Advertisement
E-Paper

গাড়িতে খুন, ন’বছরেও হয়নি সাক্ষ্য

গ্রামের হাটতলায় গণেশ পুজোর মূল উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। চলছিল তোড়জোড়। প্রতিমা কিনে আনবেন তিনি নিজে, জানিয়েছিলেন সকলকে। ২০০৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর, গণেশ পুজোর ঠিক আগের দিন, চুরুলিয়া থেকে নিজেই গাড়ি চালিয়ে বারাবনির বেলডাঙার দিকে যাচ্ছিলেন কালোসোনা রুইদাস।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৩১
বাড়িতে স্বামীর ছবি হাতে কালোসোনাবাবুর স্ত্রী পদ্মাদেবী। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

বাড়িতে স্বামীর ছবি হাতে কালোসোনাবাবুর স্ত্রী পদ্মাদেবী। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

গ্রামের হাটতলায় গণেশ পুজোর মূল উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। চলছিল তোড়জোড়। প্রতিমা কিনে আনবেন তিনি নিজে, জানিয়েছিলেন সকলকে।

২০০৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর, গণেশ পুজোর ঠিক আগের দিন, চুরুলিয়া থেকে নিজেই গাড়ি চালিয়ে বারাবনির বেলডাঙার দিকে যাচ্ছিলেন কালোসোনা রুইদাস। রাস্তা খারাপ দেখে এক জায়গায় গাড়ির গতি কমান বছর সাঁইত্রিশের কালোসোনাবাবু। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, ঠিক তখনই গাড়ির জানলার পাশে এসে পরপর গুলি চালায় এক মোটরবাইকের দুই আরোহী। কেউ কিছু বোঝার আগেই চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। গুলিতে ঝাঁঝরা কালোসোনাবাবুকে যখন আসানসোল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, ততক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

এলাকায় কয়লা কারবারি হিসেবে পরিচিত ছিলেন চুরুলিয়ার রুইদাসপাড়ার বাসিন্দা কালোসোনাবাবু। পুলিশের খাতায় কয়লা পাচারের বেশ কিছু অভিযোগও ছিল তাঁর নামে। এক সময়ে তৃণমূলে থাকলেও পরে যোগ দিয়েছিলেন সিপিএমে। তাঁকে খুনের পিছনে কী কারণ ছিল, ধোঁয়াশা পুরোপুরি কাটেনি। পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করে। এক অভিযুক্ত আদালতে আত্মসমর্পণ করে। ধৃতদের অন্যতম খলিল শেখও কয়লা পাচারে অভিযুক্ত ছিল। খুনের মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ এখনও শুরু হয়নি।

কালোসোনাবাবুর কাকা, রুইদাস পাড়ারই বাসিন্দা নন্দদুলাই রুইদাস খুনের পরে পুলিশে অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সে দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ ওকে কেউ ফোন করে ডাকে। সঙ্গে সঙ্গে একা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে কালোসোনা। ঘণ্টাখানেক পরে ফোনে খবর পেয়ে লোকজন নিয়ে বেলডাঙায় ছুটে যাই।’’ তাঁর দাবি, আশপাশের মানুষজনের কাছে জেনেছিলেন, গাড়ির পাশ থেকে ৯টি কার্তুজের খোল উদ্ধার হয়েছে। মাথায়, বুকে গুলি লাগে কালোসোনাবাবুর।

চুরুলিয়া হাটতলার বাসিন্দা উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় বলেন, “গণেশ পুজো আর হল না। যাওয়ার আগে কালোসোনা পুজো কমিটির লোকজনকে বলে গিয়েছিল, ফিরে এসে মূর্তি কিনে আনবে। আর ফেরাই হল না।” নিহতের শ্যালক নারায়ণ রুইদাস দাবি করেন, “কালোদা শেষ ফোনটা আমাকে করেছিলেন। কিন্তু কথা বলার আগেই গুলির আওয়াজে ফোন কেটে যায়। মোবাইল ভেদ করে গুলি চলে যায়।’’ ঘটনার পরে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বেশ কিছুক্ষণ রাস্তা অবরোধ করেন।

নন্দদুলালবাবু জানান, কালোসোনাবাবু তৃণমূলে ছিলেন দলের জন্মলগ্ন থেকে। তাঁর স্ত্রী পদ্মাদেবী তৃণমূলের হয়ে ভোটে জিতে পঞ্চায়েতের সদস্যও হন। কিন্তু বছর কয়েক পরেই নিজের অনুগামীদের নিয়ে সিপিএমে যোগ দেন কালোসোনাবাবু। কিন্তু ২০০৩ সালে আর তাঁর লোকজনকে পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট দেয়নি সিপিএম। তবে খুনের পিছনে রাজনৈতিক কোনও কারণ ছিল কি না, সে নিয়ে সংশয়ে পরিজনেরা। নন্দদুলালবাবু বলেন, ‘‘ঘটনার পরে আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তবে প্রতিবেশীরা সব সময় পাশে ছিলেন।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ফোনের সূত্র ধরেই পাশের গ্রাম দেশেরমহান থেকে খলিল-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে দু’জনই জামিন পায়। আর এক জন কোর্টে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেয়। খলিলের বক্তব্য, “পুলিশ প্রকৃত অপরাধীদের ধরতে পারেনি। তাই নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে আমাদের বলির পাঁঠা করেছে। নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দিক আদালত। আমাদের মতো নির্দোষরা সাজা পাবে না।”

অভিযোগকারী পক্ষের আইনজীবী শ্যামল চক্রবর্তী জানান, পুলিশ ২০১০-এর ১৮ মার্চ চার্জশিট জমা দিয়েছে আদালতে। তাতে অভিযুক্তেরা ষড়যন্ত্র করে খুন করেছে বলে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শীঘ্রই শুরু হবে।’’

কালোসোনাবাবু যখন খুন হন তখন তাঁর ছেলেমেয়ের বয়স দশ থেকে তেরো বছরের মধ্যে। তাঁর স্ত্রী পদ্মাদেবী বলেন, “সব কিছু যেন ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশা নিয়েই বেঁচে রয়েছি।”

• ২০০৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বারাবনির বেলডাঙায় গুলিতে খুন হন চুরুলিয়া রুইদাসপাড়ার কালোসোনা রুইদাস (৩৭)।

• নিহতের নামে কয়লা পাচারের বেশ কিছু অভিযোগ ছিল পুলিশের খাতায়। ষড়যন্ত্র করে খুন, দাবি পুলিশের।

• পাশের দেশেরমহান গ্রাম থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালতে আত্মসমর্পণ করে এক অভিযুক্ত। সবাই জামিনে মুক্ত।

• ২০১০ সালে চার্জশিট জমা পড়ে। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি এখনও।

Murder case eyewitness
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy