Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
বেহাল শিল্পতালুক / ২

রাস্তা ভাঙা, তবু দিতে হয় টোল

প্রতিশ্রুতি মিলেছে বারবার। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। চার দশকের বেশি পুরনো দুর্গাপুরের ক্ষুদ্র শিল্পতালুকের রাস্তা যান চলাচলের অনুপযুক্ত বহু বছর ধরেই। বাম আমলে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি মিলেছিল। সেই একই আশ্বাস মিলেছে বর্তমান রাজ্য সরকারের কাছ থেকেও। কিন্তু, ফল হয়নি বলে অভিযোগ শিল্পতালুকের নানা সংস্থার কর্তাদের।

দুর্গাপুরে আরআইপি শিল্পতালুকে তোলা নিজস্ব চিত্র।

দুর্গাপুরে আরআইপি শিল্পতালুকে তোলা নিজস্ব চিত্র।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৫ ০১:৪৯
Share: Save:

প্রতিশ্রুতি মিলেছে বারবার। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি।
চার দশকের বেশি পুরনো দুর্গাপুরের ক্ষুদ্র শিল্পতালুকের রাস্তা যান চলাচলের অনুপযুক্ত বহু বছর ধরেই। বাম আমলে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি মিলেছিল। সেই একই আশ্বাস মিলেছে বর্তমান রাজ্য সরকারের কাছ থেকেও। কিন্তু, ফল হয়নি বলে অভিযোগ শিল্পতালুকের নানা সংস্থার কর্তাদের।
লগ্নিকারীদের অভিযোগ, পুরসভা ওই ভাঙাচোরা রাস্তার জন্য ‘টোল’ আদায় করে। অথচ, খানখন্দ ভরাটের ন্যূনতম উদ্যোগ নেই। পুরসভা আবার রাস্তা সংস্কারের দায় চাপিয়েছে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) উপর। এডিডিএ জানায়, রাস্তা সারানোর জন্য কত টাকা দরকার তা সমীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। নগরোন্নয়ন দফতর মঞ্জুর করলেই কাজ শুরু হবে।

মাসখানেক আগেই নতুন লগ্নি টানার জন্য রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র আসানসোলে শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠকে এই অঞ্চলের শিল্পতালুকের পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সোমবার দুর্গাপুরের বিভিন্ন ক্ষুদ্র শিল্পতালুকগুলি ঘুরে দেখা গিয়েছে, খুব দ্রুত সেই কাজ শুরু না করা গেলে বর্তমানের চালু শিল্প সংস্থাগুলিই সমস্যায় পড়বে। সব ক’টি শিল্পতালুকে ঢোকার এবং ভিতরের রাস্তা বর্ষায় ভেঙেচুরে গিয়েছে।

সগড়ভাঙা এলাকায় ১৯৬৮ সালে প্রায় সাড়ে ১২ একর জায়গায় গড়ে ওঠে আরআইপি শিল্পতালুক। প্রায় ৫০টি কারখানা এখনও চালু রয়েছে। ১৯৮০ সালে রাতুড়িয়া-অঙ্গদপুর এলাকায় প্রায় ১৮ একর জমিতে গড়ে ওঠে দুর্গাপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট। প্রায় ৭০টি চালু কারখানা রয়েছে সেখানে। ২০০৮ সালে ৪ একরের কিছু বেশি জায়গা নিয়ে বাঁশকোপায় তৈরি হয় ইপিআইপি শিল্পতালুক। দু’টি কারখানা রয়েছে এখানে। সর্বশেষ ক্ষুদ্র শিল্পতালুকটি গড়ে তোলার উদ্যোগ হয় ২০১০ সালে। প্রায় ২৬ একর জায়গায় গড়ে উঠছে দুর্গাপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ফেজ-২। তবে এখনও কোনও শিল্প সেখানে গড়ে ওঠেনি।

প্রথম তিনটি শিল্পতালুক ঘুরে প্রায় একই ছবি ধরা পড়েছে। রাস্তায় পিচের বালাই নেই। খানাখন্দে ভরে গিয়েছে। খাল বুজিয়ে কোনও রকমে চলার উপযোগী করে তুলতে কারখানা থেকে আকরিক বর্জ্য এনে ফেলা হয়েছে রাস্তায়। তার উপর দিয়েই হেলেদুলে চলেছে মালবোঝাই ভারী লরি ও ট্রাক। যে কোনও মুহূর্তে উল্টে যেতে পারে বলে আশঙ্কায় থাকেন লরি চালকেরা। আরআইপি এলাকায় এক লরিচালক জ্ঞানবন্ত সিংহের কথায়, ‘‘চাকা ও যন্ত্রাংশের ক্ষতি হচ্ছে। খুব সাবধানতার সঙ্গে গাড়ি চালাতে হয়। যে কোনও সময়ে বিপদ হতে পারে।’’

দুর্গাপুরের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদের সংগঠন ‘দুর্গাপুর স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কৃপাল সিংহ জানান, পরিস্থিতি দিন-দিন খারাপ হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, নানা জায়গায় দরবার করেও ফল না পেয়ে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে রাস্তা সারাইয়ের দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে এই সব রাস্তার সে ভাবে সংস্কার হয়নি। গত দু’তিন বছরে তাপ্পিও পড়েনি।’’ সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনে গড়ে চারশোর বেশি লরি ও ট্রাক চলাচল করে। পুরসভা ট্রাক পিছু ৬০-৮০ টাকা টোল নেয়। কৃপালবাবু বলেন, ‘‘শেষ ভরসা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। দেখি ফল হয় কি না।’’

এডিডিএ-র তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, শিল্পতালুকগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য কী কী করতে হবে, তার বিশদ রিপোর্ট তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। নগরোন্নয়ন দফতর পরিকল্পনা মঞ্জুর করলেই কাজ শুরু হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE