উল্লাস মোড় থেকে তেজগঞ্জ যাওয়ার পথে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে ট্রাক, ম্যাটাডর। নিজস্ব চিত্র।
এক্সপ্রেসওয়ের দু’ধারে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে লরি, ট্রাক। ফলে পাশের রাস্তা থেকে জাতীয় সড়কে ওঠার সময় গাড়ি দেখতে না পেয়ে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা— মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জোতগ্রাম-গাংপুরের কাছে দুর্ঘটনার পরে এমনই দাবি করলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
তাঁদের অভিযোগ, গত কয়েক মাসে ওই রাস্তায় বাম-বটতলা গ্রামের কাছেই ৮-১০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। পরিবহণ দফতর, প্রশাসনের কাছে বারবার রাস্তার ধারে পার্কিং না করানোর দাবি জানানো হয়েছে। তা সত্ত্বেও পরিস্থিতি যে কে সেই। এমনকী, পরিবহণ দফতরের মদতেই রাস্তার ধারে পার্কিং দেওয়া হয় বলেও বাসিন্দাদের একাংশের দাবি। যদিও পরিবহণ দফতরের পাল্টা দাবি, টাকার জন্য রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করানো, সেগুলিকে লেন ভাঙতে সাহায্য করত এলাকারই কিছু যুবক। ট্রাক থেকে বালি-পাথর নামানোর জন্যও অনেক সময় আশপাশের এলাকা থেকে লোক নেওয়া হতো। বেআইনি কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্রামবাসীদের ক্ষোভ গিয়ে পড়ে টোলপ্লাজায়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পরিবহণ দফতরের কর্মীরা তাড়া করায় দ্রুত গতিতে পালাতে গিয়ে এক মোটরবাইক আরোগীতে ধাক্কা মারে একটি ট্রাক। ঘটনাস্থলেই মারা যান শেখ ওবিদুল্লা নামে বছর বিয়াল্লিশের ওই ব্যক্তি। আহত হন আরও এক জন। ট্রাকটিও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের নয়ানজুলিতে পড়ে যায়। এরপরেই ওই টোলপ্লাজায় ভাঙচুর-অবরোধ শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বর্ধমান-বড়শূল রুটের একটি বাস ভাঙচুর করা হয়। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে অবরোধও চলে কয়েক ঘণ্টা।
বুধবার সকালে ঘটনাস্থলের কাছেই একটি চায়ের দোকানে বসে কয়েকজন যুবক দাবি করেন, বছর খানেক হল পরিবহণ দফতর চেক পোস্টটি বসিয়েছে। তারপর থেকেই এলাকায় দুর্ঘটনা বেড়ে গিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, উল্লাস মোড় পেরোনোর পর থেকেই বালি বা পাথরের গাড়িগুলি পরিবহণ দফতরের এমভিআই কর্মীদের ভয়ে গাড়ির গতিবেগ বাড়িয়ে দেয়। দু’পাশের গ্রামগুলি থেকে মানুষজন রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে বা রাস্তার ধার দিয়ে যেতে গিয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়েন। স্থানীয় বাসিন্দা মতিউল্লাহ শেখ, মঙ্গলা মাঝিদের অভিযোগ, “রাস্তার দু’ধারে সারি দিয়ে বালি, পাথরের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। যাওয়া-আসার উপায় থাকে না।” পরিবহণ দফতরের একাংশ কর্মীদের মদতে গাড়িগুলি দাঁড়িয়ে থাকে বলেও তাঁদের দাবি। গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকার জন্য রাস্তার হাল দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে, মোরাম উঠে গিয়ে গর্ত তৈরি হয়েছে বলেও জানান তাঁরা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, চেক পোস্ট থাকলেও রাস্তার ধারের পার্কিং বন্ধ হয়নি। লিখিত ভাবে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে দাবি জানানোর কথাও ভাবা হয়। তার মাঝেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মারা গেল গ্রামেরই ছেলে। সেই রোষেই ওই রাতে ভাঙচুর চলে। রাস্তা অবরোধ হয়। স্থানীয় বাসিন্দা মাধব মণ্ডলের কথায়, “পরিবহণ দফতর গাড়িগুলিকে রাস্তার উপরেই আটকে রাখে। রাতে রাস্তা পারাপার করা আর মৃত্যুকে ডেকে আনা দুটোই সমান। তার উপর রাস্তার দু’পাশে বড় বড় লরি বা ডাম্পার দাঁড়িয়ে থাকায় কোনও কিছুই নজরে আসে না।” আর এক বাসিন্দা শ্যামল দাসও বলেন, ‘‘গাড়ি আসছে দেখে সরে দাঁড়াব, সে জায়গাও থাকে না।”
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে জুড়েই অবশ্য এই ছবি দেখা যায়। স্রেফ মালপত্র নামানোর জন্যও চালকেরা বেআইনি ভাবে রাস্তার দু’ধারে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখেন। অনেকে আবার একটু জিরিয়ে নেওয়ার জন্যও রাস্তার পাশে গাড়ি রেখে ঘুম লাগান। আর সেই গাড়ির বিপদ ডেকে আনে পথচলতি অন্যদের।
এ দিনও দেখা যায় বিভিন্ন মোড়ে পুলিশের পাহারা রয়েছে। তার ফাঁকেই দাঁড়িয়ে আছে লরি, ট্রাক। জেলা পুলিশের কর্তাদের যদিও দাবি, নিয়মিত নজরদারি চালানো হয়। বেচাল দেখলে ধরপাকড়ও হয়। বর্ধমানের আরটিও মহম্মদ আবরার আলম জানান, বাসিন্দাদের পরিবহণ দফতরের উপর রাগ রয়েছে। কিন্তু টোল না দিয়ে গেলে বা বেআইনি কিছু হলে কর্মীদের তো দায়িত্ব পালন করতেই হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy