প্রতীকী ছবি।
খুচরো না দিতে পারলে এক সময়ে ক্রেতাকে দু’চার কথা শুনিয়ে দিতেন দোকানদারেরা। বিল মেটানোর সময়ে অনেক দফতরের কর্মীই দাবি করতেন, খুচরো-সহ নির্দিষ্ট টাকা দিতে হবে উপভোক্তাকে। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টে গিয়েছে কিছু দিন ধরেই। কয়েন নিতে নারাজ ব্যবসায়ীরা। এমনকী, ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে সরকারি দফতরের কাউন্টার থেকেও। আইন-কানুনের কথা বলেও লাভ হচ্ছে না, অভিযোগ ক্রেতাদের।
দশ টাকার কয়েন নিতে অস্বীকার করা শুরু হয়ে বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে দশ টাকার কয়েন নিয়ে রটনাকে গুজব বলে ঘোষণার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। সমস্যা তৈরি হয়েছে অন্য কয়েন নিয়েও। দু’টাকা বা পাঁচ টাকা তবু নিয়ে নিচ্ছেন দোকানদারেরা। কিন্তু তার থেকে বেশি ভাড়া বা দাম কয়েনে দিতে গেলেই অশান্তির শুরু। বচসা শুরু হয়ে যাচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতার।
কয়েন নেওয়ার ক্ষেত্রে কী সমস্যা? বেনাচিতির ব্যবসায়ী অনন্ত বসুর বক্তব্য, ‘‘কয়েনের পাহাড় জমেছে ঘরে। ব্যাঙ্কে জমা দিতে গেলে নেয় না। আমি নিয়ে কী করব? তাই আর নতুন করে ক্রেতাদের কাছে কয়েন নিতে চাইছি না।’’ বেনাচিতিরই আর এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অমর মণ্ডল আবার বলেন, ‘‘অনেকেই বলছে, ১০ টাকা ও ছোট ১ টাকার অনেক কয়েন জাল। সত্যি-মিথ্যে জানি না। আমি ঝুঁকি নিতে চাই না।’’ ফলে, বিপাকে পড়ছেন ক্রেতারা। তাঁদের দাবি, বাজারে গেলে কেনাকেটার পরে পকেটে কয়েন জমছে। খরচ করার সময়ে নানা দোকানে গিয়ে হোঁচট খেতে হচ্ছে। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘পকেটে বেশি কয়েন থাকলে মনে হয় তা যেন বেআইনি জিনিস!’’
কয়েন নিতে অস্বীকার করছেন সরকারি কর্মীও। সম্প্রতি বেনাচিতির বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরের অফিসে বিল জমা দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন চিরঞ্জিত ধীবর নামে এক গ্রাহক। তাঁর দাবি, ১২৯৫ টাকার বিলের ২০ টাকা ছিল খুচরো দিতে চেয়েছিলেন। দফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মী তা নিতে রাজি হননি। প্রতিবাদ করলে মুখের উপরে কাউন্টার বন্ধ করে দেন তিনি। মোবাইলে পুরো ঘটনাটির ভিডিও তুলে মহকুমাশাসককে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন চিরঞ্জিতবাবু। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘এমনটা কেউ করতে পারেন না। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে বারবার জানানো হচ্ছে, কোনও কয়েন অচল নয়। ওই কর্মীকে শো-কজ করা হয়েছে।’’
কেন এই পরিস্থিতি? ব্যাঙ্কগুলিতে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, নোট গোনার যন্ত্র আছে ব্যাঙ্কে। ফলে, গোনা সহজ। কিন্তু কয়েন হাতে গুণতে হবে। হাজার-হাজার কয়েন গুণবে কে? একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আধিকারিক বলেন, ‘‘বাজার থেকে কয়েন আসছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকেও কয়েন দিচ্ছে। ভল্ট ভরে গিয়েছে কয়েনে। কিন্তু কর্মী কম। গোনার ঝামেলা, রাখার সমস্যা। তাই এই পরিস্থিতি।’’ তবে তিনি জানান, আইনত কোনও ব্যাঙ্ক কয়েন না নেওয়ার কথা বলতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে নতুন ভাবে প্রচারে নামার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে, জানিয়েছেন প্রশাসনের আধিকারিকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy