Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
অভিযোগ চুপির পাখিরালয়ে

পরিযায়ী আসতেই চোরাশিকারির দাপট

পূর্বস্থলীর চুপি এলাকায় এই পাখিরালয়ে প্রতি বছর শীতে দেশ-বিদেশের কয়েক হাজার পরিযায়ী পাখি আসে। তারা ছাড়িগঙ্গার মিষ্টি জলে ঘোরাফেরা করে, মাছ ধরে।

আসতে শুরু করেছে পাখির দল। নিজস্ব চিত্র

আসতে শুরু করেছে পাখির দল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১৬
Share: Save:

শীতের শুরুতে আসতে শুরু করেছে অতিথিরা। খুব বেশি না হলেও ইতিমধ্যে পৌঁছে গিয়েছে বেশ কিছু পরিযায়ী। আর তাতেই ফাঁদ পেতে পাখি ধরা শুরু করে দিয়েছে চোরাশিকারিরা, অভিযোগ পূর্বস্থলীর পাখিরালয়ে। সম্প্রতি কলকাতার তিন পর্যটক চোরাশিকারের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন বলেও দাবি করেন। পাখিদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা ‘বনবীথি’র তরফে তেমন কিছু ছবি পাঠানো হয় বন দফতরে। বুধবার দফতরের কাটোয়া রেঞ্জের দুই অফিসার এলাকা পরিদর্শন করেন।

পূর্বস্থলীর চুপি এলাকায় এই পাখিরালয়ে প্রতি বছর শীতে দেশ-বিদেশের কয়েক হাজার পরিযায়ী পাখি আসে। তারা ছাড়িগঙ্গার মিষ্টি জলে ঘোরাফেরা করে, মাছ ধরে। কোন কোন পাখি ঝোপে ডিমও পাড়ে। জলাশয়ে রঙিন পাখিদের দেখতে বহু পর্যটক আসেন পাখিরালয়ে। সম্প্রতি কলকাতা থেকে পাখি দেখতে আসা পর্যটক কৌশিক মাঝি, শুভাশিস চক্রবর্তী ও সৌম্যদীপ বিশ্বাস অভিযোগ করেন, পাখিরালয়ের পাড় ধরে এগিয়ে তাঁরা গিয়েছিলেন মেড়তলা পঞ্চায়েতের রুকুসপুর গ্রামে। সেখানে জলাশয়ের পাড়ে এক ব্যক্তিকে পাখি ধরার ফাঁদ পাততে দেখেন তাঁরা। এই ঘটনার ছবিও তোলেন তাঁরা। কৌশিকবাবুদের আরও অভিযোগ, ওই ব্যক্তির পাতা ফাঁদে পাখি ধরা পড়তেও দেখা গিয়েছে।

এলাকাবাসীর একাংশের আরও অভিযোগ, শুধু ফাঁদ পেতে নয়, নির্জন এলাকাগুলিতে বঁড়শিতে ছোট-ছোট মাছ গেঁথে চোরাশিকারিরা জলে ফেলে দিচ্ছে। পাখিরা সেই মাছ খেতে গেলে গলায় আটকে যাচ্ছে বঁড়শি। চোরাশিকারিরা মূলত মাংসের লোভেই দেদার পাখি শিকার করছে। পর্যটকদের দাবি, পরিযায়ী পাখি এলাকার সম্পদ। চোরাশিকারিরা নির্বিচারে শিকার করলে পাখিরালয়ের গুরুত্ব হারাবে।

বহু বছর ধরে পরিযায়ী পাখিদের নিয়ে কাজ করে আসছে এলাকার সংস্থা বনবীথি। তাদের অভিযোগ, গত বছরও চোরাশিকারিরা সক্রিয় ছিল। এ বার শীতের শুরু থেকে তারা ফাঁদ পেতে পাখি ধরা শুরু করেছে। সংস্থার সম্পাদক নবিবক্স শেখের ক্ষোভ, মানুষ পাখিরালয়ের টানেই আসেন। কিন্তু পাখিদের সুরক্ষার বিষয়ে প্রশাসনের কোনও ভাবনা নেই। তাঁর অভিযোগ, ‘‘পাখিদের জন্য নির্দিষ্ট কোনও ‘জোন’ করে দেওয়া হচ্ছে না। জাল বিছিয়ে মাছ ধরা, চোরাশিকারিদের উৎপাত, মাইক বাজিয়ে পিকনিকের ফলে পাখিরা ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। ওয়াচ টাওয়ার থেকেও সে ভাবে আর পাখি দেখা যাচ্ছে না।’’ তিনি জানান, খাবার ও নিরাপত্তার জন্য পাখিরা আসে। সেগুলিতেই টান পড়ছে। সংস্থাটির দাবি, তারা নিয়মিত এখানে পাখি গণনা করে। বছর-বছর পাখির সংখ্যা কমছে।

বুধবার বন দফতরের কাটোয়া রেঞ্জের দুই আধিকারিক পাখিরালয়ে যান। ওই সংস্থাটির তরফে চোরাশিকারের জায়গা দেখানো হয় তাঁদের। মহকুমাশাসক (কালনা) নীতিন সিংহানিয়া বলেন, ‘‘পাখিরালয়ে পাখিদের নিরাপত্তার জন্য পাহারার ব্যবস্থা করতে পুলিশকে চিঠি পাঠাচ্ছি। পাখিদের যাতে উৎপাত না করার জন্য সচেতনতা বাড়াতে ওই এলাকায় প্রচার ও সভা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pirates Hunters Migratory birds
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE