Advertisement
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
দখল আবাসন/২

বিপজ্জনক আবাসনে ভিড় বহিরাগতের, বাধা উচ্ছেদে

কারখানা উৎপাদনহীন হয়ে পড়ার পর থেকে দেখভাল হয়নি আবাসনের। বেহাল হয়ে পড়া আবাসনে বাস করা বেশ বিপজ্জনক। কিন্তু কুলটি কারখানার সেই সব আবাসনও খালি নেই। কারখানার একটি সূত্রের দাবি, প্রাক্তন কিছু কর্মী ও স্থানীয় জনা কয়েক রাজনৈতিক নেতা বহিরাগতদের থাকার বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন ওই সব আবাসনে। উচ্ছেদ করতে গেলে বাধা দেওয়া হচ্ছে।

বেহাল পড়ে থাকা নানা আবাসন। ছবি: শৈলেন সরকার।

বেহাল পড়ে থাকা নানা আবাসন। ছবি: শৈলেন সরকার।

সুশান্ত বণিক
শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪৭
Share: Save:

কারখানা উৎপাদনহীন হয়ে পড়ার পর থেকে দেখভাল হয়নি আবাসনের। বেহাল হয়ে পড়া আবাসনে বাস করা বেশ বিপজ্জনক। কিন্তু কুলটি কারখানার সেই সব আবাসনও খালি নেই।

কারখানার একটি সূত্রের দাবি, প্রাক্তন কিছু কর্মী ও স্থানীয় জনা কয়েক রাজনৈতিক নেতা বহিরাগতদের থাকার বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন ওই সব আবাসনে। উচ্ছেদ করতে গেলে বাধা দেওয়া হচ্ছে। অথচ, আবাসনে কোনও দুর্ঘটনা ঘটে গেলে দায় তাঁদের উপরেই বর্তাবে বলে আশঙ্কা কারখানা কর্তৃপক্ষের।

কুলটি কারখানার আবাসনগুলি প্রায় এক দশক ধরে দখলদারদের হাতে। অভিযোগ, প্রাক্তন কিছু শ্রমিক-কর্মীর পাশাপাশি সেগুলি জবরদখল করে রেখেছে বহিরাগতরাও। চুক্তির ভিত্তিতে আবাসনগুলিতে বসবাসের অনুমতি দিতে চাইলেও প্রাক্তন কর্মীরা তাতে সাড়া দেননি বলে কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি। এ দিকে, বিদ্যুতের বিল মেটাতে ও জল সরবরাহ করতে বহু টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে কারখানা কর্তৃপক্ষকে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে আবার পড়তে হচ্ছে বিক্ষোভের মুখে।

চুক্তির ব্যাপারে তাঁরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না কেন? আবাসনের বাসিন্দাদের তরফে চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘যে ভাড়া ও ‘সিকিওরিটি মানি’ নির্ধারিত হয়েছে, তা সেলের অন্য সংস্থার তুলনায় অনেক বেশি। এই টাকা আমরা দিতে পারব না। টাকার পরিমাণ পাল্টাতে হবে।’’ কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, এই বিষয়টি আলোচনা করে ঠিক হতে পারে। তবে আগে ‘সিকিওরিটি মানি’ জমা করতে হবে। কারখানার পরিচালন দফতরের এজিএম জিতেন্দ্র কুমার জানান, নিয়ম মানার ব্যাপারে কোনও বৈষম্য করা হবে না। আবাসনে যাঁরা থাকবেন তাঁদের প্রত্যেককেই বাঁধা নিয়মে চলতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘আইন মেনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এই কাজ করা হচ্ছে।’’

সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, কারখানার সঙ্গে কোনও কালেই সম্পর্ক ছিল না এই রকম কয়েক হাজার লোক আবাসন দখল করে আছে। কারখানারই প্রভাবশালী কিছু প্রাক্তন কর্মী, এলাকার বেশ কয়েক জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মোটা টাকার বিনিময়ে বহিরাগতদের এই আবাসনে ঢুকিয়েছেন বলে কারখানার একটি সূত্রের দাবি। আরও অভিযোগ, আবাসন থেকে দখলদার উচ্ছেদের বিক্ষোভে সামিল হচ্ছেন ওই সব প্রভাবশালী কর্মীরাই। কারণ, দখল উচ্ছেদ হলে তাঁদের মোটা টাকা রোজগার বন্ধ হয়ে যাবে।

সমস্যা আরও আছে। আবাসনের বিদ্যুৎ চোরা পথে আশপাশের এলাকায় ব্যাক্তিগত মালিকানার বাড়ি বা দোকানে সরবরাহ করার আঙুল উঠেছে। অভিযোগ, কাঠপুল পাড়া, শিমূলগ্রাম, আপার কুলটি এলাকার বহু বাড়িতেই কারখানার বিদ্যুৎ চুরি করে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে। কুলটি ওয়ার্কস রোড এলাকার নানা দোকানেও এ ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া হয়েছে। কারখানার আধিকারিক জিতেন্দ্র কুমার জানান, ইন্দিরা গাঁধী কলোনি এলাকায় বেশ কিছু বহুতল আবাসনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে বাস করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। অথচ, এখনও বেশ কিছু বাসিন্দা রয়েছেন। তাঁদের বারবার উঠে যেতে বলা হলেও যাচ্ছেন না। মাঝখানে কর্তৃপক্ষ সেখানকার বাসিন্দাদের উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। কিন্তু এলাকাবাসীর বাধায় সরে আসতে হয়েছে। জিতেন্দ্র কুমার বলেন, ‘‘আমরা ঠিক করেছি ওই আবাসনগুলি ভেঙে দেব।’’

জিতেন্দ্র কুমার আরও জানান, একেই কারখানার উৎপাদন প্রায় হয় না। লাভের মুখও দেখা যাচ্ছে না। এর পরে আবাসনগুলির অবৈধ দখলদারিদের জন্য প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা বিদ্যুতের খরচ বহন করা একেবারে সম্ভব নয়। অবিলম্বে তা বন্ধ করতে কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলে জানান তিনি।

(শেষ)

অন্য বিষয়গুলি:

factory Kulti police Outsider Burdhaman Jitendra kumar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy