Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

ছবি তোলার হিড়িক, দল এল পরীক্ষায়

সকাল থেকে স্টেশনে ঢোকার মুখে যাত্রীদের অনেকই থমকে দাঁড়ান ভেঙে পড়া ঝুল-বারান্দার জায়গাটি দেখতে। ফোনে ছবিও তুলতে দেখা যায় তাঁদের।

যাত্রীর ভিড়। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

যাত্রীর ভিড়। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৫৫
Share: Save:

দুর্ঘটনার পরে দুর্ভোগ হতে সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে, আশঙ্কা করেছিলেন নিত্যযাত্রীদের অনেকে। তবে সোমবার বর্ধমান স্টেশনে সেই আশঙ্কার তুলনায় কম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে দাবি তাঁদের। তবে সকাল থেকে স্টেশনে ঢোকার মুখে যাত্রীদের অনেকই থমকে দাঁড়ান ভেঙে পড়া ঝুল-বারান্দার জায়গাটি দেখতে। ফোনে ছবিও তুলতে দেখা যায় তাঁদের।

এ দিন স্টেশনে তদন্তে আসে রেল কর্তৃপক্ষের গড়া তদন্ত কমিটি। স্টেশনের বিভিন্ন বিভাগের আধিকারিক ও কর্মীদের কাছে লিখিত বক্তব্য নেয় তারা। তবে বাইরের কেউ বয়ান দিতে আসেননি। নির্ধারিত সময়ের ৮ মিনিট আগেই শুনানি শেষ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এ দিনই সন্ধ্যায় রেলের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তবে তাঁরা কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্টেশনে ঝুল-বারান্দার একাংশ ভেঙে পড়ার কারণ অনুসন্ধানের জন্য তৈরি তদন্ত কমটি স্টেশন ম্যানেজারের ঘরে সোমবার বিকেল ৪টে থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান নেবে, এ কথা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছিল। এ দিন হাওড়া ডিভিশনের সিনিয়র সেফটি অফিসার তপনকুমার মাইতিকে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান নিতে দেখা যায়। প্রায় দু’ঘন্টা বসে থাকার পরেও যাত্রী বা আশপাশের কোনও লোকজনকে বয়ান দিতে আসতে দেখা যায়নি। তবে স্টেশনের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক নিজেদের প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে লিখিত বয়ান দেন। অনুসন্ধান কেন্দ্রে সেই সময়ে দায়িত্বে থাকা কর্মীরাও তাঁদের অভিজ্ঞতা জানান। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্তকারী ১৭ জনের বয়ান পেয়েছেন।

নিত্যযাত্রীদের একাংশের দাবি, রেলকর্মীরা ছাড়া আর কোনও প্রত্যক্ষদর্শী নেই, তা ঠিক নয়। কিন্তু রেলের তরফে প্রচারে ঘাটতি থাকায় প্রত্যক্ষদর্শীরা বয়ান দেওয়ার বিষয়টি জানতে পারেননি বলে তাঁদের অভিযোগ। তদন্তকারীরা এ নিয়ে কোনও কথা না বললেও রেলের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘নানা সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়ার পরেও যাত্রী বা বহিরাগত কেউ না এলে কী করা যাবে! তাঁরা হয়তো ভেবেছেন, বয়ান দিলে হয়রানির মুখে পড়তে হতে পারে। কিন্তু এই ধারণা ঠিক নয়।’’

শনিবার রাতে যেখানে দুর্ঘটনা ঘটে সেই চত্বর রবিবার ত্রিপলে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। তবে সোমবার সকালে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, তা খুলে ফেলা হয়েছে। শুধু ঝুল-বারান্দা ও অনুসন্ধান কেন্দ্রের সামনে এক চিলতে জায়গা লোহার চাদরে ঘেরা রয়েছে। এটিএম কাউন্টারের পাশের রাস্তা দিয়ে টিকিট কাউন্টারে যাতায়াত করা যাচ্ছে। এর ফলে এ দিন যে দুর্ভোগের আশঙ্কা করা হয়েছিল, তা অনেকটা কম ছিল বলে দাবি যাত্রীদের অনেকের। তাঁদের অভিযোগ, শুধু ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীদের কিছুটা দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। ওই যাত্রীদের নতুন প্ল্যাটফর্মে উঠে ১ নম্বরে নামতে হচ্ছিল, অথবা মালগুদামের সামনের রাস্তা ধরে যেতে হচ্ছিল।

রেলের ইঞ্জিনিয়ারিং দফতর মালগুদামের কাছের রাস্তা সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছে। এ ছাড়াও নতুন প্ল্যাটফর্মের উপরে যাত্রীদের চাপ দেখা গিয়েছে। সে কারণে রেল পুলিশ টিকিট কাউন্টার থেকে প্ল্যাটফর্মে কাউকে দাঁড়াতে দিচ্ছিল না বলে যাত্রীরা জানান। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে কী ভাবে বাইরে বেরনো যাবে, তার কোনও নির্দেশিকা না থাকায় অনেকে হয়রান হয়েছেন।

এ দিন বিকেলে স্টেশনে আসেন এসআরপি (হাওড়া)। সন্ধ্যায় রেলের এক বিশেষজ্ঞ দল দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। দলের সদস্যেরা প্রথমে ফিতে দিয়ে কতটা জায়গা জুড়ে ঝুল-বারান্দাটি রয়েছে তা মেপে দেখেন। তার পরে বিভিন্ন থামের উপরের দিকে বেরিয়ে থাকা ইটগুলি পর্যবেক্ষণ করেন। রেল সূত্রে জানা যায়, ঝুল-বারান্দার নীচে একটি জায়গায় গর্ত করে মাটির সহ্য-ক্ষমতা বোঝার চেষ্টা করেন বিশেষজ্ঞেরা। নানা ‘স্কেচ’ও করেন তাঁরা। তার পরে ভবনের দোতলায় গিয়ে বিভিন্ন জায়গা দীর্ঘক্ষণ ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তবে বিশেষজ্ঞ দলটির কেউ কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Barddhaman Junction railway station Burdwan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE