আগেও নানা অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। কোনও ক্ষেত্রেই তা থানা-পুলিশ অবধি না গড়ালেও, সরানো হয়েছিল অন্য বিভাগে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক রোগিণীর মেয়েকে যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত বিশ্বজিৎ দে সম্পর্কে হাসপাতাল সূত্রে মিলছে এমনই তথ্য। মহিলা ওয়ার্ডে কেন পুরুষকর্মী কাজ করছিলেন, সে প্রশ্নও উঠেছে। হাসপাতালেঠিকাকর্মীদের ‘রমরমা’ নিয়ে সরব হয়েছে নানা পক্ষ।
রবিবার বিকেলে এই হাসপাতালের বক্ষ বিভাগের মহিলা ওয়ার্ডে ঠিকাদার নিযুক্ত ওয়ার্ডবয় বিশ্বজিৎ এক রোগিণীর মেয়েকে যৌন হেনস্থা করে বলে অভিযোগ। গ্রেফতারের পরে, দু’দিনের পুলিশ হেফাজতে রয়েছে সে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, নতুন ভবনের তিন তলায় ওই বিভাগে দক্ষিণ দিকের শেষ দু’টি ঘর মহিলাদের জন্য বরাদ্দ। একটি ঘরে সংক্রামক রোগীরা থাকেন। সেখানে একাই ভর্তি ছিলেন এক মহিলা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর মেয়ে। সেখানেই ঘটনাটি ঘটে বলে অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সাল থেকে হাসপাতালে কাজ করে বিশ্বজিৎ। তার পরিবারের একাধিক সদস্য হাসপাতালের ঠিকাকর্মী। মঙ্গলবার বর্ধমান শহরের বাবুরবাগে ধৃতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে তালা ঝুলছে। পড়শিদের দাবি, নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা বিশ্বজিতের। সে তৃণমূল সমর্থক বলে পরিচিত। তার দু’টি বিয়ে। দ্বিতীয় বিয়ের পরে আর বাবুরবাগের বাড়িতে থাকে না সে। তার বাবা, হাসপাতালেরই ঠিকাকর্মী প্রশান্ত দে-র দাবি, “আমার সঙ্গেও ছেলের যোগাযোগ নেই। তবে যে অভিযোগ উঠেছে, তার সবটা ঠিক নয় বলে শুনেছি। যদি দোষ করে থাকে, শাস্তি হবে।”
হাসপাতালের কর্মীদের একাংশের দাবি, এর আগেও বিশ্বজিতের বিরুদ্ধে হাসপাতালে এক মহিলাকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল। হাসপাতালের গুদাম থেকে ওষুধ পাচারের অভিযোগেও নাম জড়ায় তার। কয়েক মাস আগে এক চিকিৎসকের সঙ্গে অভব্য আচরণের অভিযোগ ওঠার পরে, তাকে জরুরি বিভাগ থেকে বক্ষ বিভাগে স্থানান্তর করা হয়।
সূত্রের খবর, এই ঘটনার পরে হাসপাতালে নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে মহিলা ওয়ার্ডে পুরুষ কর্মীর কাজ করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, অক্সিজেন সিলিন্ডার তোলা-সহ থেকে নানা কায়িক পরিশ্রমের জন্য পুরুষ কর্মীদের মহিলা ওয়ার্ডে পাঠাতে হয়। হাসপাতালের সুপার তাপস ঘোষ বলেন, “মহিলা ওয়ার্ডে পুরুষ কর্মীরা কাজ করার সময়ে, সঙ্গে মহিলা কর্মী রাখার কথা ভাবা হচ্ছে।” এ ছাড়া, ঠিকাকর্মী ও অস্থায়ী কর্মীদের বিষয়ে পুলিশি যাচাই, প্রত্যেকের তথ্য রাখা, পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ ও কাউন্সেলিং করানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান।
বিজেপির বর্ধমান-দুর্গাপুর সাংগঠনিক জেলার মুখপাত্র সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “অভিযুক্তের মাথায় নিশ্চিত ভাবে তৃণমূলের হাত রয়েছে। তা না হলে এত সাহস পায় কী ভাবে!’’ জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল প্রামাণিক যদিও বলেন, “ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)