Advertisement
E-Paper

জুতো পরে কেন, প্রশ্নেই জুটল মার

জরুরি বিভাগ তখনও সরগরম। রোগীদের পরিষেবায় ব্যস্ত বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা। সেই সময় অপারেশন থিয়েটারের ভিতরে ঢুকে দলবল নিয়ে এক জুনিয়র চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগ উঠল এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫৮
হাসপাতাল সুপারের সঙ্গে চলছে বৈঠক। নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতাল সুপারের সঙ্গে চলছে বৈঠক। নিজস্ব চিত্র।

জরুরি বিভাগ তখনও সরগরম। রোগীদের পরিষেবায় ব্যস্ত বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা। সেই সময় অপারেশন থিয়েটারের ভিতরে ঢুকে দলবল নিয়ে এক জুনিয়র চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগ উঠল এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর বিরুদ্ধে। ওই চিকিৎসককে বাঁচাতে গিয়ে এক জন মহিলা ইন্টার্ন-সহ তিন জন জুনিয়র ডাক্তার জখম হন।

সোমবার রাত ১০টা নাগাদ এই ঘটনার পরেই অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও হাসপাতালে নিরাপত্তার দাবিতে জুনিয়র চিকিৎসকরা জরুরি বিভাগের অস্ত্রোপচারের ঘরের সামনে ধর্নায় বসে যান। ফলে, রোগী ভর্তি থেকে ন্যূনতম চিকিৎসা পরিষেবা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। এরই মধ্যে রাধারানি ওয়ার্ডে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এক রোগীর মৃত্যু হয়। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে গভীর রাতে হাসপাতাল সুপার উৎপল দাঁ এবং এসডিপিও (বর্ধমান সদর) সৌমিক সেনগুপ্ত ছুটে আসেন। তাঁদের কাছে আশ্বাস পাওয়ায় প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পরে হাসপাতাল ফের সচল হয়। চিকিৎসকদের উপর হামলার অভিযোগে পুলিশ মঙ্গলবার সকালে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। যদিও হামলার মূল অভিযুক্ত চতুর্থ শ্রেণির কর্মী প্রদীপ রাউতকে পুলিশ ধরতে পারেনি। পুলিশের দাবি, তিনি পলাতক।

এ দিনই দুপুরে বর্ধমান মেডিক্যালে জরুরি বৈঠকে বসেন হাসপাতাল সুপার, মহকুমাশাসক (বর্ধমান উত্তর) মুফতি শামিম সওকত, কলেজের অধ্যক্ষ সুকুমার বসাক, ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা, কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন এবং পুলিশ কর্তারা। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, জুনিয়র চিকিৎসকদের নিরাপত্তার দাবিতে সরব ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা। তাঁরা অভিযোগ করেন, রাতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের দেখতে পাওয়া যায় না। জুনিয়র চিকিৎসকদেরই সব কাজ করতে হয়। তার পরেও জরুরি বিভাগের অস্ত্রোপচারের ঘরে ঢুকে ইমরান খান নামে এক জুনিয়র চিকিৎসককে মারধর করা হয়। তাঁর স্টেথোস্কোপ কেড়ে মেঝেয় ফেলে মারধর করারও অভিযোগ ওঠে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে। ছাত্র সংসদের সম্পাদক মুস্তাক আবু হেব্রিমের প্রশ্ন, “চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের কাছেই যদি জুনিয়র ডাক্তারদের নিরাপত্তা না থাকে, তা হলে সাধারণ রোগীর পরিবার কী করবে বুঝতে পারছেন!” এ দিনের বৈঠকের পর ঠিক হয়েছে, হাসপাতালের নিরাপত্তা পুলিশের সাহায্যে জোরদার করা হবে।

কী ঘটেছিল?

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ হাতে হাল্কা চোট পেয়ে হাসপাতালে আসেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী প্রদীপ রাউত। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আত্মীয় মোহন রাউত এবং ভাতছালার পিওনপাড়ার বাসিন্দা সৌমেন রায় ও কল্যাণ মিত্র। দলবল প্রদীপ নিয়ে সোজা জরুরি বিভাগের অস্ত্রোপচারের ঘরে ঢুকে পড়েন। জুতো পড়ে ঘরে কেন ঢুকেছেন, প্রশ্ন করতেই জুনিয়র চিকিৎসক ইমরানের সঙ্গে বচসা শুরু হয়ে যায়। অভিযোগ, সেই সময়ই প্রদীপ-সহ চার জন মিলে ইমরানকে মারতে থাকেন। বাকি চিকিৎসকেরা বাধা দিতে গেলে তাঁরাও মারের হাত থেকে রেহাই পাননি। তার পরেই অস্ত্রোপচার বন্ধ করে চিকিৎসকরা বেরিয়ে যান। একে একে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকেরাও কাজ ফেলে জরুরি বিভাগের সামনে জড়ো হন।

অভিযোগ, সেই সময় রোগী ভর্তি নেওয়া বন্ধ করে দেন জুনিয়র ডাক্তাররা। এমনকী হাত ধরে রোগীদের বাইরে বের করে দেওয়ারও দৃশ্য চোখে পড়ে। যদিও মুস্তাকের দাবি, “আমরা দোষীদের গ্রেফতার ও নিরাপত্তার দাবিতে ধর্নায় বসেছিলাম। রোগীদের কোনও রকম সমস্যায় ফেলা হয়নি।” যদিও হাসপাতাল সূত্রেই জানা যাচ্ছে, জুনিয়র ডাক্তারেরা কোনও কাজ না করায় বিভিন্ন বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসক ও প্রধানদের ছুটে আসতে হয়। তারই মধ্যে রাধারানি ওয়ার্ডে এক রোগী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উপরে চাপ তৈরি হয়। যদিও তা নিয়ে বড় কোনও গণ্ডগোল বাধেনি।

গভীর রাতে সুপার ও এসডিপিও হাসপাতালে ছুটে এসে দাবি মানার আশ্বাস দিলে জুনিয়র চিকিৎসকেরা কাজে যোগ দেন। হাসপাতাল সুপার উৎপল দাঁ অবশ্য রোগী মৃত্যুর অভিযোগ কিংবা কর্মবিরতির কথা স্বীকার করেননি। তাঁর কথায়, “কর্মবিরতি করার দাবি উঠছে দেখেই আমি জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ছুটে এসেছিলাম।” মহকুমাশাসক বলেন, “হাসপাতালে পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে। ওই ক্যাম্পে আরও পুলিশ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।”

Medical college and Hospital Doctors Conclict
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy