Advertisement
৩১ মার্চ ২০২৩
জুনিয়র ডাক্তারদের বিক্ষোভে লাটে উঠল পরিষেবা

চিকিৎসা না পেয়ে রোগী গেল অন্যত্র

বৃহস্পতিবারও শিশুমৃত্যুর ঘটনায় পরিজনেরা হামলা চালিয়েছে অভিযোগ তুলে দুপুর থেকে সন্ধে পর্যন্ত কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ দেখালেন তাঁরা। ক্ষোভ জানাতে গিয়ে হাসপাতাল সুপারের ঘরে ভাঙচুরের অভিযোগও উঠল তাঁদের বিরুদ্ধে।

অসহায়: বর্ধমান মেডিক্যালে এসেও চিকিৎসা না পেয়ে ফিরছেন রোগী। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

অসহায়: বর্ধমান মেডিক্যালে এসেও চিকিৎসা না পেয়ে ফিরছেন রোগী। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৩২
Share: Save:

কখনও আক্রান্ত হওয়ার নালিশ করে জরুরি পরিষেবা স্তব্ধ করে দেওয়া, কখনও আবার বচসায় জড়িয়ে রোগীর পরিজনদের উপরে চড়াও— বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে। বৃহস্পতিবারও শিশুমৃত্যুর ঘটনায় পরিজনেরা হামলা চালিয়েছে অভিযোগ তুলে দুপুর থেকে সন্ধে পর্যন্ত কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ দেখালেন তাঁরা। ক্ষোভ জানাতে গিয়ে হাসপাতাল সুপারের ঘরে ভাঙচুরের অভিযোগও উঠল তাঁদের বিরুদ্ধে।

Advertisement

বছর পাঁচেক আগে রোগীর পরিজনদের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সেই খবর সংগ্রহে গেলে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের উপরে হামলা-মারধরে নাম জড়ায় কিছু জুনিয়র ডাক্তারের। বছর দুয়েক আগে আবার মঙ্গলকোটের ধারসোনা গ্রামের এক রোগীর পরিজনদের মারধরের ওঠে কিছু জুনিয়র ডাক্তারের বিরুদ্ধে। তার কয়েক মাস পরেই এক জুনিয়র ডাক্তারের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ হয়। তাঁকে সরিয়ে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বছরখানেক আগে এক জুনিয়র ডাক্তারের উপরে চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মী চড়াও হন বলে অভিযোগ। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে তিন চিকিৎসক আহত হন। এই ঘটনার পরে ৫ ঘণ্টা পরিষেবা অচল করে বিক্ষোভ দেখান জুনিয়র ডাক্তারেরা।

গত বছর অক্টোবরে কর্মবিরতি চলার সময়ে এক রোগীর মৃত্যু হয় বলেও অভিযোগ উঠেছিল। বৃহস্পতিবার ফের জুনিয়র ডাক্তারদের বিক্ষোভে পরিষেবা প্রায় অচল হয়ে পড়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। জুনিয়র ডাক্তারেরা হামলার অভিযোগ তোলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে পাল্টা মারধরের মৌখিক অভিযোগ করেছেন মৃত শিশুর পরিজনেরা।

চিহ্ন: সুপারের ঘরে তাণ্ডবের পরে। নিজস্ব চিত্র

Advertisement

এ দিন চিকিৎসা না পাওয়ায় জনা ২৫ রোগীকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে হয় বলে দাবি রোগীর আত্মীয়-পরিজনদের। বোলপুর থেকে এক রোগীকে দেখতে এ দিন হাসপাতালে এসেছিলেন অনিন্দ্য রায়। তিনি বলেন, ‘‘এসে দেখছি, কোনও চিকিৎসাই হচ্ছে না। রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে কলকাতায় নিয়ে যাচ্ছি।’’ কিডনির সমস্যা নিয়ে বীরভূম থেকে বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি হন মিষ্টু দাস। হাসপাতালের রাধারানি ওয়ার্ডে দু’দিন চিকিৎসা পেলেও এ দিন দুপুর ১২টার পরে কোনও চিকিৎসা হয়নি বলে অভিযোগ তাঁর মামা প্রভাত দাসের। তিনি বলেন, ‘‘সুস্থ হতে এখানে আসেন রোগীরা। তাঁদের দিকটি দেখা দরকার ডাক্তারবাবুদের।’’

নিগনের বাসিন্দা মঞ্জুশ্রী রায় পেটের সমস্যা নিয়ে জরুরি বিভাগে এলেও কোনও ডাক্তার না থাকায় ফিরে যেতে বাধ্য হন। মেমারি থেকে ইএনটি বিভাগে চিকিৎসা করাতে এসে ফিরে যান আদুরি মল্লিকও। বিষপানে অসুস্থ খণ্ডঘোষের বাসিন্দা শিল্পা রায়কে নিয়ে দুপুর থেকে সন্ধে পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরে অন্যত্র নিয়ে যান পরিজনেরা। আসানসোলে থেকে ইউসুফ ইব্রাহিমকে নিয়ে এসেছিলেন বাড়ির লোকজন। ছাদ থেকে পড়ে মাথায় চোট পেয়েছেন ইউসুফ। শেষে তাঁকে শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

জুনিয়র ডাক্তারদের অবশ্য সাফ কথা, বারবার এই হাসপাতালে আক্রান্ত হতে হচ্ছে তাঁদের। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এরই প্রতিবাদে এ দিন তাঁরা সরব হয়েছেন বলে দাবি করেন। তবে পরিষেবা বন্ধ রাখার কথা মানতে চাননি তাঁরা। কিন্তু গোটা ঘটনায় বিরক্ত হাসপাতালের কর্তারা। এমন আচরণের নিন্দা করেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারাও। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা বলেন, ‘‘সব ডাক্তারকে হাসপাতালে ডাকা হয়েছে। তাঁদের নিজের-নিজের বিভাগে যেতে বলা হয়েছে। কোনও ভাবেই আমরা চিকিৎসা ব্যাহত হতে দেব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.