির ভাগই শিক্ষাকর্মীরা করেন। সর্বশিক্ষা অভিযান, স্কুলের ব্যাঙ্ক অ্যকাউন্টের ‘ক্যাশ বুক’ রক্ষণাবেক্ষণ, নবম ও একাদশ শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন, বাৎসরিক জেনারেল অডিটের নথি ঠিক রাখা, মার্কশিট দেওয়া তাঁদেরই রাখতে হয়। প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেসের’ দাবি, পাঁচ-ছ’বছর ধরে শিক্ষাকর্মীরা যে কাজ করছিলেন, তা বন্ধ হয়ে গেলে প্রধান শিক্ষকদের উপর চাপে পড়াটা স্বাভাবিক। মেমারির ভিএম ইনস্টিটিউটের (ইউনিট ১) প্রধান শিক্ষক আশিস ঘোষ দস্তিদার বলেন, “স্কুল চালাতে অস্থায়ী কর্মী নিতে হবে। ডিআই, শিক্ষা দফতরকে চিঠি পাঠাব।’’

ইউনাইটেড টিচিং অ্যান্ড নন-টিচিং ফোরাম (২০১৬)’-র শিক্ষাকর্মীদের তরফে প্রবীর চক্রবর্তী বলেন, “শিক্ষকদের নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আমাদের আশা জেগেছে। ফের আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Supreme Court SSC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy