Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

‘যা হওয়ার হবে’, জবাব মাস্ক না পরে

করোনা পরিস্থিতির মধ্যে যেন নিয়ম ভাঙার উৎসব দুর্গাপুরে। দূরত্ব বিধি, মাস্ক না পরার ছবি যত্রতত্র। আসল চিত্রটা কী, এর প্রভাব কেমন, প্রশাসনের কী ব্যবস্থা, কী বলছেন বিশেষজ্ঞেরা।ক্রেতাদের অনেকেও মাস্ক পরেন না বলে অভিযোগ।

মাস্ক না পরেই জিনিস কেনাবেচা।রবিবার দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের ডেইলি মার্কেটে। নিজস্ব চিত্র।

মাস্ক না পরেই জিনিস কেনাবেচা।রবিবার দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের ডেইলি মার্কেটে। নিজস্ব চিত্র।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:৪৪
Share: Save:

দূরত্ব বিধি কবেই উধাও হয়েছে। এ বার কি মাস্ক পরাও বন্ধ? দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার এলাকায় কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করলে এমন মনে হওয়াটা স্বাভাবিক, দাবি এলাকার বয়স্ক নাগরিকদের একাংশের। তবে এলাকাবাসীর অভিজ্ঞতা, অনেক প্রবীণকেও মাস্ক পরতে দেখা যাচ্ছে না।

সিটি সেন্টারের নন-কোম্পানি, সেল কো-অপারেটিভ প্রভৃতি এলাকার বাসিন্দারা দৈনন্দিন বাজার করেন মূলত সিটি সেন্টারের ডেইলি মার্কেটে। এ সব এলাকার বেশির ভাগ বাড়িতে ছেলে-মেয়েরা কর্মসূত্রে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে আছেন। বাড়িতে থাকেন বয়স্ক দম্পতি। তাঁরা বাজার করতে যান সেখানে।

কিন্তু ওই বাজারে গিয়ে গেল, প্রায় কোনও ব্যবসায়ীই মাস্ক পরেননি। এর মধ্যে মাছ, আনাজ বিক্রেতা থেকে মুদিখানা দোকানের মালিক— সবাই রয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যবসায়ীদের দাবি, ‘‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাস্ক পরে দম বন্ধ লাগে। কিছু দিন আগে পর্যন্ত মাস্ক পরতাম। কিন্তু এখন আর পরি না। বাইরে বেরোলে তখন পরি!’’

তবে ক্রেতাদের অনেকেও মাস্ক পরেন না বলে অভিযোগ। রবিবার সকালে আনাজ বাজারে আসা সুনন্দ রায়কে দেখা গেল মাস্ক ছাড়াই। তাঁর কথায়, ‘‘করোনার প্রকোপ ক্রমশ কমছে। মাস্ক পরে শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। তাই মাস্ক সঙ্গে রাখলেও সব সময় পরছি না!’’ পলাশডিহা থেকে বাজারে এসেছিলেন মধ্যবয়স্ক নির্মল লোহার। তিনিও মাস্ক পরেননি। তিনি বলেন, ‘‘করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন-দিন কমছে। অত ভয় পেলে চলবে না। যা হওয়ার হবে!’’ কিন্তু এর জন্য তো অন্য কেউ আক্রান্ত হতে পারেন? নির্মলবাবুর দাবি, ‘‘তা ঠিক। তবে সারা দিন আমাকে বাইরে কাজ করতে হয়। মাস্ক পরে গলায় ক্ষত হয়ে গিয়েছে।’’

এই পরিস্থিতিতে সব থেকে আশঙ্কায় বয়স্করা। ডিএসপি-র প্রাক্তন আধিকারিক অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়কে মাস্ক পরে দেখা গেল মাছের বাজারে পছন্দের মাছ কিনতে। তাঁর কথায়, ‘‘বাইরে বেরোলে, বাইরে থেকে বাড়িতে কেউ এলে মাস্ক পরি। আমি প্রবীণ মানুষ। তাই সাবধানতা।’’ যদিও, অমিতাভবাবু যাঁর কাছে মাছ কিনছিলেন সেই বিক্রেতা মাস্ক পরেননি। কেন? তাঁর ‘যুক্তি’, ‘‘এক ধারে বসি। আমার সঙ্গে ক্রেতাদের অন্তত কয়েক হাত দূরত্ব রয়েছে।’’

তবে রবিবার সিটি সেন্টারের বিভিন্ন শপিং মলে ঘুরে দেখা গিয়েছে, অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সীদের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা কিছুটা হলেও এখনও রয়েছে। অনেকেই মাস্ক পরে ঘোরাঘুরি করছেন। কলেজ পড়ুয়া অনুভব রায়, স্নেহা বসু’রা বলেন, ‘‘রাস্তায় মোটরবাইক বা স্কুটি চালানোর সময় মাস্ক পরি না। তবে নামার পরেই মাস্ক পরে নিই।’’

জেলা স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য জানিয়েছে, ব্রিটেন থেকে করোনার নতুন স্ট্রেন আসার পরে নতুন করে সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে। অন্যথায় ফের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) অর্ঘ্যপ্রসূন কাজি বলেন, ‘‘অতিমারি শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে সবাইকে। এ ছাড়া উপায় নেই। লকডাউনের শুরু থেকে লাগাতার সচেতনতা গড়ার পাশাপাশি কড়াকড়ি বজায় রাখা হয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলেছে। প্রশাসনের তরফে যতটা সম্ভব চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

কিন্তু এই পরিস্থিতি নিয়ে কী কী আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা, জেলার করোনা-চিত্রই বা কী, প্রতিক্রিয়া কেমন ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির, এ সব নিয়েই এখন চর্চা জেলার নানা প্রান্তে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Mask
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE