কলকাতায় তৃণমূলের সমাবেশ উপলক্ষে পশ্চিম বর্ধমানের বিভিন্ন রুট থেকেই বাস তুলে নেওয়া শুরু হয়েছিল রবিবার থেকে। সোমবার সে সমস্যা আরও বাড়বে, আন্দাজ ছিলই। পথে বেরিয়ে এ দিন হয়রান হতে হল অনেককেই। নানা রুটেই বাসের সংখ্যা ছিল অর্ধেক বা তারও কম। তবে এ দিন যাত্রীর সংখ্যাও কম ছিল বলে জানান বাসকর্মীরা।
বাস, গাড়ির পাশাপাশি ট্রেনেও বহু তৃণমূল কর্মী-সমর্থক এ দিন সকালে কলকাতা রওনা দেন। অগ্নিবীণা ও কোলফিল্ড এক্সপ্রেসে অনেকে সমাবেশে যান। আসানসোল পুরসভার ৬ নম্বর বরো চেয়ারম্যান তথা ৮৪ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি দেবাশিস সরকার তাঁর নিজের ওয়ার্ডের সমর্থকদের নিয়ে বাস চালিয়ে ধর্মতলা যাত্রার সূচনা করেন। দুর্গাপুর স্টেশন বাসস্ট্যান্ড থেকে বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ইত্যাদি জেলায় যাতায়াতের জন্য প্রতিদিন গড়ে ১৮০-২০০ বাস চলাচল করে। রবিবার সকাল থেকেই অনেক বাস তুলে নেওয়া শুরু হয়। সে দিন ১৩৮টি বাস চলেছিল। সোমবার তা নেমে দাঁড়ায় প্রায় ৬০টিতে। ফলে, যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। তবে আগে থেকে বিষয়টি জানা থাকায়, একান্ত প্রয়োজন ছাড়া অনেকেই পথে বেরোননি।
কাঁকসায় এক দিকে বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ যাওয়ার রাজ্য সড়ক এবং অন্য দিকে, আসানসোল ও কলকাতা যাওয়ার জাতীয় সড়ক— দুই রাস্তাতেই সকাল থেকে বাস ছিল কম। পানাগড়ের দার্জিলিং মোড় এলাকায় স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিলেন মোহিত ঘোষ নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘‘আসানসোল যাওয়ার জন্য বেরিয়েছি। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েও বাসের দেখা পেলাম না।’’ এ দিন কলকাতামুখী পণ্যবাহী যানবাহন আটকে দেওয়া হয়। সে দিকের সার্ভিস রোডে দুর্গাপুরের খয়রাসোল থেকে মুচিপাড়া পর্যন্ত ট্রাকের সারি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
রানিগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, রানিগঞ্জ থেকে বাঁকুড়া দৈনিক পঞ্চাশের বেশি বাস চলে। কিছু বাস পুরুলিয়া যায়। এ দিন পুরুলিয়ার কোনও বাস চলেনি। বাঁকুড়া রুটে সারা দিনে দু’টি বাস চলেছে। আসানসোল থেকে বার্নপুর রুটে দুপুর ১২টার পরে সব বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। টোটো ও অটো ভরসা হয়ে দাঁড়ায় যাত্রীদের কাছে। আসানসোল উত্তর হিলভিউয়ের বাসিন্দা বিশ্বনাথ সিংহ জানান, স্টপেজ অনুযায়ী ভাড়ার ভিত্তিতে টোটো, অটো প্রতিদিনই চলে। ভাড়াও প্রায় বাসের সমান। এ দিন ভাড়া বেশি দিতে হয়নি। তবে টোটোয় চার জনের জায়গায় ছ’জন, অটোয় আট জন পর্যন্ত যাত্রী তোলা হয়েছে।
আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ রায় জানান, আসানসোল-রানিগঞ্জ, রানিগঞ্জ থেকে জামুড়িয়া, বেনাচিতি, পাণ্ডবেশ্বর, আসানসোল-বরাকর, সব রুটে সকাল থেকে প্রায় অর্ধেক মিনিবাস চলেছে। কিন্তু যাত্রীর সংখ্যা খুব কম ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘হয়তো যাত্রীরা দেরিতে পৌঁছেছেন। তবে কাউকে গন্তব্যে না পৌঁছনোর মতো অসুবিধায় পড়তে হয়নি।’’ আসানসোল মহকুমা মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাজু অহলুওয়ালিয়া জানান, বেশির ভাগ বড় ভাগ নেওয়া হয়েছে। মিনিবাস সব রুটে চলেছে। যাত্রী কম থাকায়, দুপুরের দিকে বেশ কিছু বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁর দাবি, ‘‘সাধারণ মানুষ সচেতন ভাবেই এ দিন তেমন বাইরে বেরোননি।’’
সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল মানেই নিজের স্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহার। বিরোধীদের বন্ধ ব্যর্থ করার জন্য বেসরকারি বাস না নামার প্রভাব আটকাতে রাস্তায় সরকারি বাস নামানো হয়। এ দিন সরকারি বাস রাস্তায় নামেনি।’’ বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্যেরও দাবি, ‘‘বিজেপির সমাবেশে জনসমাগম আটকাতে বাস মালিকদের ভয় দেখিয়ে বিজেপিকে ভাড়া দিতে দেওয়া হয় না। বিজেপি কর্মীদের ট্রেন বা গাড়ি ভাড়া করে যেতে হয়। তবু বিজেপির থেকে বড় জনসমাবেশ তৃণমূল করতে পারছে না!’’
তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের পাল্টা দাবি, ‘‘যে কোনও দল সমাবেশ করলে, বাস নেওয়াই রেওয়াজ। তাতে অসুবিধা হয় না। কারণ, মানুষ অনেক আগে থেকে রাজনৈতিক সমাবেশের কথা জানতে পারেন। তাই অনেকেই বাইরে বেরোন না। এ দিনও তাই হয়েছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)