Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

আন্দোলনের ধরন নিয়ে প্রশ্ন সিপিএমে

সিটুর একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিপিএলের শ্রমিক স্বার্থ রক্ষা করতে আইএনটিটিইউসি, আইএনটিইউসি-সহ আগ্রহী শ্রমিকদের নিয়ে যৌথ আন্দোলনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা করতে গিয়ে বিতর্কের মুখে ডিপিএলের সিটু নেতৃত্ব।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৪
Share: Save:

রাজ্য সরকারের সংস্থা দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেডে (ডিপিএল) সিটুর আন্দোলনের ধরন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সিপিএমের অন্দরে। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের এক জেলা নেতার সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়ে সিটু নেতৃত্ব তৃণমূলের প্রস্তাব মেনে কার্যত নতিস্বীকার করেছেন বলে অভিযোগ।

দুর্গাপুরে শিল্প বাঁচানোর লড়াইয়ে বরাবর সব শ্রমিক সংগঠনকেই সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের পক্ষে সিটু। সঙ্ঘ প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন বিএমএস-সহ বাকি সব শ্রমিক সংগঠন তাদের ডাকে সাড়া দিলেও তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিউসি বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আলাদা ভাবেই আন্দোলন করে থাকে। কেন্দ্র সরকারের এএসপির কৌশলগত বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলন কর্মসূচিও তারা আলাদা ভাবেই চালিয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি রাজ্য সরকার ডিপিএলের বিভিন্ন বিভাগ অন্য সরকারি বিদ্যুৎ সংস্থার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। সে জন্য পঞ্চাশোর্ধ্ব কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর ও দরকার পড়লে কর্মীদের অন্যত্র বদলি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দুর্গাপুর ও সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন শিল্পসংস্থা ও গৃহস্থালীর বিদ্যুতের জোগান দিতে ১৯৬০ সালে গড়ে ওঠা ডিপিএলের অস্তিত্বই শেষ হয়ে যাবে বলে অভিযোগ শ্রমিক-কর্মীদের একাংশের। বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় নিজে শ্রমিক স্বার্থ সম্পূর্ণভাবে রক্ষা করার আশ্বাস দিলেও অনিশ্চয়তায় ভুগছেন কর্মীদের অনেকেই।

সিটুর একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিপিএলের শ্রমিক স্বার্থ রক্ষা করতে আইএনটিটিইউসি, আইএনটিইউসি-সহ আগ্রহী শ্রমিকদের নিয়ে যৌথ আন্দোলনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা করতে গিয়ে বিতর্কের মুখে ডিপিএলের সিটু নেতৃত্ব। শুক্রবার অন্য দুই শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের পাশাপাশি তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ডিপিএলের সিটু নেতা নরেন সিকদারও। সিটু সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে উত্তমবাবু শ্রমিক নেতাদের জানিয়ে দেন, আন্দোলন করে লাভ হবে না। বিদ্যুৎ মন্ত্রীকেও চিঠি দিতে হবে না। দলের জেলা পর্যবেক্ষক, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বিষয়টি দেখে নেবেন। বাকি শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে সিটু নেতা নরেনবাবুও তাতে সায় দেন বলে সিটু সূত্রে জানা গিয়েছে। উত্তমবাবু বলেন, ‘‘সিটু, আইএনটিইউসি, ইউটিইউসি’র নেতারা ছিলেন। আমি আলোচনার নির্যাস আমাদের দলের জেলা পর্যবেক্ষক, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।’’

শ্রমিক আন্দোলনের বিষয়ে একটি রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে বৈঠক কেন এবং সেই নেতার প্রস্তাব নরেনবাবু মেনেই বা নিলেন কেন তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে সিপিএমের অন্দরে। দলের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বন্ধ বা রুগ্‌ণ শিল্পে আমরা যৌথ আন্দোলনের পক্ষে। শ্রমিক আন্দোলনে রূপরেখা ঠিক করবেন শ্রমিক নেতারাই। ডিপিএলে কী হয়েছে ঠিক জানি না। খোঁজ নিতে হবে।’’ দলের জেলা কমিটির সদস্য তথা সিটু নেতা পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, ‘‘শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে আইএনটিটিইউসি নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা হতেই পারে। ‘শিল্পধ্বংসকারী’ তৃণমূলের নেতার সঙ্গে বৈঠক হবে, এমন কোনও সিদ্ধান্ত দল বা সংগঠনে হয়নি।’’ এক সিটু নেতা বলেন, ‘‘ডিপিএলের বিষয় বিদ্যুৎমন্ত্রী দেখবেন না, শাসক দলের জেলা পর্যবেক্ষক দেখবেন। এ কথার অর্থ কি?’’

যাঁর ভূমিকা নিয়ে এত বিতর্ক সেই নরেনবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘শ্রমিকদের স্বার্থেই শাসক দলের নেতার সঙ্গে আলোচনায় বসা হয়েছিল। কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। কাজেই বিতর্কের কিছু নেই।’’ সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, ‘‘ডিপিএলের আন্দোলন কী ভাবে হবে, তা ঠিক করার ভার স্থানীয় নেতৃত্বের হাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

movement CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE