এই গাড়ি নিয়েই প্রতারণা বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র
রাত দেড়টা, বৃহস্পতিবার। বীরভূমের পাঁচামি থেকে পাথর নিয়ে খড়্গপুর যাচ্ছিল দু’টি ডাম্পার। দুর্গাপুরের এসবি মোড়ের কাছে, ৯ নম্বর জাতীয় সড়কে দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকারের স্টিকার দেওয়া একটি গাড়ি। জ্বলছিল নীল বাতিও। তাতেই ছিলেন বাসুদেব পাল এবং তাঁর ভাইপো জগদীশ পাল নামে দু’জন। অভিযোগ, নিজেদের জিএসটি আধিকারিক পরিচয় দিয়ে ডাম্পার চালকদের থেকে তিন হাজার টাকা করে দাবি করেন তাঁরা। চালকেরা তা দিতে অস্বীকার করেন এবং কোক-আভেন থানায় বিষয়টি জানান। এর পরেই, দু’জনকে রাস্তা থেকেই গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তেরা ডাম্পার দু’টি আটকে প্রথমেই কাগজপত্র পরীক্ষা করেন। ডাম্পার চালকদের কাছে উপযুক্ত কাগজপত্র ছিল। তাই তাঁরা অভিযুক্তদের দাবি মতো টাকা দিতে চাননি। অভিযোগ, এর পরে, তাঁদের দেখে নেওয়ারও হুমকি দেন অভিযুক্ত কাকা-ভাইপো। দু’জনেই এই মুহূর্তে ন’ডিহার বাসিন্দা। তবে বাসুদেব আদতে নদিয়ার বাসিন্দা।
কী ভাবে চলত ‘প্রতারণা’? তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, বাসুদেব রাজ্যের এক জিএসটি আধিকারিকের গাড়ির চালক। ওই আধিকারিক গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার পরে, তিনি গাড়িটি নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতেন। অভিযোগ, এর পরে, বাসুদেব তাঁর ভাইপো জগদীশকে সঙ্গে নিয়ে ভুয়ো আধিকারিক সেজে গাড়িটি নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন।রাস্তায় পণ্যবাহী গাড়ি দাঁড় করিয়ে তাঁরা জিএসটি সংগ্রহের নাম করে জোর করে টাকা আদায় করতেন বলে অভিযোগ।
পুলিশ জানায়, বাসুদেব এক বছর ধরে গাড়িটি চালাচ্ছেন। জিএসটি দফতরে গাড়িটি কয়েক বছর ধরে ভাড়া খাটছে। গাড়ির মালিক অন্ডালের বাসিন্দা।পুলিশ জানিয়েছে, কী ভাবে জিএসটি আধিকারিকেরা অভিযান চালান, তা গাড়ির চালক হিসেবে সামনে থেকে দেখেছেন বাসুদেব। অভিযোগ, সে কায়দাতেই বাসুদেব আত্মীয় জগদীশকে সঙ্গে নিয়ে পণ্যবাহী গাড়ি আটকে জিএসটি সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখার নাম করে, টাকা আদায় করতেন। মূলত, বাঁকুড়া মোড় থেকে মুচিপাড়া পর্যন্ত রাস্তায় তাঁরা এ কাজ করতেন বলে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছে।
ধৃতদের শুক্রবার দুর্গাপুর আদালতে তোলা হলে তাঁদের চার দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয় বলে আইনজীবীদের সূত্রে জানা গিয়েছে। এসিপি (দুর্গাপুর) প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অভিযুক্তদের জেরা করে পুরো ঘটনা জানার চেষ্টা করা হবে। গাড়ির মালিকের সঙ্গেও কথা বলা হবে।” সংশ্লিষ্ট জিএসটি আধিকারিক বলেন, “আমি ওই গাড়িটি ব্যবহার করতাম। কিন্তু ব্যবহার করার পরে, গাড়িটি নিয়ে কী করা হত, তা আমার জানা নেই।” গাড়ির মালিকেরও সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে প্রতিক্রিয়া, “প্রায় চার বছর ধরে গাড়িটি জিএসটি দফতরে ভাড়ায় খাটছে। এমন ঘটনা ঘটবে, বুঝতে পারিনি!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy