শনিবার দুর্গাপুর স্টেশন চত্বর। ছবি: বিকাশ মশান
দৃশ্য এক: মূল প্রবেশ পথ দিয়ে কোনও রকম বাধা ছাড়া কয়েক জন যুবকের একটি দল ঢুকে পড়লেন।
দৃশ্য দুই: হন্তদন্ত হয়ে ছুটছিলেন কয়েক জন। প্রত্যেকেরই হাতে বড় ব্যাগ। ট্রেন দেখেই দ্রুত উঠে পড়লেন তাঁরা।
দু’টি ক্ষেত্রেই কোথাও রক্ষী বা নজরদারি নজরে পড়ল না। ব্যাগ পরীক্ষা তো দূরঅস্ত। নিরাপত্তা নিয়ে এমনই ঢিলেঢালা ছবিটা দুর্গাপুর স্টেশনের, অভিযোগ যাত্রীদের একাংশের। সেই স্টেশন, যেখান থেকে সম্প্রতি দু’টি ব্যাগে ৭১ লক্ষ টাকা-সহ ধরা পড়েছেন বারাণসীর এক ব্যক্তি। এই স্টেশনেই দুন এক্সপ্রেস থেকে চলতি বছরের গোড়ায় ৬৮৯টি কচ্ছপ উদ্ধার হয়। ধরা পড়ে চার জন। তা ছাড়া, রেল পুলিশের হিসেবেই ২০১৭-তে আসানসোল ডিভিশনের ৭০টি স্টেশনের মধ্যে সব থেকে বেশি সংখ্যায় (২৫ জন) নিখোঁজ শিশু, নাবালক, নাবালিকা উদ্ধার হয়েছে এই স্টেশন থেকেই।
বারবার যে স্টেশনে এমন একের পর এক ঘটনা, সেখানে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন যাত্রীদের একাংশই। শনিবার স্টেশনে গিয়ে দেখা গিয়েছে, প্রবেশপথে ‘ডোর ফ্রেম ডিটেক্টর সিস্টেম’, রেল পুলিশের কড়া পাহারা, কোনওটাই নেই। যদিও স্টেশন ম্যানেজার এনকে দাস জানিয়েছেন, ‘‘সবসময় ‘ডোর ফ্রেম ডিটেক্টর সিস্টেম’ প্রবেশপথে থাকবে, এমনটা নয়। প্রয়োজন অনুযায়ী তা স্টেশনের অন্যত্র সরানো হয়।’’ রেল পুলিশের দাবি, কড়া নজরদারি আছে বলেই এই স্টেশনে নানা বেআইনি কাজ নজরে আসে। পদক্ষেপও করা হয়। স্টেশন সিসিটিভি ক্যামেরায় মোড়া। কিন্তু সেগুলি কতখানি কাজে লাগানো হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীদের একাংশ। দুর্গাপুর ডেলি প্যাসেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই স্টেশনে একাধিক বার নানা বেআইনি কাজকর্মের ঘটনা সামনে এসেছে। যাত্রী নিরাপত্তায় আরও জোর দেওয়া উচিত রেলের।’’
দেশের যে স্টেশনগুলিতে অত্যাধুনিক ‘ইন্টিগ্রেটেড সিকিওরিটি সিস্টেম’ (আইএসএস) ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে দুর্গাপুর স্টেশনও। ইতিমধ্যেই নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালুর প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে বলে জানান আসানসোল ডিভিশনের আরপিএফ-এর সিনিয়র সিকিওরিটি কমান্ড্যান্ট চন্দ্রমোহন মিশ্র। তিনি জানান, স্টেশনে একশো হাই ডেফিনেশন সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ‘হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টর’ (এইচএইচএমডি) বেশ কিছু এসে গিয়েছে। ব্যবহারও শুরু হয়েছে। বাকি আরও কিছু আসছে। ‘বম্ব ডিটেকশন অ্যান্ড ডিসপোজ়াল স্কোয়াড’ আংশিক ভাবে কাজ শুরু করে করেছে। অর্ধেকের বেশি উপকরণও চলে এসেছে। আগামী ছ’মাসের মধ্যে বাকিটা চলে আসবে। ‘স্নিফার ডগ’-ও কাজ শুরু করেছে।
চন্দ্রমোহনবাবুর দাবি, ইতিমধ্যেই বরাত দেওয়া ‘লাগেজ স্ক্যানার মেশিন’ তিন-চার মাসের মধ্যে চলে আসবে। চলন্ত ট্রেনের নীচের অংশ পরীক্ষা করে দেখার জন্য ‘আন্ডার ভেহিকল স্ক্যানার সিস্টেম’-এর (ইউভিএসএস) বরাতও দেওয়া হয়েছে। মাটিতে লাগানো যন্ত্রের উপর দিয়ে ট্রেন চলে গেলেই স্ক্যানারের মতো সব ধরা পড়বে। চার-পাঁচ মাসের মধ্যে এই ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে বলে কর্তৃপক্ষের আশা।
কিন্তু এত কিছুর পরেও ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে লোহার রেলিং গলে সহজেই যাতায়াত করা যায় বলে জানান এলাকাবাসী। যে কেউ সেই ‘পথ’ দিয়ে স্টেশনে ঢুকলে দেখার কেউ নেই, জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীর একাংশ।
যদিও রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্ল্যাটফর্মে ঢোকা-বেরনোর যে পথগুলির দরকার নেই, সেগুলি সনাক্তকরণের কাজ শেষ হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে কোথাও পাঁচিল দিয়ে ঘিরতে হবে, কোথাও নতুন গেট বসাতে হবে আবার কোথাও রেল পুলিশের পাহারা বসাতে হবে। দ্রুত সেই কাজও শুরু হয়ে যাবে বলে জানান চন্দ্রমোহনবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘পুরোপুরি আইএসএস চালু করার বাকি কাজ আগামী ছয় মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy