Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নেই বিদ্যুৎ, মোবাইল চার্জ দিতে ছুট পাশের গ্রামে

গ্রামের বেশ কিছু ছেলেমেয়ে স্কুলে পড়াশোনা করে। রাকেশ মেটে, বুধন সোরেনদের মতো কয়েক জন পড়ুয়া বলে, ‘‘রাতে পড়াশোনা করতে খুব অসুবিধা হয়। কেরোসিন না মিললে হ্যারিকেনের আলোও জ্বলে না।’’

আক্ষেপ: খুঁটি থাকলেও নেই বিদ্যুৎ। কাঁকসার দেরাইডাঙায়। নিজস্ব চিত্র

আক্ষেপ: খুঁটি থাকলেও নেই বিদ্যুৎ। কাঁকসার দেরাইডাঙায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁকসা শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৭ ০১:২৫
Share: Save:

বাড়িতে রয়েছে মোবাইল। কিন্তু প্রায় সকালেই ছুটতে হয় ভিন্-গ্রামে। না, অন্য কোনও কারণে নয়, মোবাইল চার্জ দিতে! — প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদনের পরেও বিদ্যুৎ সংযোগ না মেলায় এটাই এই গ্রামের বাসিন্দাদের প্রতি দিনের কাজের অঙ্গ। গ্রামের নাম, কাঁকসার ত্রিলোকচন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের দেরাইডাঙা।

কাঁকসার বাঁদড়া থেকে ত্রিলোকচন্দ্রপুর যাওয়ার রাস্তার ধারে জঙ্গলে ঘেরা গ্রাম দোরাইডাঙা। আদিবাসীদের এই গ্রামে ১৫টি পরিবারের বাস। বাসিন্দারা প্রায় প্রত্যেকেই চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত। বাসিন্দারা জানান, বছর পনেরো আগে এই গ্রামে বসতি গড়ে ওঠে। তার পরে ‘‘গ্রামে বিদ্যুতের জন্য বহু বছর ধরে ব্লক অফিস ও পঞ্চায়েতে আবেদন করা হলেও আলো জ্বলেনি,’’ বলছিলেন গ্রামের বাসিন্দা ধেনা সোরেন, গুড্ডু মেটেরা। অথচ, লাগোয়া গ্রামগুলির প্রতিটিতেই বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। সন্ধ্যা নামলেই অদূরের গ্রামগুলোর দিকে তাকিয়ে দেরাইডাঙার বাসিন্দারা আক্ষেপ করেন, ‘‘এ যেন আলোর মধ্যেই আঁধারের বাস।’’

এই পরিস্থিতিতে গ্রামের বধূ অনিতা সোরেন, সাবেদি সোরেনরা জানান, প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতেই মোবাইল রয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্কেও কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয় যথেষ্ট বুঝেসুঝে। কারণ, মোবাইলে চার্জ শেষ হলেই ছুটতে হয় তিন কিলোমিটার দূরে ত্রিলোকচন্দ্রপুর বা রাজকুসুম গ্রামে। গ্রামের কয়েক জন যুবক-যুবতী বলেন, ‘‘আত্মীয়দের বাড়িতে গেলে টিভি দেখি। ভাল লাগে। কিন্তু বাড়ি ফিরলেই তো সব অন্ধকার।’’

যদিও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পাঁচেক আগে বিদ্যুৎ দফতর এই গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি ও তার বসায়। সেই সময়ে বাসিন্দারা ভেবেছিলেন হয়তো আঁধার-দশা ঘুচবে। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সে আশা শেষ হয়ে যায়। এমনকী তারের বেশ কিছু অংশ চুরি হয়েছে বলেও অভিযোগ। বিদ্যুৎ দফতর অবশ্য জানায়, এক সময়ে ওই গ্রামে ট্রান্সফর্মার বসাতে যাওয়া হয়। কিন্তু তার চুরি হয়ে যাওয়ায় সেই কাজ শেষ করা যায়নি।

গ্রামের বেশ কিছু ছেলেমেয়ে স্কুলে পড়াশোনা করে। রাকেশ মেটে, বুধন সোরেনদের মতো কয়েক জন পড়ুয়া বলে, ‘‘রাতে পড়াশোনা করতে খুব অসুবিধা হয়। কেরোসিন না মিললে হ্যারিকেনের আলোও জ্বলে না।’’

বিষয়টি নিয়ে বিডিও (কাঁকসা) অরবিন্দ বিশ্বাস অবশ্য বলেন, ‘‘গ্রামবাসীদের আবেদনপত্র বিদ্যুৎ দফতরের পানাগড় কলসেন্টারে পাঠিয়েছি।’’ ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসকের উপস্থিতিতে হওয়া বৈঠকে দেরাইডাঙায় বিদ্যুৎ না যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। সেখানে বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারাও ছিলেন। তাঁরা ওই বৈঠকে গ্রামে দ্রুত বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দেন বলে ব্লক প্রশাসনের দাবি।

যদিও না আঁচালে এ সব আশ্বাসে আর বিশ্বাস নেই বলে জানান বাসিন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Light Electricity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE