E-Paper

প্রাক্তনী-রাজ নানা স্তরে, শিক্ষাকর্মীরা ভোটেও

একই ছবি বর্ধমান শহরের বিবেকানন্দ কলেজেও। এখানকার প্রাক্তন ছাত্রনেতা এখন কলেজের স্থায়ী শিক্ষাকর্মী।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৫ ০৮:৩৯
রায়নার শ্যামসুন্দর কলেজ।

রায়নার শ্যামসুন্দর কলেজ। —ছবি : সংগৃহীত

এক জন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। আর এক জন স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। তিনি আবার ওই কলেজের ছাত্রনেতাও ছিলেন। দু’জনেই রায়নার শ্যামসুন্দর কলেজের কর্মী। ফলে, রায়নার ওই কলেজে প্রাক্তনী-রাজ চলছেই। কলেজের পড়ুয়া থেকে শিক্ষকদের অভিযোগ, বহিরাগতদের দাপটে তাঁরা তটস্থ।

একই ছবি বর্ধমান শহরের বিবেকানন্দ কলেজেও। এখানকার প্রাক্তন ছাত্রনেতা এখন কলেজের স্থায়ী শিক্ষাকর্মী। আরও কয়েক জন ছাত্র সংগঠনের কর্মীও কলেজে অস্থায়ী ভাবে কাজ করেন। বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী ও কলেজের শিক্ষকদের দাবি, শহরের এক পুর-প্রতিনিধির ‘খাসতালুক’ বিবেকানন্দ কলেজ। তিনিই প্রাক্তনী তথা শিক্ষাকর্মীদের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করেন। বর্ধমানের মহিলা কলেজেও টিএমসিপি-র দাপটে কলেজের অনুষ্ঠান বাতিল করতে হয়।

এই চিত্র জেলা জুড়েই। বিরোধীদের দাবি, নির্বাচিত ছাত্র সংসদ নেই। কিন্তু ছাত্র সংসদের নাম করে টিএমসিপি ও তৃণমূলের লোকেরাই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বার্ষিক ক্রীড়া পরিচালনা করছে। যত টাকা বাজেট, পুরোটাই খরচ হয়ে যাচ্ছে। বাড়তি বিল করে টাকা তোলার অভিযোগও রয়েছে। জেলার একটি কলেজের পরিচালন সমিতির বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধির দাবি, “বুঝতেই পারছি, কলেজের লক্ষ টাকা ফাঁক গলে বেরিয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন করলেও জবাব নেই। রাজনৈতিক ভাবে একটা চক্র কাজ করছে।”

রায়নার শ্যামসুন্দর কলেজ নিয়ে নানা সময়ে অভিযোগ উঠেছে। কখনও শিক্ষককে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে টিএমসিপির বিরুদ্ধে। ছাত্র সংসদের ভিতর অনৈতিক কাজেরও ভিডিয়ো ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যমে। টোটো চালক, বাসের কন্ডাক্টর, লরির খালাসিদের আড্ডার জায়গা হয়ে উঠেছে কলেজ চত্বর। বছর খানেক আগে ‘সচেতন নাগরিক মঞ্চ’ শ্যামসুন্দর কলেজের অব্যবস্থা নিয়ে স্মারকলিপি দেয়। ওই কলেজের পরিচালন সমিতির এক সদস্য বলেন, “বহিরাগতদের ঢোকা নিয়ে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিছুই চালু হয়নি। আসলে টিএমসিপির প্রাক্তন নেতা, শিক্ষাকর্মীর ছত্রছায়ায় কলেজ চলে।”

বিবেকানন্দ কলেজের পরিচালন সমিতির মাথায় রয়েছেন বর্ধমানের পুরপ্রধান পরেশ সরকার। সদস্য পদে আছেন প্রাক্তন ছাত্র নেতা, জেলার যুব সভাপতি ও পুর-প্রতিনিধি রাসবিহারী হালদার। রয়েছে আর এক পুর-প্রতিনিধি শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। আর শিক্ষাকর্মী হিসেবে রয়েছেন কলেজের প্রাক্তনীরা। বিরোধীদের অভিযোগ, এই কলেজের শিক্ষাকর্মীরাই ‘দাদা’র অনুগামী হয়ে ভোট-প্রক্রিয়ায় যোগ দেয়। কলেজের নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ, আসবাব পত্র থেকে ক্যান্টিনের বরাতও তাঁদের কপালে থাকে। এসএফআইয়ের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক দীপঙ্কর দে বলেন, “সবই দাদার অঙ্গুলিহেলনে।’’

গলসি কলেজেও নবীনবরণ থেকে ভর্তি বহিরাগতদের দখলে বলে অভিযোগ। এসএফআইয়ের নেতা অনিরুদ্ধ কোলে বলেন, ‘‘যাঁরা ১০ বছর আগে কলেজ পাশ করে গিয়েছে, তাঁরাও নিয়মিত এসে দাদাগিরি করে।” ভাতার কলেজের ছাত্রছাত্রীদের দাবি, অলিনগর থেকে কিংবা কিসান মান্ডি থেকে আনাজ ব্যবসায়ীরাও টিএমসিপির মদতে মোটরবাইক নিয়ে কলেজে ঢুকে আড্ডা দেয়। কলেজের ভিতর নিরাপত্তা কতটা, প্রশ্নতুলছেন তাঁরা।

টিএমসিপির জেলা সভাপতি স্বরাজ ঘোষ বলেন, “আমাদের জেলায় কোনও কলেজে বহিরাগতদের দাপট আছে বলে আমার কাছে রিপোর্ট নেই। আমরা নতুন ইউনিট করার সময় প্রত্যেক সদস্যের কাছে কলেজের তথ্য সংগ্রহ করে রাখছি। যাতে কোনও ভাবেই কোনও প্রাক্তনী সদস্য না হয়। অধ্যক্ষদের কাছেও কিছুপ্রস্তাব রেখেছি।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Raina

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy