- সাতগাঁর হাওয়াতাঁতিরা পরিমল ভট্টাচার্য অবভাস
লেখকের প্রাথমিক পরিচয় ছিল ‘নন ফিকশন’ লিখিয়ে হিসেবে। কিন্তু প্রথম উপন্যাসেই সাড়ে ছক্কা হাঁকড়ালেন। প্রায় সাড়ে ছ’শো পৃষ্ঠার এই উপন্যাসে বঙ্গজীবনের এক বৃহৎ সময়কে ধরেছেন লেখক। সপ্তগ্রামের পটভূমিকা থেকে উড়ান নেয় এই লিখন আজকের অনাবাসী দুনিয়া ছুঁয়ে নাগরিকত্ব আর ‘দেশ’ নামের দুই প্রহেলিকার মাঝ বরাবর। এই আখ্যান সরলরেখায় হাঁটেনি, এমনকি এর চরিত্রেরা সকলে মানুষও নয়। হাওয়ার অক্ষরে বোনা কালযাত্রার ধ্বনি পারিবারিক পরিসরকে নিয়ে যায় বৈশ্বিক ও তারও উপরে স্বপ্নবাস্তবের জমিতে।
- ইতিহাস যখন বাঙ্ময় প্রবীর মুখোপাধ্যায় তৃতীয় পরিসর
চুরিবিদ্যারও ইতিহাস আছে। উনিশ শতকের ইংরেজি শেখা বাঙালির কাছে ‘মহাবিদ্যা’টির স্বরূপ কী ছিল, তা নিয়ে ভেবেছেন লেখক। পেশায় গ্রন্থাগারিক, নেশায় ইতিহাসচর্চাকারী লেখক এর আগে বেশ কিছু বই সম্পাদনা করলেও পুরদস্তুর প্রবন্ধের বই এই প্রথম। দশটি প্রবন্ধে ধরা পড়েছে রামপ্রসাদ সেনের কালীসাধনার সমাজ-প্রেক্ষিত থেকে রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যাপাধ্যায়ের ইতিহাসভাবনা। কবি জয়দেব গোস্বামীর জন্মস্থান বিতর্কের সূত্রে বাঙালির ওড়িয়া সত্তার সন্ধানও। উঁকি দিয়েছেন পঞ্জিকায় স্বাস্থ্যচর্চার ইতিবৃত্তের দিকেও।
- বুদ্ধিজীবী: স্তূতি-নেতি-রাজনীতি নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী দে’জ
এ বার মহাভারত নয়, বরং চেনা লেখক খানিক অচেনা অবতারেই ধরা দিয়েছেন এই বইতে। গণমাধ্যম শাসিত সাম্প্রতিকে ‘বুদ্ধিজীবী’-র সংজ্ঞাটি কী, তার অনুসন্ধান করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গেই। বিশেষত সমাজমাধ্যমে অযাচিত জ্ঞানদানের আড়ে-বহরে যখন কে কতখানি বড়, তার প্রতিযোগিতা চলে, পরশুরামের বিরিঞ্চিবাবার মতো ‘ইনটেলেকচুয়াল’রা মনু-পরাশর-যাজ্ঞবল্ক্যের সঙ্গে এক কলকেয় গাঁজা খেয়েছেন বলে প্রতিপন্ন করেন, তখন এই সন্ধানের কাছে যেতে হয়। কিছু না জেনে সবজান্তা হয়ে ওঠা বাঙালির ভূয়োদর্শনের ডাক-খোঁজ এ বইয়ের পাতায় পাতায়।
- প্রজাপতির অভিপ্রায় যুধাজিৎ দাশগুপ্ত আনন্দ
চেনা পতঙ্গটিকে নিয়ে বাঙালি কাব্য লিখলেও, বিয়ের কার্ডে ঘটা করে ছবি সাঁটলেও তার হাল-হদিস নিয়ে তেমন ভাবেনি। সেই অভাবকেই পূরণ করতে চেয়েছে এই বই। বইটি বাংলায় পতঙ্গবিজ্ঞান চর্চার এক রসস্নিগ্ধ উদাহরণ। পাতায় পাতায় যেন ছড়িয়ে রয়েছে প্রজাপতির ডানার মতোই ফুরফুরে গদ্যে আবিশ্ব প্রজাপতিপাঠ। পাতায় পাতায় দুর্লভ ছবি প্রজাপতিদের স্বভাব আর বৈচিত্রকে তুলে ধরেছে। এই বই হতেই পারে যে কোনও বয়সের মানুষের কাছে প্রজাপতিচর্চার হাতেখড়ির প্রণোদন।
- মহাপ্রলয়ের সম্ভাবনায় নিখিল সুর আনন্দ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রকৃত রণাঙ্গন না হলেও কেমন ছিল সেই মহাবিপর্যয়ের প্রতি ভারতীয়দের দৃষ্টিভঙ্গি? ব্রিটিশ শাসকশক্তির অধীনে যুদ্ধ করতে হয়েছিল অগণিত ভারতীয় সেনাকেও। অন্য দিকে, যুদ্ধের আতঙ্ক গ্রাস করেছিল কলকাতার মতো মহানগরকেও। ঠিক কী ঘটেছিল ঔপনিবেশিক শাসনের অন্তিম পর্বের বাংলায়? কী কারণে এক বিপুল সংখ্যক ভারতীয় এই যুদ্ধে অক্ষশক্তির অন্যতম শরিক জাপানকে সমর্থন করতে শুরু করেছিলেন? প্রকৃত যুদ্ধের সমান্তরালে শুরু হয়েছিল প্রচার-যুদ্ধও। কেমন ছিল সেই কৌশল? মহাপ্রলয়ের সম্ভাবনার সেই দিনগুলিতে এক পরাধীন জাতির ভাগ্যমন্থনে কি শুধুই গরল উঠে এসেছিল, না কি তাতে মিশে ছিল ভবিষ্যৎ উন্নয়নের সম্ভাবনাও? এই সব জটিল প্রশ্নের উত্তর সন্ধান করেছেন লেখক এই গ্রন্থে।
- ফর আ জাস্ট রিপাবলিক: দ্য পিপ্ল অফ ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য স্টেট পার্থ চট্টোপাধ্যায় পার্মানেন্ট ব্ল্যাক
গণতান্ত্রিক তথা আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার অন্যতম প্রতিশ্রুতি হল ‘জাস্টিস’ বা ন্যায়বিচার। তাঁর নতুন গ্রন্থে সমাজচিন্তক জাতিরাষ্ট্র ভারত এবং তাঁর নিজের লব্জে যা ‘পিপ্ল-নেশন’, তার মধ্যে এক স্পষ্ট বিভাজনকে দেখতে চেয়েছেন। ভারতীয় সংবিধানে নানা ভাষা নানা মত-এর ঊর্ধ্বে উঠে বিভিন্ন আঞ্চলিক সত্তাকে যে একীভূত হওয়ার কথা বলা হয়েছিল, সেখানে এই ‘জাস্টিস’-এর প্রসঙ্গটিকে কী ভাবে দেখা যেতে পারে— এমন প্রশ্ন লেখক তুলেছেন। পাশাপাশি প্রশ্ন তুলেছেন, দলিত এবং মুসলমান ভারতীয়ের ন্যায়প্রাপ্তি নিয়েও।
- মাদার মেরি কামস টু মি অরুন্ধতী রায়হ্যামিশ হ্যামিলটন
গ্রন্থনামে ‘দ্য বিটল্স’-এর গানের ছায়া, প্রচ্ছদে বিড়ি ঠোঁটে নিয়ে ছবি— এই সব নিয়ে বিবিধ চাপানউতরে সাহিত্যজগৎ বেজায় গুলজার। তবে তাঁর লেখা প্রথম স্মৃতিকথাতেই যাবতীয় তিরছি নজরের জবাব দিয়ে দিয়েছেন অরুন্ধতী। তাঁর মা মেরি রায়ের মৃত্যুর পর সেই সব স্মৃতিই ভিড় করে আসে, যা কখনও পরস্পর সংলগ্ন, কখনও বা পারম্পর্যহীন। সব মিলিয়ে এক কোলাজ যেন বোনা হতে থাকে মনের মধ্যে। কখনও কষায়, কখনও বা মধুর সেই স্মৃতিযাত্রায় প্রবেশ করে কৌতুকের অম্লরসও।
- গোস্ট-আই অমিতাভ ঘোষ ফোর্থ এস্টেট ইন্ডিয়া
পরিবেশ ভাবনায় ডুবে রয়েছেন লেখক বেশ কয়েক বছর। কিন্তু নতুন উপন্যাসে বেছে নিলেন খানিক ‘অপ্রাকৃত’ কাঠামো। এক বালিকার জন্মান্তরের কাহিনি, মনোবিদের কাছে তার কাউন্সেলিং এবং তার ভিন্নতর ব্যাখ্যা এ আখ্যানকে এমন কিছু মোচড় দিয়েছে, যা লেখকের পরিচিত বয়ান-কাঠামো থেকে খানিক সরে আসা বলেই মনে হতে পারে। অর্ধশতাব্দী পরে যখন সেই ‘অপ্রাকৃত’ আখ্যানকে অন্য আলোয় দেখতে চাইল আজকের কলকাতার এক যুবক, তখন তার মধ্যে এসে মিশল আরও বৃহৎ কিছু। ষাটের দশকের শেষ দিকের কলকাতা আর আজকের মহানগরের স্মৃতি-বিস্মৃতি এখানে যেন হাত ধরাধরি করে চলে। এই উপন্যাস কি অমিতাভ ঘোষের লেখকজীবনের এক বাঁকবদলের ইঙ্গিত করছে— প্রশ্ন থেকে যায় ।
- গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল: আ ওয়ার্ল্ড ওয়ার ২ এপিক অফ জ্যাজ়, স্পাইজ় অ্যান্ড রেভলিউশন ইন কলোনিয়াল ক্যালকাটা রুচির যোশি ফোর্থ এস্টেট ইন্ডিয়া
১৯৪১ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপট। কলকাতার রাস্তায় তখন মিলিটারি বুটের শব্দ অথবা আমেরিকান সেনার মুখ থেকে ভেসে আসা বিজাতীয় শিসের আওয়াজ। রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণের দিনে শহর উত্তাল। সেই জনস্রোতে এক ইতিহাসের ছাত্রী, এক ইংরেজ সেনা আধিকারিকের কন্যা, এক ধনাঢ্য বাড়ির চিত্রকর সন্তান এবং এক পকেটমারের দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা এই ঐতিহাসিক উপন্যাসের কেন্দ্রে রয়েছে গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল, তার নাইটক্লাবের জ্যাজ় সঙ্গীতবাদক এক আমেরিকান সৈন্য, সেই হোটেলের এক ফরাসি রন্ধনশিল্পী। কারুবাসনা, অভিলাষ, দেশপ্রেমের কাহিনির সঙ্গে মিশেছে গুপ্তচরবৃত্তির দাস্তান।
- আ গার্ডিয়ান অ্যান্ড আ থিফ মেঘা মজুমদার হ্যামিশ হ্যামিলটন
প্রথম উপন্যাস ‘আ বার্নিং’-এই নজর কেড়েছিলেন এই বঙ্গতনয়া। এ বারের কাহিনি অদূর ভবিষ্যতের এক বন্যাবিধ্বস্ত কলকাতার। এক নারী, তার কন্যা এবং বৃদ্ধ পিতাকে নিয়ে যেতে চাইছে শহর ছেড়ে আমেরিকান মুলুকে, যেখানে তার স্বামী থাকে। এই যাত্রায় সেই পরিবারের অভিবাসন সংক্রন্ত যাবতীয় নথি চুরি হয়ে যায়। উপন্যাসের কালসীমা এক সপ্তাহের। এই সময়টুকুর মধ্যেই খাদ্যাভাব আর উৎকণ্ঠার সঙ্গে মেশে চোরের নিজস্ব বয়ানও।