Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Kalna

সমাজবাড়ি রক্ষায় সমিতি গঠন

পশ্চিম ভারতীয় রীতি অনুযায়ী সৎকারের পরে পাথর বা ধাতুর পাত্রে চিতাভষ্ম-সহ মৃতের কিছু প্রিয় জিনিস রেখে তার উপরে স্মৃতিমন্দির তৈরি করা হয়।

অযত্নে পড়ে কালনার সমাজবাড়ি। নিজস্ব চিত্র

অযত্নে পড়ে কালনার সমাজবাড়ি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২৩ ০৯:৩৭
Share: Save:

কখনও হেরিটেজ কমিশনের সদস্যেরা ঘুরে গিয়েছেন। কখনও প্রশাসনিক বৈঠক হয়েছে। এমনকি, কালনা শহরে সমাজবাড়ির ভিতরে থাকা প্রাচীন দুই মন্দিরকে রক্ষা করতে পথেও নেমেছেন সাধারণ মানুষ। তবু গত এক দশকে ইতিহাস বাঁচাতে চাওয়া কোনও পদক্ষেপই কার্যকরী হয়নি। এ বার সমাজবাড়ির মন্দির দুটি রক্ষা করতে কালনা শহরে তৈরি হয়েছে ‘সমাজবাড়ি সেবা সমিতি’। এই সেবা সমিতির উদ্যোগে বৃহস্পতিবার সমাজবাড়ির ১৭ চূড়া মন্দিরে শুরু হয় পুজোপাঠ। সেবা সমিতির দাবি, সাধারণ মানুষের অর্থ সাহায্যে ধীরে ধীরে মন্দির দুটিকে সংস্কার করা লক্ষ্য রয়েছে তাঁদের।

পশ্চিম ভারতীয় রীতি অনুযায়ী সৎকারের পরে পাথর বা ধাতুর পাত্রে চিতাভষ্ম-সহ মৃতের কিছু প্রিয় জিনিস রেখে তার উপরে স্মৃতিমন্দির তৈরি করা হয়। একেই বলা হয় সমাজবাড়ি। কালনা শহরে ভাগীরথীর গা ঘেঁষে ১৮৩৩ সালে বর্ধমানের রাজা মহতাবচাঁদ এক একর ৪৩ শতক জমির উপরে সমাজবাড়ি তৈরি করেন। চারিদিক পাঁচিল দিয়ে ঘেরা চত্বরে দুটি স্মৃতিমন্দির রয়েছে। একটি রাজা তেজচাঁদ, অন্যটি তাঁর স্ত্রী কমলকুমারীর। এখানকার ১৭ চুড়া মন্দিরটি স্থাপত্যরীতিও বিরল। অন্যটি নবরত্ন বা ন’টি চূড়ার মন্দির। ১৯৬৬ সালের ২৮ জানুয়ারি বর্ধমান রাজ এস্টেট থেকে দীর্ঘমেয়াদি লিজে সমাজবাড়ির দেখভালের দায়িত্ব পান নবদ্বীপের তেঘড়িপাড়ার বাসিন্দা অবনী বিশ্বাস। রাজ এস্টেটে কর দিতেন বিশ্বাস পরিবার। পরে তাঁরা সরকারের কাছে সমাজবাড়ি নিজেদের দায়িত্বে নেওয়ার আবেদন জানান। তা মঞ্জুরও হয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে ভূমি ও ভূমি সংস্কারের নথিতে সমাধিস্থল হিসাবেই থেকে যায় সমাজবাড়ি। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বাস পরিবারের সদস্যেরা আদালতে যান। ২০১১ সালে বিশ্বাস পরিবারের পক্ষে যায় আদালতের রায়। তার পর থেকে সমাজবাড়ির জমি বিক্রির চেষ্টা শুরু হয় বলে অভিযোগ।

ইতিহাস বাঁচাতে স্থানীয় মানুষজন পথে নামেন। বাড়ির মালিকপক্ষের সঙ্গে প্রশাসনের বৈঠক হয়। প্রাচীন মন্দির দু’টি পরিদর্শন করে যান হেরিটেজ কমিশনের সদস্যেরা। তবে কোনও উদ্যোগই শেষ পর্যন্ত কাজে আসেনি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সমাজবাড়ির বেশির ভাগ সম্পত্তি বিক্রি হয়ে গিয়েছে। অবহেলায় প্রাচীন মন্দির দুটির নানা জায়গায় দেখা দিয়েছে ফাটল। বিভিন্ন চূড়ার আশেপাশে মাথা তুলেছে বড় বড় গাছ। চুরি গিয়েছে বিভিন্ন জিনিসপত্রও।

এ দিন ডাঙাপাড়ায় সমাজবাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ১৭ চূড়া মন্দিরের সামনে পুজো হচ্ছে। তাতে যোগ দিয়েছেন এলাকার বহু মানুষ। পুজোর আগে মন্দিরের নীচের অংশ পরিষ্কার করে সেখানে রঙের পোঁ‌চও দেওয়া হয়েছে। সমাজবাড়ি সেবা সমিতির তরফে চিত্তরঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মন্দির দু’টির মধ্যে একটি অত্যন্ত বিরল। কালনার ঐতিহ্য, গর্ব এ ভাবে অবহেলায় ধ্বংস হয়ে যাবে, তা আমরা মানতে পারিনি। তাই ১৭ চূড়া মন্দিরে প্রথম পুজো চালু করেছি।’’ তাঁর দাবি, মন্দির দুটি সংস্কারের জন্য দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছনো হবে। শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়েরাও বলেন, ‘‘মন্দির দুটি সংস্কার হলে এলাকায় পর্যটকের সংখ্য বাড়বে।’’ পুজোয় আপত্তি নেই, জানিয়েছেন সমাজবাড়ির নয় শরিকের অন্যতম শঙ্কর বিশ্বাস।

কালনার বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, ‘‘সমাজবাড়ির কয়েকজন শরিক আমার কাছে এসেছিলেন। তাঁরা এ ভাবে পুজোপাঠের বিপক্ষে ছিলেন। আমি জানিয়েছে, পুজো নিয়ে আমার কিছু বলা সাজে না। তাঁরা মনে করলে আইনি পরামর্শ নিতে পারেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kalna heritage building
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE