Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Asansol Municipal Corporation

উন্নয়নের প্রচারই সার, নালিশ বিরোধীর

১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাউড়িপাড়ায় প্রায় ৫০টি পরিবারের বাস। বাসিন্দারা জানান, পাড়ার মধ্যে একটি রাস্তাও পাকা হয়নি। চতুর্দিকে কাঁচা নর্দমা। সেগুলিও সাফ হয় না নিয়মিত।

 এমনই হাল ভুঁইয়াপাড়ার। নিজস্ব চিত্র।

এমনই হাল ভুঁইয়াপাড়ার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৩৪
Share: Save:

শাসক দলের ‘উন্নয়নের প্রচার’ এই এলাকায় ভোঁতা করে দিতে অনুন্নয়নের অভিযোগ অন্যতম হাতিয়ার বিরোধীর। এলাকা দু’টি: আসানসোল পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ধাদকা বাউড়িপাড়া এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভুঁইয়াপাড়া, শিবানীপাড়া। এলাকাবাসীর একাংশ ও বিরোধীদের অভিযোগ, রাজ্য জুড়ে উন্নয়নের প্রচার যে আদতে ‘ঢক্কানিনাদ’, তা এই এলাকায় এলেই বোঝা যাবে। যদিও অভিযোগ মানেনি তৃণমূল ও আসানসোল পুরসভা।

১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাউড়িপাড়ায় প্রায় ৫০টি পরিবারের বাস। বাসিন্দারা জানান, পাড়ার মধ্যে একটি রাস্তাও পাকা হয়নি। চতুর্দিকে কাঁচা নর্দমা। সেগুলিও সাফ হয় না নিয়মিত। তাঁদের অভিযোগ, ‘নির্মল বাংলা’ প্রকল্পে বৈজ্ঞানিক শৌচাগার তৈরির জন্য আর্জি জানানো হয়েছিল। কিন্তু শৌচকর্মের জন্য এখনও ঘটি হাতে যেতে হয় মাঠেঘাটে। স্থানীয় বাসিন্দা রেখা বাউড়ি, দ্বিজপদ বাউড়িদের ক্ষোভ, ‘‘বেশ কিছু দিন আগে বাড়িতে শৌচাগারের জন্য আর্জি জানানো হয়েছিল। সেগুলি আজও তৈরি করে দেয়নি পুরসভা।’’

এ দিকে, ২ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে একশো মিটার দূরে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভুঁইয়াপাড়া। কিছুটা বাঁ দিকে গেলে, শিবানীপাড়া। এলাকায় ঢোকার মুখে রাস্তা নেই। পথবাতি দূরঅস্ত্। অথচ, প্রায় ২৫টি পরিবারের বাস এখানে। প্রায় সব ক’টি বাড়িতেই টালির ছাদ, মাটির দেওয়াল। দু’-এক জন চট ও কাপড় দিয়ে ঘিরে অস্থায়ী শৌচাগার তৈরি করেছেন। বাকিরা খোলা মাঠেই শৌচকর্ম সারতে বাধ্য হন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পাড়ায় একটিমাত্র কল। সেখান থেকেও নিয়মিত জল পড়ে না। বছরখানেক আগে আসানসোলের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দুই শিক্ষক চন্দ্রশেখর কুণ্ডু ও অভিজিৎ দেবনাথ বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে ব্যবহারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা সনকা ভুঁইয়া, প্রকাশ ভুঁইয়ারা বলেন, ‘‘আমরা চাই, আমাদের এলাকায় পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করা হোক। সে দাবিও বহু দিন ধরে করছি। কিন্তু কোনও ফল মিলছে না। অথচ, ভোট এলেই নানা অশ্বাস মেলে।’’ তবে বিপিএল তালিকাভুক্তদের জন্য সরকারি ‘আবাসা যোজনা’র প্রকল্পে এখানের বাসিন্দারা আবেদন করেননি বলে জানান।

এই পরিস্থিতিতে সরব বিজেপি ও সিপিএম। বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি সুব্রত মিশ্রের অভিযোগ, ‘‘সরকার আদতে যে কোনও উন্নয়ন করেনি, এমন বহু এলাকা তার প্রমাণ।’’ সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, ‘‘নানা প্রকল্পের টাকা নয়ছয়, দুর্নীতিতে ব্যস্ত তৃণমূল নেতারা। প্রকৃত উন্নয়ন করার সুযোগ ও ইচ্ছে, কোনওটাই নেই ওঁদের।’’

যদিও অভিযোগ মানেননি পুরসভা। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় দু’শোটি শৌচাগার তৈরির আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। এর মধ্যে ১৬৭টি শৌচাগার তৈরি হয়ে গিয়েছে। বাকি শৌচাগারগুলিও দ্রুত তৈরি করে দেওয়া হবে। তবে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর নরেন্দ্র মুর্মু। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর শ্যাম সোরেন বলেন, ‘‘বাসিন্দাদের অভিযোগ আংশিক সত্য। বিরোধীরা অপপ্রচার করছেন। তবে পুর-এলাকার অন্তর্গত অপেক্ষাকৃত গ্রামীণ এলাকাগুলির দিকে অবশ্যই আরও একটু নজর দেওয়া দরকার ছিল। দু’-এক দিনের মধ্যে এলাকায় পাইপলাইন বসানো হবে।’’

আসানসোলের পুর-প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়ও অনুন্নয়নের অভিযোগ মানেননি। তাঁর কথায়, ‘‘গত পাঁচ বছরে পুর-এলাকায় কয়েকশো কোটি টাকার কাজ হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডকে আরও দশ লক্ষ টাকা করে অনুমোদন করা হয়েছে। দ্রুত কাজগুলি শেষ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC CPM Asansol Municipal Corporation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE