Advertisement
E-Paper

চাঁদার নির্দেশিকা প্রত্যাহার, স্বস্তিতে শিক্ষকেরা

প্রশাসন সূত্রে খবর, রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলগুলিতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা খাতে ৪০ শতাংশ বাড়তি বরাদ্দ করল রাজ্য। শিক্ষকদের থেকে আলাদা করে এই খাতে আর চাঁদা তোলা যাবে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৪৮

স্কুল-ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য তাঁদের প্রতি বছর চাঁদা দিতে হয়। সেটা ছিল ‘অলিখিত’। এ বার সরাসরি নির্দেশিকা জারি করে চাঁদা চাওয়ায় বিতর্ক শুরু হয়েছিল। ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন পশ্চিম বর্ধমান জেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকেরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে অবশ্য সেই নির্দেশিকা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

প্রশাসন সূত্রে খবর, রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলগুলিতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা খাতে ৪০ শতাংশ বাড়তি বরাদ্দ করল রাজ্য। শিক্ষকদের থেকে আলাদা করে এই খাতে আর চাঁদা তোলা যাবে না। এ দিন বিধানসভায় নিজের ঘরে এ কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্তরে সার্কেল পিছু ১০-১২ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এতে তো ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হত না। সকলেই যাতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে পারে, খেলাধূলার মান বাড়ে তাই অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হল। শিক্ষকদের কাছ থেকে এই খাতে চাঁদা তোলা যাবে না।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুল-ক্রীড়া আয়োজনে স্কুল পিছু পাঁচশো টাকা চাঁদা চেয়ে নির্দেশিকা সোমবার জারি করেছেন জেলার নবনিযুক্ত প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান আশিসকুমার দে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, স্কুল ক্রীড়া আয়োজনের জন্য প্রতি বছর তাঁদের নিজেদের পকেট থেকে চাঁদা দিতে হয়। অলিখিতভাবে ঠিক করে দেওয়া হয়, কত টাকা করে দিতে হবে। প্রতিবাদ করেও লাভ হয় না। এ বার নোটিস দিয়েই চাঁদা চাওয়া হচ্ছে। তবে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেওয়ার খুশি শিক্ষকেরা। আশিসবাবু বলেন, ‘‘স্কুল ক্রীড়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পুরসভা, পঞ্চায়েতের মত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য চেয়েছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্কুলের কাছেও সাহায্য চাওয়া হয়েছে। তবে নির্দেশিকার কোথাও ‘বাধ্যতামূলক’ বলা হয়নি।’’ মঙ্গলবার রাতে অবশ্য তিনি বলেন, ‘‘আমি চাই পড়াশোনা ও খেলাধুলো ভালভাবে চলুক। ছাত্রদের কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। বিতর্ক শুরু হওয়ায় তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।’’

বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, চক্র, মহকুমা ও জেলাস্তরে প্রতি বছর ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে। সে জন্য পৃথক কোনও তহবিল স্কুলের হাতে থাকে না। তাঁরা নিজেরা সাধ্যমত চাঁদা দিয়ে থাকেন। অনেক সময় আবার জোর করে চাঁদা নেওয়ারও অভিযোগ ওঠে। শিক্ষক সংগঠন ‘বঙ্গীয় নবউন্মেষ প্রাথমিক শিক্ষক সঙ্ঘে’র পক্ষ থেকে ১৬ নভেম্বর জেলা প্রশাসনের কাছে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য বিশেষ তহবিলের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল। ওই সংগঠনের অভিযোগ, শিক্ষকদের অনেকের কাছ থেকে জোর করে চাঁদা নেওয়া হয়। এটা বন্ধ করা দরকার। নির্দিষ্ট তহবিল থাকলে এ ভাবে চাঁদা নিয়ে হয়রানি বন্ধ হবে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান ডিভিশনের কমিশনারের দফতরে সেই দাবির কথা জানানো হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে স্কুল পিছু পাঁচশো টাকা করে চাঁদা দেওয়ার নির্দেশিকা জারির নিন্দা করেছেন ওই শিক্ষক সংগঠনের জেলা সম্পাদক চিরঞ্জিৎ ধীবর। তিনি বলেন, ‘‘স্কুল ক্রীড়া আয়োজনে শিক্ষকেরা নিজেদের পকেট থেকে কেন চাঁদা দেবেন সে প্রশ্ন ছিলই। এখন আবার স্কুল পিছু চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। জেলায় ১০১৫টি স্কুল। মোট ৫ লক্ষ টাকার ব্যাপার। এ ভাবে লিখিত নির্দেশিকা জারি করে চাঁদা চাওয়ার ঘটনা আগে ঘটেনি।’’

অবশেষে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেওয়ায় খুশি সকলেই। উস্তি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি (পূর্ব-পশ্চিম বর্ধমান) বুদ্ধদেব মণ্ডল বলেন, ‘‘খেলাধুলোর বিষয়টি সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখা হোক। প্রতি বছর চাঁদা দিয়ে খেলার আয়োজন করে থাকি। এ বার তাই চাঁদা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। নির্দেশিকা জারি হওয়ার পরেও তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার খুশি।’’

Primary Teacher Sports Donation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy