তাঁদের কথা শোনা দূর, বরং বেআইনি বালি চুরি ধরতে অভিযানে গেলে পুলিশ নানা ভাবে ‘বাধা’ দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ জানালেন জেলার নানা স্তরের আমলারা। বৃহস্পতিবার জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের কাছে বিষয়টি নিয়ে চিঠি দেন তাঁরা। নির্দিষ্ট ভাবে কেতুগ্রাম, গলসি ও খণ্ডঘোষ থানার বিরুদ্ধেও অভিযোগ জানান ডব্লুবিসিএস (এক্সকিউটিভ) অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের বর্ধমান জেলার কর্তারা। তাঁদের সঙ্গে বৈঠকের পরে পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, ‘‘তিনটে বিষয় নিয়ে ওঁরা বলেছেন। খোঁজ নিয়ে দেখছি। ঘটনাটা ঠিক হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ প্রশাসন সূত্রে খবর, বেআইনি বালি খাদান বন্ধ বা রাজস্ব আদায়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নবান্নে রিপোর্ট পাঠাচ্ছেন জেলাশাসকও।
ডব্লুবিসিএস আধিকারিকদের সংগঠন সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েক মাস ধরেই বিভিন্ন থানার ওসি, আইসিদের সঙ্গে মতবিরোধ চলছিল বিডিও বা মহকুমার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটদের। তা চরমে পৌঁছয় ৬ ডিসেম্বর। ওই দিন কাটোয়ার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বিপ্লব সরকারের নেতৃত্বে একটি দল কাটোয়া ও মঙ্গলকোটের কয়েকটি বেআইনি বালি খাদানে অভিযান চালায়। কেতুগ্রামে চড়খির কাছে কাশীরাম দাস সেতুর নীচে বালি খাদান থেকে একটি বালির ট্রাক ধরে কেতুগ্রাম থানায় পাঠানো হয়। একটি মাটি কাটার যন্ত্রও বাজেয়াপ্ত করা হয়। কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসনের ‘ভুল বোঝাবুঝি’তে ওই যন্ত্র নিয়ে পালান স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। প্রশাসনের কর্তাদের দাবি ছিল, পুলিশকে জানানো হলেও সময়মতো আসেননি তাঁরা। আর পুলিশের বক্তব্য, প্রশাসনের তরফে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু জানানো হয়নি।
এরপরে ৮ ডিসেম্বর ওই বালির ট্রাকের মালিক বাণেশ্বর মাঝি কাটোয়ার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে কেতুগ্রাম থানায় ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ করেন। কাটোয়ার মহকুমাশাসকের কাছেও অভিযোগ করেন তিনি। কিন্তু জেলাশাসকের কাছে পাঠানো চিঠিতে মহকুমাশাসক দাবি করেছেন, মিথ্যা অভিযোগ করানোর জন্য ‘চাপ’ দিয়েছেন কেতুগ্রামের আইসি আবু সেলিম, এ কথা লিখিত ভাবে বাণেশ্বরবাবু জানিয়েছেন। ওই দিন রাতে তিনি ফের কেতুগ্রাম ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বহির্বিভাগের চিকিৎসার নথি দিয়ে মহকুমা প্রশাসনের কর্তাদের বিরুদ্ধে কেতুগ্রাম থানায় অভিযোগ করেন। ওই সংগঠনের সভাপতি সুমনকুমার ঘোষ ও সম্পাদক সুদীপ পালের দাবি, তাঁরা খোঁজ নিয়ে দেখেছেন গত এক বছরে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বাণেশ্বর মাঝি নামে কেউ চিকিৎসা করাননি। তাঁদের অভিযোগ, বাণেশ্বরবাবু এসডিও দফতরের কর্মীদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করলেও কাটোয়ার ওসি মামলা রুজু করেছেন। চিঠিতে তাঁদের দাবি, কুমতলবে এই ধরণের চক্রান্ত করা হয়েছে। কেতুগ্রামের আইসির বদলিরও দাবি ও কাটোয়ার ওসিকে সতর্ক করার অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মন্তেশ্বরের উপনির্বাচনের আগেই কেতুগ্রামের আইসি আবু সেলিমকে বদলির নির্দেশ দিয়েছিল স্বরাস্ট্র দফতর। তার জায়গায় বোলপুরের আইসি প্রবীর দত্তকে পাঠানো হয়। কিন্তু আবু সেলিম কেতুগ্রাম না ছাড়ায় প্রবীরবাবু পুলিশ লাইনে যোগ দেন। ঘনিষ্ঠ মহলে আবু সেলিমের দাবি, ‘‘আমাকে কেতুগ্রাম থেকে সরানোর জন্য চক্রান্ত করা হচ্ছে।’’
গলসি, খণ্ডঘোষের ওসির বিরুদ্ধেও অভিযোগ করা হয়েছে। ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে, গত ৯ অক্টোবর খণ্ডঘোষে অভিযানে গেলে অতিরিক্ত জেলাশাসককে (সাধারণ) বাধা দেওয়া হয়। ওই সংগঠনের সহ সভাপতি তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রণব বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা জেলা শাসকের তত্ত্বাবধানে কাজ করি। সে জন্য আমরা তাঁর কাছেই পুরো বিষয়টি জানালাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy