সিটি সেন্টারে চতুরঙ্গ সর্বজনীনের মণ্ডপ। ছবি: বিকাশ মশান
দেশ-বিদেশের বিখ্যাত সব মন্দির, প্যাগোডা থেকে শুরু করে অধ্যাত্ম চেতনার সঙ্গে বিজ্ঞানের মেলবন্ধন। পাশাপাশি, কোনও মণ্ডপে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পঙ্ক্তিকে সঙ্গত করে দর্শকের চোখ টানার চেষ্টা।— মোট কথা, এই বার দুর্গাপুরে পুজোয় থিম নিয়ে বেশ মনোযোগী উদ্যোক্তারা, চতুর্থী ও পঞ্চমীর সন্ধ্যায় মণ্ডপ ঘুরে দেখার পথে এমনই বক্তব্য দর্শনার্থীদের।
তামিলনাড়ুর রামেশ্বরম দ্বীপে অবস্থিত রামানাথস্বামী মন্দির ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে একটি। সেই মন্দিরের আদলেই মণ্ডপ গড়েছে অগ্রণী সাংস্কৃতিক পরিষদ। বেনাচিতির ছোট জায়গার মধ্যে বছরে পর বছর নতুন নতুন থিমের চমক দিয়ে চলেছে এই পুজো। পুজোর এই বার ৫৬তম বর্ষ। অগস্টে মণ্ডপের কাজের সূচনা করেছিলেন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। মণ্ডপ তৈরি করেছেন কাঁথির শিল্পীরা।
তবে শুধু অগ্রণীই নয়। মন্দিরের আদলে মণ্ডপ গড়েছে দুর্গাপুরের বেশ কয়েকটি পুজো কমিটি। ডিএসপি টাউনশিপের মার্কনি দক্ষিণপল্লি সর্বজনীনের পুজোর এই বার ৬৩তম বর্ষ। ইন্দোনেশিয়ার বালির বিষ্ণু মন্দিরের আদলে মণ্ডপ গড়েছেন উদ্যোক্তারা। ৫৪তম বর্ষে কর্নাটকের বিষ্ণু মন্দিরের আদলে দুর্গাপুর বাজার সর্বজনীন, মায়াপুরের ইসকন মন্দিরের আদলে বেঙ্গল অম্বুজা উর্বশী সর্বজনীনের মণ্ডপও নজর কেড়েছে শহরবাসীর। পাশাপাশি, থিমের টক্করে রয়েছে সিটি সেন্টারের চতুরঙ্গ সর্বজনীনের পুজোও।
তাদের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে অক্ষরধাম মন্দিরের আদলে। দর্শনার্থীরা জানান, এখানে মণ্ডপ দেখতে গিয়ে সামনের বিশাল মাঠে আড্ডা দেওয়াটা বাড়তি পাওনা। একই ভাবে মাঠে আড্ডা দেওয়ার আনন্দ রয়েছে বিধাননগরের ক্লাব স্যান্টোসের পুজোতেও। এ দিকে, গোপালমাঠ যুবমহল সর্বজনীনের মণ্ডপ গড়ে উঠেছে প্যাগোডার আদলে।
১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে বিশাল এলাকা জুড়ে ‘ভ্যাটিকান সিটি’ গড়েছে নবারুণ সর্বজনীন। বুদ্ধবিহার সর্বজনীনের পুজোর থিম, ‘ছৌরূপিণী জগৎজননী’। ছৌয়ের বিভিন্ন আঙ্গিক ও মুখোশের নানা রূপ ফুটে উঠেছে মণ্ডপে। কাল্পনিক মন্দিরের আদলে শ্যামপুর কমিউনিটি সেন্টার উদয় সঙ্ঘ সর্বজনীন, কাল্পনিক প্রাসাদের আদলে বিধাননগর সেক্টর ২সি সর্বজনীনের পুজোও চোখ টানছে।
পাশাপাশি, অধ্যাত্ম চেতনা ও বিজ্ঞানের মেলবন্ধন ঘটিয়েছে ফুলঝোড় সর্বজনীন। মণ্ডপের সামনেই বিশাল আকারের ওঁ। জওহরলাল নেহরু রোড দিয়ে গেলেই নজর কাড়ছে এই বিশালাকৃতির মণ্ডপটি। এ দিকে, ‘কেয়া-পাতার নৌকো গড়ে সাজিয়ে দেব ফুলে--/ তালদিঘিতে ভাসিয়ে দেব, চলবে দুলে দুলে।’— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই দু’টি পঙ্ক্তিকে সঙ্গে করেই তাক লাগাতে চেয়েছে দুর্গাপুরের সি-জ়োন সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটি। কেয়া পাতার নৌকায় করে নারায়ণী রূপে দেবী দুর্গা এসেছেন। নৌকা টেনে আনছে বিশাল রাজহাঁস।
পঞ্চমীর সন্ধ্যায় দুর্গাপুরের বড় মণ্ডপগুলিতে গিয়ে দেখা গেল, দর্শনার্থীদের ভিড়। পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন পুজো কমিটির স্বেচ্ছাসেবকেরা কার্যত হিমসিম খাচ্ছেন ভিড় সামলাতে। তবে, উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, ভিড় নিয়ন্ত্রণে প্রথম থেকেই জোর দেওয়া হচ্ছে। কারণ, তৃতীয়ার সন্ধ্যা থেকেই ভিড় শুরু হয়েছে মণ্ডপে। করোনা ও তার পরবর্তী বছরে তেমনটা দেখা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy