শহরে ফিরলেন এভারেস্টজয়ী সৌমেন সরকার। সকাল থেকে প্ল্যাটফর্মে ভিড় জমিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। ছিলেন উত্তরপাড়ার এক পর্বতারোহী ক্লাবের সদস্যেরা। রবিবার দুপুর ১১টা ৫০-এ বর্ধমান স্টেশনে নামেন তিনি। মুহূর্তেই ফুল-মিষ্টি দিয়ে প্ল্যাটফর্মেই শুরু হয়ে যায় তাঁকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর পালা। চলে নিজস্বী তোলাও। স্টেশনের বাইরে মঞ্চ করে জানানো হয় সংবর্ধনা। অভ্যর্থনায় আপ্লুত সৌমেন সৌমেন বলেন, “এই সাফল্য আমি বর্ধমানবাসীকে উৎসর্গ করলাম। এই ভাবে মানুষ আসবেন, ছবি তুলবেন, সম্মান জানাবেন—ভাবতেই পারিনি।’’
১৫ মে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখেন বর্ধমান শহরের বাসিন্দা সৌমেন। তিনি পূর্ত দফতরের (সড়ক) জাতীয় সড়ক সাব ডিভিশনের সহকারী বাস্তুকার পদে কর্মরত। প্রায় ২০ বছর ধরে পর্বতারোহনের সঙ্গে যুক্ত। আগেও বহু শৃঙ্গ জয় করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে মাউন্ট দেও তিব্বা, রাশিয়ার মাউন্ট একব্রুশ, মাউন্ট ইউনুম, মাউন্ট নুন এবং মাউন্ট স্টক কাংরি। যোগ দিয়েছেন একাধিক ম্যারাথনেও।
এ দিন স্টেশনের বাইরে একটি ছোট মঞ্চ তৈরি করে সংবর্ধনা দেয় ইন্ডিয়ান স্কাউট অ্যান্ড গাইড বর্ধমান ইউনিট। সেখানে বছর চুয়ান্নর সৌমেনকে সম্মান জানায় শহরের একাধিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। গৌরব সমাদ্দার, সাম্ব চট্টোপাধ্যায়-সহ বহু মানুষ তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে ফুল ও উপহার তুলে দেন। উদ্যোক্তাদের তরফে দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “উনি আমাদের শহরের ছেলে, গোটা দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। তাঁকে সম্মান জানাতেই এই আয়োজন।”
উত্তরাখণ্ডের নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং (এনআইএম) থেকে প্রাথমিক পর্বত আরোহনের কোর্স করেন তিনি। সেখানেও সেরার সম্মান পান। সম্প্রতি ১ এপ্রিল বর্ধমান থেকে মাউন্ট এভারেস্ট এবং মাউন্ট লোৎসে জয়ের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। ৩০ এপ্রিল পৌঁছন এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে। তখন জানিয়েছিলেন, শীঘ্রই সামিটের একটি সুযোগ আসতে চলেছে। স্বপ্ন সফল করে দেশের পতাকাকে এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছেও দেন তিনি। এ দিন বর্ধমানে তাঁকে সংবর্ধনা দিতে এসে শেখ জাহাঙ্গির, অনির্বাণ হাজরারা বলেন, “সৌমেন সরকার বর্ধমানের গর্ব। ওঁর জন্য নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন হওয়া উচিত। প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলিরও পাশে থাকা উচিত, কারণ তিনি সঞ্চয় উজাড় করে এই সাফল্য অর্জন করেছেন।”
উচ্ছ্বসিত সৌমেন বলেন, “ঋণ, সঞ্চয়ের টাকা ভেঙে, ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা করেছিলাম। এই ভালবাসার কাছে সব তুচ্ছ লাগছে।” তিনি জানান, আগামী দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি শৃঙ্গ জয়ের ইচ্ছা রয়েছে তাঁর। স্ত্রীর তনুশ্রী সরকারও বলেন, “এই অভ্যর্থনা দেখে আমি সত্যিই বিস্মিত।” সৌমেন জানান, এভারেস্ট চূড়ায় মাত্র দশ মিনিট থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন। সেখানে ছিল কৃষ্ণমূর্তির মতো দেখতে একটি মূর্তি। শেরপার সঙ্গে সেটি স্পর্শ করে, প্রণাম করেন। তার পরেই নীচে নামার প্রস্তুতি শুরু করেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)