Advertisement
E-Paper

বহিরাগতদের দখলে শহর, সন্ত্রাস নিয়ে সরব বিরোধীরা

শহরের দখল নিচ্ছে বহিরাগতেরা। জেলার চার পুরসভায় ভোটের আগের দিন এই অভিযোগে সরব হল বিরোধীরা। শুক্রবার থেকেই বাইরে থেকে আসা লোকজন শহরের দখল নিচ্ছে বলে দাবি করেছে তারা। কাটোয়ায় আবার কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বহিরাগত আনার পাল্টা নালিশ করেছে তৃণমূল।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য ও সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০৮
কালনা থানায় সিপিএম নেতা-নেত্রীরা। —নিজস্ব চিত্র।

কালনা থানায় সিপিএম নেতা-নেত্রীরা। —নিজস্ব চিত্র।

শহরের দখল নিচ্ছে বহিরাগতেরা। জেলার চার পুরসভায় ভোটের আগের দিন এই অভিযোগে সরব হল বিরোধীরা। শুক্রবার থেকেই বাইরে থেকে আসা লোকজন শহরের দখল নিচ্ছে বলে দাবি করেছে তারা। কাটোয়ায় আবার কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বহিরাগত আনার পাল্টা নালিশ করেছে তৃণমূল।

বিরোধীদের অভিযোগ, প্রচার পর্ব শেষ হতে না হতেই নেমে পড়েছে বহিরাগতেরা। মোটরবাইক নিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়ে এলাকায় সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করছে তারা। আজ, শনিবার নির্বাচনে ওই বহিরাগতদের দিয়েই শাসকদল ভোট লুঠের চেষ্টা করবে, মনে করছে বিরোধী দলগুলি। তার উপরে এই জেলায় কোনও কেন্দ্রীয় বাহিনী আসছে না জেনে তাঁদের আশঙ্কা আরও বেড়েছে বলে দাবি করেছেন বিরোধী দলের নেতারা। তৃণমূল যদিও এই সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। দলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের বক্তব্য, ‘‘মিথ্যে কাঁদুনি গাইছে বিরোধীরা।’’

সিপিএমের দাবি, অবাধ ভোট হলে বোর্ড দখল করতে পারবে কি না, সে ব্যাপারে তৃণমূল সংশয়ে রয়েছে। তাই সন্ত্রাসের অঙ্ক কষেছে তারা। সে জন্য বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শহরে ঢুকছে বহিরাগতরা। সিপিএমের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার বিকেলে এই রকম কয়েক জন বহিরাগতের হামলার মুখে পড়েন কালনার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের তাদের তিন কর্মী নিশীথ বিশ্বাস, সুরভ খাঁ এবং রমেন ভট্টাচার্য। তাঁদের কালনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আরও অভিযোগ, ওই ঘটনার পরে সন্ধ্যা থেকে কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা এক দল লোক ১২ নম্বর ওয়ার্ড দাপিয়ে বেড়ায়। সুরভ ও নিশীথের বাড়িতে ঢুকে হুমকি দেওয়া ও মারধর করা হয়। ওই রাতেই ১৪ নম্বর ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডেও চিৎকার-চেঁচামেচি ও ইট-পাটকেল ছুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হয় বলে অভিযোগ।

কালনায় সিপিএমের তরফে শুক্রবার দু’টি অভিযোগ করা হয়। তাতে জানানো হয়েছে, ৫, ৬, ১১, ১৪, ১৫ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএম নেতা-কর্মীরা ছাড়াও ভোটারদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, যাতে তাঁরা ভোটকেন্দ্রে না যেতে পারেন। আরও অভিযোগ, শুক্রবার থেকেই ৪, ৬ এবং ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে বড়-বড় প্যান্ডেল তৈরি করে শাসকদল কয়েক হাজার মানুষকে মাংস-ভাত খাওয়ানোর ব্যবস্থা রেখেছে, যা নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করছে। কালনা শহরের ৯টি জায়গায় বহিরাগতদের জমায়েত করা হচ্ছে বলেও দাবি সিপিএমের। সেই জায়গাগুলির নামও অভিযোগপত্রে জানিয়েছে তারা।

কাটোয়ার কংগ্রেসের প্রার্থী তথা দলের অন্যতম প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ করেছেন, শুক্রবার থেকেই বহিরাগতেরা শহর দখল করছে। এ দিন সকালে তৃণমূল আশ্রিত বহিরাগতেরা কাটোয়ায় মোটরবাইক নিয়ে কার্যত করেছে বলেও দাবি করেন তিনি। শহরের ৮, ৯, ১৩, ১৪, ২০ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল ‘বুথ দখল’ করতে পারে বলে এর আগে অভিযোগ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথবাবু। তাঁর কথায়, “নদিয়া জেলা-সহ পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে লোক এনেছে তৃণমূল।” তৃণমূলের কাটোয়া মহকুমা সভাপতি অমর রাম আবার মহকুমাশাসকের কাছে পরপর দু’দিন পাল্টা অভিযোগে করেছেন, কংগ্রেস বহিরাগতদের নিয়ে এসে বিভিন্ন এলাকায় জড়ো করেছে। তারা শহরের নানা বুথে সন্ত্রাস চালাতে পারে।

কালনা থানায় একটি অভিযোগ করেছে বিজেপি-ও। দলের বর্ধমান পূর্ব জেলা সভাপতি রাজীব ভৌমিক, কালনা শহরের নেতা সুশান্ত পাণ্ডেরা দাবি করেন, শাসকদল কালনা ১ ও ২ ব্লক, পূর্বস্থলী এবং আসানসোল থেকে বহিরাগতদের নিয়ে এসে কালনায় রেখেছে। তারা শহরে এমন একটা চাপা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে, যাতে সাধারণ মানুষ ভোট দিতে না বেরোন।

মেমারিতেও বহিরাগতেরা বুথ দখল করতে পারে বলে দাবি করেছে সিপিএম। তাদের অভিযোগ, ইতিমধ্যে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে বহিরাগতেরা আসতে শুরু করেছে। শনিবার সকালে তক্তিপুর, নুসিপুর, কেন্না এলাকায় সশস্ত্র লোকজন জমায়েত করে বুথে-বুথে হামলা করা হতে পারে বলে সিপিএমের আশঙ্কা। দলের জেলা কমিটির সদস্য সনৎ সিংহের অভিযোগ, “গ্রামে-গ্রামে তৃণমূল কর্মীরা ঘুরে সশস্ত্র বাহিনী জমায়েতের চেষ্টা করছে। আমরা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে সবিস্তারে জানিয়েছি।” মেমারির ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সুপ্রিয় সামন্ত অবশ্য বাইরে থেকে লোক আনার অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, “সিপিএমের পায়ের তলায় মাটি নেই। তাই মিথ্যা অভিযোগ ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে।”

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অঞ্জু কর বলেন, ‘‘আমরা পুলিশ-প্রশাসনকে সব জানিয়েছি। তারা অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে। তবে প্রশাসনের প্রতি আমাদের আস্থা নেই। সাধারণ মানুষ যাতে ভোট দিতে পারেন, সে জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে দল। সন্ত্রাসের পরিবেশ মানুষকে নিয়েই মোকাবিলা করা হবে।’’

জেলা তৃণমূল সভাপতি (গ্রামীণ) তথা মন্ত্রী স্বপনবাবুর অবশ্য আশ্বাস, ‘‘সন্ত্রাসের অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। মানুষ ঠিক ভাবেই ভোট দেবেন।’’

outsider miscreants kedarnath bhattacharya soumen dutta kalna municipal election 2015 katwa municipal election 2015
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy