Advertisement
E-Paper

অবহেলায় পড়ে প্রাচীন সিংহদরজা

কাটোয়ার ‘সিংহদরজা’, এই স্থাপত্যটির হাল বর্তমানে এ রকমই। শুধু তাই নয়, সিংহদরজায় প্রবেশের মুখে একটি গ্যারাজ থাকায় এর সামনেই পড়ে থাকে মোটরবাইক-সহ নানা গাড়ির যন্ত্রাংশ।

সুচন্দ্রা দে

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৩৪
দখল সিংহদরজা। নিজস্ব চিত্র

দখল সিংহদরজা। নিজস্ব চিত্র

দেওয়ালে পানের পিকের দাগ। কোথাও বা দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড় করানো সাইকেলের সারি। কাটোয়ার ‘সিংহদরজা’, এই স্থাপত্যটির হাল বর্তমানে এ রকমই। শুধু তাই নয়, সিংহদরজায় প্রবেশের মুখে একটি গ্যারাজ থাকায় এর সামনেই পড়ে থাকে মোটরবাইক-সহ নানা গাড়ির যন্ত্রাংশ।

সিংহদরজার গম্বুজের উচ্চতা ১২ ফুটের মতো। সিংহদরজায় ঢোকার মূল প্রবেশদ্বারটি উচ্চতায় বেশ কম। সিংহদরজার আরেক নাম সদর দরজা, যা এলাকায় ঢোকার প্রবেশপথ হিসেবে এক সময়ে গণ্য হতো। এই সিংহদরজার ভিতরে ঢুকলে প্রথমেই নজরে পড়ে সৈয়দ শাহ আলমের মাজার, তারপর ‘হুজরা কক্ষ’ (শাহ আলমের সাধনস্থল), ‘খাদিম’দের কবর।

ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে শাহ আলম, তাঁর কাটোয়ায় আসা ও এই সিংহদরজা তৈরির নানা তথ্য জানা যায়। বাহাদুর শাহের (প্রথম) মৃত্যুর পরে তাঁর পুত্র আজিম-উস-শানের সঙ্গে দ্বৈরথে জড়ান অপর পুত্র জাহান্দার শাহ। পরে জাহান্দার সিংহাসন দখল করেন। এই কাজে সাহায্য করেন উজির জুলফিকার খান। বাবার মৃত্যুর পরে ফারুখশিয়র ‘সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়’-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ১৭১৩-এ আগ্রার যুদ্ধে পরাজিত করেন জাহান্দারকে। ওপি সাহার ‘প্রিন্সেস, বেগম অ্যান্ড কনকিউবিনস’ বই থেকে জানা যায়, যুদ্ধে হেরে প্রিয়তমা লাল কানওয়ারের সঙ্গে ছদ্মবেশে দিল্লি আসেন জাহান্দার। যদিও শেষমেশ তাঁকে পাকড়াও করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পাকড়াও করা হয় উজিরকেও। নিবারণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘কাটোয়ার ইতিহাস’ বইয়ে জানান, এই ঘটনার পরেই উজিরের ভাই শাহ আলম কাটোয়ায় আসেন। শাহ আলমকে ‘বারো হাটের’ রাজস্ব দেন বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ। সুরক্ষার জন্য দক্ষিণ, উত্তর ও পশ্চিমে ‘গড়খাত’ কেটে বাগানেপাড়ায় ‘শাহি মসজিদ’ বানান তিনি। তৈরি হয় নিচুবাজারের সিংহদরজাও। এই সিংহদরজার কাছে থাকা শাহি মসজিদের উর্দু শিলালিপি প্রায় এক শতক আগে অনুবাদ করা হয় বলে দাবি আঞ্চলিক ইতিহাসবিদ স্বপন ঠাকুরের।

রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা একটি পরিবার প্রায়শই এই সিংহদরজার একাংশে রঙের প্রলেপ দেয়। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সিংহদরজার এক দিকের চুন-সুরকির দেওয়ালে ঘুণ ধরছে। প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, এই স্থাপত্যকে যাতে ‘হেরিটেজ’ তকমা দেওয়া হয়, তার জন্য পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসকের কাছে স্থাপত্য পরিদর্শন করে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন মহকুমাশাসক (কাটোয়া) সৌমেন পাল। তিনি বলেন, ‘‘জেলাশাসকের অনুমতি পেলে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিশদে আলোচনা করা হবে।’’

সিংহদরজার সামনে প্রায় পনেরো বছর ধরে গ্যারাজ রয়েছে মুকান্দর শেখের। তাঁর আর্জি, ‘‘প্রশাসন আমায় তুলে দিলে যেন পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়।’’ যদিও এখনই ওই গ্যারাজ উচ্ছেদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি বলে দাবি মহকুমাশাসকের।

Door Old Door Neglected সিংহদরজা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy