Advertisement
E-Paper

তৃণমূল নেতার সালিশি সভায় হাজিরা এড়ানোয় মারধর, ৩৪ দিন পর পুলিশের উদ্যোগে বাড়ি ফিরলেন বৃদ্ধা

পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের বাসিন্দা সাহানারা বিবি। স্থানীয় সূত্রে খবর, তাঁর পুত্র শেখ বসির আলির সঙ্গে পুত্রবধূর মতবিরোধ চলছিল। সেই সমস্যা মেটাতেই স্থানীয় তৃণমূল নেতা সালিশি সভা ডেকেছিলেন বলে অভিযোগ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৪ ১৪:৫৭
Police rescue an old couple from some goon at Purba Banrdhaman’s Jamalpur

বাড়ি ফিরলেন ঘরছাড়া বৃদ্ধা। — নিজস্ব চিত্র।

৩৪ দিন পর নিজের বাড়ি ফিরলেন বৃদ্ধ দম্পতি। তৃণমূল নেতার ডাকা সালিশি সভায় হাজির হওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছিল তাঁদের। অভিযোগ, বাড়িঘর ভাঙচুর করার হুমকিও দিয়েছিলেন ওই নেতার সাগরেদেরা। তার পর থেকেই ঘরছাড়া ছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি। অবশেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে বাড়ি ফিরতে পেরে খুশি তাঁরা। পুলিশ-প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞ বৃদ্ধার আশা, আর কোনও বিপদ হবে না। তাঁদের প্রতি কোনও অন্যায়-অবিচার হবে না। স্বামী-সন্তানকে নিয়ে শান্তিতে বাস করতে পারবেন নিজের বাড়িতেই।

পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর এলাকার কুবাজপুর গ্রামের বাসিন্দা সাহানারা বিবি। স্থানীয় সূত্রে খবর, তাঁর পুত্র শেখ বসির আলির সঙ্গে পুত্রবধূর মতবিরোধ চলছিল। যার জেরে আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের মামলাও চলছে। পুত্রবধূর করা খোরপোশের মামলা এখনও বর্ধমান আদালতে বিচারাধীন। আদালতে মামলার নিষ্পত্তি না হলেও এলাকার এক তৃণমূল নেতা আজাদ রহমান নিজে থেকেই এগিয়ে আসেন সমস্যা সমাধান করতে। অভিযোগ, সালিশি সভা ডেকে পারিবারিক অশান্তি মেটাতে উদ্যোগী হন আজাদ।

সাহানারার অভিযোগ, ‘‘গত ১৩ জুন তাঁদের বাড়িতে চড়াও হন চকদিঘি অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি আজাদের সাগরেদেরা। তারা এসে জানিয়ে যায়, আমাদের বৌমার করা মামলার নিষ্পত্তি করতে আজাদ চকদিঘি অঞ্চল তৃণমূলের অফিসে সভা ডাকা হয়েছে। ১৪ জুন সেই বিচারসভায় আমাদের পরিবারের সকলকে উপস্থিত থাকতে হবে। যদি আমরা সেই সভায় উপস্থিত না থাকি, তবে আমাদের বাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হবে। এমনকি, আমাদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়।’’

হুমকি পেয়েই ১৩ জুন সন্ধ্যাতেই জামালপুর থানায় গিয়ে বসির অভিযোগ জানান। সাহানারার অভিযোগ, জীবনহানির শঙ্কায় তাঁরা কেউ ১৪ জুন চকদিঘির তৃণমূল পার্টি অফিসে বিচারসভাতে যাননি। তার পরই ওই দিন রাতে লাঠি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁদের বাড়িতে চড়াও হয় আজাদের ১২ জন সাগরেদ। বাড়িতে এসে তারা হুমকি দেয়, ‘‘আমরা শাসকের শাসন করতে এসেছি।’’ তার পরই বসিরকে মারধর শুরু করে দুষ্কৃতীরা। ছেলেকে বাঁচাতে গেলে স্বামী এবং তাঁর উপরও হামলা চালায় তারা। রাতেই স্বামী এবং ছেলেকে নিয়ে ঘরছাড়া হন সাহানারা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় জামালপুর থানার পুলিশ। আক্রান্তদের উদ্ধার করে জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর আহত বসিরকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়।

সেই থেকে বাড়ি ফিরতে পারেননি সাহানারারা। শুক্রবার পুলিশের সহযোগিতায় বাড়িতে ফেরেন তাঁরা। সপরিবার বৃদ্ধ দম্পতি বাড়ি ছাড়া হওয়ার ঘটনা নিয়ে গ্রামে তোলপাড় পড়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং জেলার পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানান বৃদ্ধা সাহানারা।

যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আজাদ। তিনি জানান, বসিরের পরিবারকে তিনি চেনেন। তবে আদালতে বিচারাধীন থাকা মামলা নিয়ে তিনি কোনও বিচারসভা বা সালিশি সভা ডাকেননি। খোঁজ নিয়ে নিয়ে তিনি জেনেছেন, বসিরের পরিবারের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটছে, সেটা গ্রাম্য বিবাদ। মিথ্যা করে ওই ঘটনার সঙ্গে তাঁর নাম জড়ানো হয়েছে বলে দাবি আজাদের। তবে আজাদের দাবি ধোপে টেকেনি। পুলিশ সুপারের কাছে সাহানারারার দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে জামালপুর থানার পুলিশ আজাদ-সহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে। কিন্তু সেই মামলায় তাঁরা সকলেই জামিন পেয়েছেন। এর পরেই জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হন বৃদ্ধা সাহানারা। তার পরেই পরিস্থিতি বদল হতে শুরু করে। অবশেষে শুক্রবার পুলিশের সহযোগিতায় বাড়ি ফিরে আপাত স্বস্তিতে বৃদ্ধা এবং তাঁর পুত্র। সাহানারা জানান, তাঁর স্বামী অসুস্থ। হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তাঁর। এই ঘটনা প্রসঙ্গে অবশ্য শুক্রবার কোনও মন্তব্য করতে চাননি আজাদ। তিনি বলেন, ‘‘এ সব বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’’ উল্লেখ্য, গত কয়েক দিন ধরেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সালিশি সভায় অত্যাচারের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাঠগড়ায় তৃণমূলের কোনও না কোনও নেতা। সেই অভিযোগকে কেন্দ্র করে শোরগোল পড়েছে রাজ্যে। বিরোধীরা শাসকদলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে। অন্য দিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সব অভিযোগের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশও দিয়েছেন। ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ।

TMC Jamalpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy