Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
CISF Commandant

চুরিতে ‘সাহায্য’, নালিশ হুমকির

ওই কমান্ডান্ট-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পশ্চিম বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বর থানার পুলিশ। কমান্ডান্ট এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাণ্ডবেশ্বর শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২০ ০০:৩০
Share: Save:

খনি পাহারার দায়িত্বে থাকা বেসরকারি সংস্থার এক রক্ষীকে মারধর করে খুনের হুমকি দেওয়া অভিযোগ উঠেছে সিআইএসএফ-এর এক কমান্ডান্টের বিরুদ্ধে। রক্ষীর স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে ওই কমান্ডান্ট-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পশ্চিম বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বর থানার পুলিশ। কমান্ডান্ট এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি। তবে ইসিএল কর্তৃপক্ষের দাবি, খুনের হুমকি বা মারধরের অভিযোগ ঠিক নয়। ওই সিআইএসএফ আধিকারিক ওই রক্ষীকে বকুনি দিয়েছিলেন মাত্র।

ঘটনার পরে ইসিএলের নিরাপত্তা-পরিকাঠামো নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সংশ্লিষ্ট নানা পক্ষ। পাশাপাশি, কয়লা চুরির অভিযোগ করেছে ইসিএল-ও।

ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি সংস্থার পাণ্ডবেশ্বর তিন নম্বর রেল ‘সাইডিং’-এ (‌কোলিয়ারি থেকে কয়লা এনে যেখানে জমা করা হয় এবং পরিবহণ করা হয়) শ’দুয়েক লোক কয়লা চুরি করতে ঢুকলে বেসরকারি সংস্থার রক্ষী দান্নো গ্রামের আবু সাত্তার-সহ অন্যেরা বাধা দেন। তাঁদের পাথর ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। পরে ঘটনাস্থলে সংস্থার নিরাপত্তা বাহিনী ও সিআইএসএফ গেলে লোকজন চম্পট দেয়।

আবু সাত্তারের স্ত্রী রেজিনাবিবির অভিযোগ, ‘‘গত ৭ জানুয়ারি সাইডিংয়ে এসে ওই কমান্ডান্ট স্বামীকে বলেন, ‘তুই থাকাতেও চুরি হচ্ছে। তুই চুরি করাচ্ছিস’। স্বামীকে লাঠি দিয়ে মারধরের পরে খুনের হুমকিও দেন। দুর্ব্যবহার করেন ওঁর সঙ্গে থাকা দু’জন।’’ বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত কমান্ডান্ট কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়ের অবশ্য দাবি, ‘‘নিরাপত্তারক্ষীদের কর্তব্যে গাফিলতি দেখে সংস্থার তৈরি টাস্ক ফোর্সের প্রধান ওই কমান্ডান্ট বকাবকি করেছিলেন। মারধর করা হয়নি।’’ এ দিকে, কমান্ডান্টের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করে আবু বলেন, ‘‘দল বেঁধে সশস্ত্র হয়ে কয়েকশো লোকজন চুরি করতে এলে আমরা চেষ্টা করেও কিছু করতে পারি না।’’

এই পরিস্থিতিতে ইসিএলের নিরাপত্তা-পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, সাধারণত পাঁচশো মিটার লম্বা ও দেড়শো মিটার চওড়া সাইডিংয়ে পাহারার দায়িত্বে থাকেন দশ জন লাঠিধারী বেসরকারি রক্ষী এবং তিন-চার জন সংস্থার রক্ষী। শত-শত লোক কয়লা চুরি করতে ঢুকলে, তাঁদের একাংশ রক্ষীদের ব্যস্ত রাখেন। অন্যেরা কয়লা চুরি করেন। এই কায়দায় শুধু ২০১৯-এ সালানপুর, সাতগ্রাম, কুনস্তোরিয়া, কাজোড়া, পাণ্ডবেশ্বর, ঝাঁঝরা এরিয়ায় ২৫ বারের বেশি কয়লা চুরি ঘটেছে। দ্বিতীয়ত, ইসিএলের ১৪টি এরিয়ার নিরাপত্তার জন্য সংস্থার নিজস্ব স্থায়ী রক্ষী, সিআইএসএফ জওয়ান এবং বেসরকারি রক্ষীর সংখ্যা যথাক্রমে ২,০৮৯ জন, ১,৫০০ জন এবং প্রায় দু’হাজার জন। বিস্তীর্ণ কয়লা-ক্ষেত্রের নিরাপত্তার জন্য এই সংখ্যা যথেষ্ট নয় বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের। পুলিশের অবশ্য দাবি, কয়লা চুরির ব্যাপারে ইসিএলের অভিযোগ পেলেই তারা ব্যবস্থা নেয়। আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুকেশকুমার জৈন বলেন, ‘‘দু’টি অভিযোগ পেয়েছি। পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।’’

এই পরিস্থিতিতে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘মারধর করে আসলে চুরি নিয়ে সবাইকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে।’’ বিজেপি নেতা সন্তোষ সিংহের আবার অভিযোগ, ‘‘ইসিএল, তৃণমূলের যোগসাজসে কয়লা চুরি হয়। রক্ষীকে মারধর করে সিআইএসএফ দায় ঝাড়তে চাইছে।’’ যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নীলাদ্রিবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘সংগঠিত চুরি আটকাতে রক্ষীরা অতীতে বহু বার প্রহৃত হয়েছেন। অভিযোগ পেলে পুলিশও পাশে থাকে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারির প্রতিক্রিয়া, ‘‘কয়লা-কারবারে আমাদের দলের কেউ যুক্ত নন। বেসরকারি রক্ষীদের আট মাস বেতন না দিতে পারার ব্যর্থতা মিথ্যা অভিযোগ করে ঢাকতে চাইছে ইসিএল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CISF Commandant ECL
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE