Advertisement
E-Paper

বর্ধিষ্ণু শহরে বাড়ছে পুকুর চুরি

সময়ের সঙ্গে শহর বাড়ছে। লোকসংখ্যার সঙ্গে বাড়ছে আয়তনেও। দু’প্রান্তে তৈরি হয়েছে উপনগরী। গড়ে উঠছে একের পর এক বহুতল। আর তারই ফাঁকে পুকুর ও জলাশয় বুজিয়ে নির্মাণের প্রবণতা বাড়ছে বর্ধমান শহরে। শহরবাসীর ক্ষোভ, এই প্রবণতা বন্ধে উদ্যোগ তো দূর, ন্যূনতম নজরদারিও চোখে পড়ে না প্রশাসনের তরফে। প্রশাসনের কর্তারা ব্যস্ত দোষারোপে। বাসিন্দাদের দাবি, এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৫ ০১:৪১
আবর্জনায় পুকুর বোজানোর অভিযোগ শহর জুড়ে। ছবি: উদিত সিংহ।

আবর্জনায় পুকুর বোজানোর অভিযোগ শহর জুড়ে। ছবি: উদিত সিংহ।

সময়ের সঙ্গে শহর বাড়ছে। লোকসংখ্যার সঙ্গে বাড়ছে আয়তনেও। দু’প্রান্তে তৈরি হয়েছে উপনগরী। গড়ে উঠছে একের পর এক বহুতল। আর তারই ফাঁকে পুকুর ও জলাশয় বুজিয়ে নির্মাণের প্রবণতা বাড়ছে বর্ধমান শহরে। শহরবাসীর ক্ষোভ, এই প্রবণতা বন্ধে উদ্যোগ তো দূর, ন্যূনতম নজরদারিও চোখে পড়ে না প্রশাসনের তরফে। প্রশাসনের কর্তারা ব্যস্ত দোষারোপে। বাসিন্দাদের দাবি, এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হলে তা শহরের ভবিষ্যতের পক্ষে তা ভয়াবহ হবে।
পুরনো বাসিন্দাদের দাবি অনুযায়ী, শহরে পুকুর বোজানোর প্রবণতা শুরু হয়েছিল আটের দশকে। তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ড যেখানে তৈরি হয় সেখানে ‘ত্রিকোনা’ নামে একটি পুকুর ছিল। তা বুজিয়ে ফেলা হয়েছিল। এ ছাড়া মেহেদিবাগানের পুকুর, কলাবাগানের পুকুর, বিদ্যাসাগরের স্ম়ৃতি বিজড়িত প্যারিচাঁদ মিত্র পুকুর, বাদামতলার ধোপা পুকুর, লক্ষ্মীপুরের কাছে কাঁটা পুকুর— অনেক কিছুরই এখন আর অস্তিত্ব নেই বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। কোথাও তৈরি হয়েছে বাড়িঘর, কোথাও আবার খেলার মাঠ। তবে গত কয়েক বছরে এই জলাশয় বোজোনার প্রবণতা বেড়েছে বলে মনে করেন শহরের অনেকেই।
শহরের বাসিন্দা সর্বজিৎ যশ ‘বর্ধমান শহরের পুকুর চুরি’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধে দাবি করেছেন, জেলা আদালতের সামনে জজ পুকুর বা শিমূল পুকুরের চারদিকে ২০১২ থেকে অবৈধ নির্মাণ শুরু হয়। পুকুর বুজিয়ে পরপর বাড়ি তৈরি হয়। এলাকার বাসিন্দা সুকুমার সেন ও তাঁর ছেলে সঞ্জয় সেন পুকুরটি বাঁচাতে নেমেছিলেন। তাঁরা প্রশাসনকে জানান, এই পুকুরে বর্ধমানের রাজাদের তৈরি একটি বাঁধানো স্নানের ঘাট রয়েছে। কার্জন গেট এলাকায় আগুন লাগলে এই পুকুরই ভরসা। কিন্তু আবেদনেও ফল হয়নি। শুধু তাই নয়, বিবির পুকুর, বোসপুকুর, চৌধুরী চিঁড়ে মিলের গলি-সহ শহরে অন্তত গোটা পনেরো পুকুর বুজিয়ে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। বর্ধমান পুর নাগরিক কল্যাণ সমিতির সদস্য প্রশান্ত চক্রবর্তীর কথায়, “এর বাইরেও যে কত পুকুর-জলাশয় বোজানো হচ্ছে, তার হিসেব কে রাখছে!’’

বাস্তুতন্ত্রের স্বার্থে পুকুর পাড়ে গার্ডওয়াল দেওয়ার ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের। সেখানে বর্ধমানে ‘পুকুর চুরি’ করে পরপর বাড়ি তৈরিতে পরিবেশের রীতিমতো ক্ষতি হচ্ছে বলে পরিবেশবিদদের মত। পুকুর বোজানোর অভিযোগের যে সত্যতা রয়েছে তা মেনে নিচ্ছে পুরবোর্ড। পুরসভার চেয়ারম্যন ইন কাউন্সিলর (আবাসন) অরূপ দাস অবশ্য বলেন, “পুকুর বুজিয়ে বাড়ি হচ্ছে জানলেই আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিই। পুরসভা কোনও ভাবেই আইনের বাইরে কোনও বাড়ির অনুমোদন দেয় না।’’ জলাশয় বুজিয়ে তৈরি হয়েছে, যে সব নির্মাণ নিয়ে এমন অভিযোগ রয়েছে সেখানে জল বা বিদ্যুতের সংযোগ মিলছে কী ভাবে? এই প্রশ্নের সদুত্তর নেই।

শহর নাগরিক কল্যাণ সমিতির অভিযোগ, বর্ধমান রাজাদের খনন করা দিঘিও আস্তে-আস্তে বুজিয়ে ফেলছে এক দল দুষ্কৃতী। হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও দিঘিটি রক্ষায় কারও কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। কিছু দিন আগে শহরের বেড় মোড়ে একটি পুকুর বুজিয়ে দোকান করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এক প্রবীণ বাসিন্দা। পুরসভা ওই দোকান ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ওই বাসিন্দার বাড়িতে হামলা হয়। এই সমিতির সম্পাদক সুশান্তকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক যে কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না।’’

কী ভাবে চলছে এই পুকুর চুরি? এলাকা সূত্রে জানা যায়, নির্মাণকারীরা প্রথমে মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে স্থানীয় কিছু যুবকককে হাত করছেন। এই রকম কয়েক জন যুবকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথমে অল্প জল রয়েছে এমন পুকুরকে বেছে নেন তাঁরা। প্রথমে পুকুরের পাড় দখল, তারপর ধীরে-ধীরে জল তুলে ফেলে কয়েক মাস রেখে দেওয়া হয়। জল একেবারে শুকিয়ে গেলে আবর্জনা দিয়ে ভরাট প্রক্রিয়া শুরু হয়। কোনও রকম বাধা না পেলে তরতর করে ভরাটের কাজ এগোয়।

এই বেআইনি কারবার বন্ধের দায়িত্ব কার, সে প্রশ্নে পরস্পরের দিকে আঙুল দেখাতেই ব্যস্ত পুরসভা, ভূমি দফতর বা মৎস্য দফতরের কর্তারা। তার ফাঁকে বেড়ে চলছে অবৈধ নির্মাণ। শুধু পুকুর নয়, বাঁকা নদীর দু’পাড়েও গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজছেন শহরবাসী।

(চলবে)

Bardhaman Promoting soumen dutta flat water body pond
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy