বাঁ দিকে, পানিফলায় পর্যটন কেন্দ্রের এই হাল। ডান দিকে, পুঁচড়ায় পড়ে রয়েছে মূর্তি। ছবি: শৈলেন সরকার।
বছর দশেক আগেও আসানসোল থেকে বারাবনির দোমহানি পর্যন্ত বাস চলত রাত পর্যন্ত। হঠাৎই সে সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর ফলে এলাকাবাসীকে নিয়মিত চূড়ান্ত হয়রানি তো পোহাতে হচ্ছেই, তার সঙ্গে এলাকার পর্যটন সম্ভাবনাও মার খাচ্ছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতি দিনই এলাকার বেশ কিছু মানুষজন কলকাতা থেকে কোলফিল্ড এক্সপ্রেস ধরে রাত ৮টা নাগাদ আসানসোলে পৌঁছন। আগে তাঁরা বাসেই বারাবনি ফিরতেন। কিন্তু সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন গাড়ি ভাড়া করে ফিরতে হয়। মহকুমার পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বারাবনিতে বাস রুট রয়েছে। বৈধ পারমিটও আছে। কিন্তু সারা দিন একটিও বাস যে চলে না, তার খোঁজ রাখেন না পরিবহণ বিভাগের কর্তারা। তাই বাসিন্দাদের ভরসা ট্রেকার বা অটো।
বাস চালানোর অনুমতি হাতে থাকা সত্ত্বেও বাস মালিকেরা বাস চালাচ্ছেন না কেন? আসানসোলে মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায়ের অভিযোগ, ‘‘আমরা আগে বাস চালিয়েছি। কিন্তু ওই রুটে বেআইনি ট্রেকারের এত দাপট যে বাস মালিকেরা লাভের মুখ দেখেন না। প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেও লাভ হয়নি। ফলে, ধীরে ধীরে বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’ তিনি দাবি করেন, ঝাড়খণ্ড থেকে প্রচুর ট্রেকার এই এলাকায় এসে বাসের রুটগুলিতে অনুমতি ছাড়াই যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করে। মিনিবাসগুলি তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছিল না। কারণ, মিনিবাস নির্দিষ্ট সময়সূচি মেনে চলে। ট্রেকার সহজে মেলায় যাত্রীরা মিনিবাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন না।
শুধু তাই নয়। অবৈধ ট্রেকার চালকেরা মিনিবাস চলাচলে বাধা দিচ্ছিল বলে অভিযোগ। মিনিবাস কর্মীদের সঙ্গে বচসা থেকে মারামারি বেধে যাচ্ছিল। এ নিয়ে বহু বার থানা-পুলিশও হয়েছে বলে সুদীপবাবু জানান। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসনের তরফে ট্রেকারের দৌরাত্ম্য বন্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করা হয়নি। এই পরিস্থিতির জন্যই মিনিবাস চালানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি সুদীপবাবুর।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, উপযুক্ত পরিবহণ ব্যবস্থার অভাবে শুধু যে তাঁদের দৈনন্দিন কাজকর্মে অসুবিধা হয়, তা নয়। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে এই এলাকার সম্ভাবনাও নষ্ট হচ্ছে। তাঁদের মতে, বারাবনির পুঁচড়া ও পানিফলা রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নিতে পারে। পুঁচড়ায় জৈনদের বেশ কিছু নিদর্শন রয়েছে। সেগুলি দেখতে এক সময়ে পর্যটকদের আনাগোনা ছিল। পানিফলায় উষ্ণ প্রস্রবণকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা হয়েছিল। সে জন্য পার্ক, জলাধার গড়া হয়েছিল। এলাকার অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে যাবে বলে আশা করেছিলেন এলাকাবাসী। কিন্তু, যোগাযোগের এই অবস্থার জন্য সেখানে পর্যটকের দেখাই মেলে না বলে তাঁদের অভিযোগ। এখন সে সব ভেঙেচুরে পড়ে রয়েছে।
সম্প্রতি আসানসোল শিল্পাঞ্চলের জন্য প্রায় ৫০টি সরকারি বাস নামানো হয়েছে। বারাবনির বাসিন্দাদের দাবি, তাঁদের এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার হাল ফেরাতে প্রশাসনের তরফে বারাবনি এলাকার কিছু রুটে কয়েকটি বাস দেওয়া হোক। এ নিয়ে মহকুমা প্রশাসনের কাছেও দরবার করেছে বাসিন্দারা। আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস বলেন, ‘‘আমি কিছুটা শুনেছি। সন্তোষজনক কিছু সমাধানের রাস্তা বের করতে পরিবহণ বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলছি।’’
এমন প্রশাসনিক আশ্বাস আগেও অনেক বার পেয়েছেন এই এলাকার বাসিন্দারা। এ বার হয়তো সত্যি কোনও ব্যবস্থা হবে, সেই আশাতেই রয়েছে বারাবনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy