Advertisement
E-Paper

ফল একই, তবু জয়ের অঙ্ক ভিন্ন

গত পুরভোটে ফল ছিল ১২-৬। এ বারেও তাই। গত ভোটে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট করে বোর্ড গড়েছিল কালনায়। তৃণমূল পেয়েছিল ৭টি আসন আর কংগ্রেস ৫টি। পরে কংগ্রেসের ৫ জনই তৃণমূলে যোগ দেন। ভোটের মুখে আসন দাঁড়ায় ১২-৬। এ বারেও আপাতদৃষ্টিতে ফলটা একই রয়েছে। কিন্তু সত্যিই কি তাই?

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০২
মঙ্গলবার সিপিএম সমর্থকদের উল্লাস। কালনায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

মঙ্গলবার সিপিএম সমর্থকদের উল্লাস। কালনায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

গত পুরভোটে ফল ছিল ১২-৬। এ বারেও তাই।

গত ভোটে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট করে বোর্ড গড়েছিল কালনায়। তৃণমূল পেয়েছিল ৭টি আসন আর কংগ্রেস ৫টি। পরে কংগ্রেসের ৫ জনই তৃণমূলে যোগ দেন। ভোটের মুখে আসন দাঁড়ায় ১২-৬। এ বারেও আপাতদৃষ্টিতে ফলটা একই রয়েছে। কিন্তু সত্যিই কি তাই?

গত বার বামেদের দখলে যে পুরসভাগুলি ছিল এ বার তা বদলেছে। মোট ওয়ার্ড এক থাকলেও দুটি আসন যেমন হাতছাড়া হয়েছে, তেমনই দুটি আসন ছিনিয়েও নিয়েছে বামেরা। গত বার জেতা ৬ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূলের দখলে গিয়েছে, ঘরে এসেছে ৪ ও ৮ নম্বরটি। তাছাড়া ভোটের প্রেক্ষাপটটাও বদলে গিয়েছে আগের বারের তুলনায়।

গত বার যখন পুর নির্বাচন হয়, তখন রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশ, প্রশাসন, ভোট মেশিনারির অনেকটাই যেভাবে শাসকের সঙ্গে রয়েছে বলে দাবি করে বিরোধীরা তখনও তাই ছিল। এ বারেও যেমন তৃণমূলের বিরুদ্ধে লাগাতার সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে বাম-বিজেপি। তখনও সিপিএমের বিরুদ্ধে কমবেশি ছাপ্পা দেওয়ার অভিযোগ উঠত, এ বার তৃণমূলের বিরুদ্ধে আগের রাত থেকেই শহরে বহিরাগত ঢুকিয়ে বুথ দখলের অভিযোগ উঠেছে। একটি ওয়ার্ডে তো শাসকদলের জয়ের ব্যবধান ১২১৯ ভোট। সিপিএমের দাবি, আগের রাতে বাড়ি বাড়ি ঘুরে শুধু হুমকি নয়, ওই ওয়ার্ডের কয়েকজন ভোটারের হাতে ভোটের কালিও লাগিয়ে দেওয়া হয়। ভোট লুঠের অভিযোগ ওঠে, ৫, ৬, ১৩, ১৫-এর মতো বেশ কিছু ওয়ার্ডেও। তারপরেও ১২-৬ একই রয়ে যায়। সিপিএমের কালনা জোনাল কমিটির সদস্য স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ই বলেন, ‘‘১১ নম্বর ওয়ার্ডে ব্যাপক ছাপ্পা মারার দৃশ্য সাধারণ মানুষ দেখেছেন। তা সত্ত্বেও আমরা এই ওয়ার্ডে ৩০ ভোটে জিতেছি। ঠিকঠাক ভোট হলে আরও কিছু ওয়ার্ড আমরা পেতাম।’’ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অঞ্জু করের আবার দাবি, সন্ত্রাস না হলে বামেরাই বোর্ড গড়ত। তৃণমূল নেতারা যদিও দোর গলায় বলছেন, ‘‘মানুষ আমাদের সঙ্গেই আছেন। তাই জোট ছাড়াই ১২টি আসন আমাদের।’’

কিন্তু মানুষ যদি সঙ্গেই থাকবেন তাহলে দুটি ওয়ার্ড ও ধারে গেল কেন? শাসকদলেরই নেতা-কর্মীদের দাবি, ৪ নম্বর ওয়ার্ডটি গত ২৫ বছর ধরে কংগ্রেসের দখলে ছিল। কিন্তু ভোটের মাসখানেক আগে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনন্দ দত্ত তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁকে লড়তে হয় সিপিএমের চেনা বাজি গৌরাঙ্গ গোস্বামীর বিরুদ্ধে। ১১৫ ভোটে হারেন আনন্দবাবু। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী চায়না ঘোষ হারেন ৯ ভোটে। তৃণমূলের দাবি, অন্তর্দলীয় কোন্দলই এর কারণ। তবে শুধু এ দুটি ওয়ার্ডই নয়, আরও কিছু ওয়ার্ডে গোষ্ঠীকোন্দল অনুঘটকের কাজ করেছে বলে তৃণমূলের শহরের এক নেতার দাবি। তিনি বলেন, ‘‘জনসমর্থন যেভাবে থাকার কথা ছিল, তা ছিল না।’’ গত পাঁচ বছর ধরেই বারবার তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। বিরোধীরা বলেন, নেতার থেকেও বেশি কার্যালয় রয়েছে শহরে এবং সারা বছর ধরেই এক গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীকে আঁধারে রেখে নানা কর্মসূচি পালন করে। এর প্রভাব পড়ে পরিষেবামূলক কাজকর্মেও। প্রশ্ন ওঠে, বিদায়ী পুরপ্রধানের হার কী সে কারণেই?

কারণ পুরভোট চেনা নেতাদের একেবারে পাড়ায়, পাড়ায় প্রয়োজনের কাজকর্মের পরীক্ষা। বিশ্বজিৎ কুণ্ডু বারবারই শহরকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ার দাবি করেছেন। জলপ্রকল্প, আরবান হাটের মতো কাজও শুরু করেছেন। কিন্তু দুটির কোনওটাই শেষ হয়নি। সে কারণেই কি রাজ্যে ক্ষমতায় থেকেও কালনায় এগোতে পারল না তৃণমূল— সে প্রশ্নও উঠছে। যদিও হারের পরেও বিশ্বজিৎবাবুর দাবি, ‘‘এমন অনেক কাজ হয়েছে যা বাম জমানায় হয়নি। মানুষের কাছে এর মূল্যায়ণ আশা করেছিলাম।’’ কিন্তু উন্নয়নের ধ্বজা যদি এতই উড়বে তাহলে সন্ত্রাস, বহিরাগতদের দাপট এ সবের অভিযোগ কেন? তৃণমূলেরই উঁচু স্তরের এক জেলা নেতার আক্ষেপ, ‘‘এ সব না করলে ১২টা আসন তো দূর অনেক কম হাতে আসত।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের অবশ্য দাবি, ‘‘কালনার মানুষ আমাদের সঙ্গেই রয়েছে। আসলে সন্ত্রাসের জনক সিপিএমই।’’

kedarnath bhattacharya kalna cpm trinamool TMC municipal election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy