Advertisement
E-Paper

পুর-মদতে বেআইনি নির্মাণের নালিশ

অবৈধ নির্মাণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে সামনে এসে গেল তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। কাটোয়ার নবনির্বাচিত তৃণমূল বিধায়ক দুষলেন পুরসভাকে। পুরপ্রধান যদিও অভিযোগের কথা স্বীকার করেননি।

সুচন্দ্রা দে

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৬ ০০:৫৭
কাটোয়া সার্কাস ময়দান এলাকার এই নির্মাণ নিয়েই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র।

কাটোয়া সার্কাস ময়দান এলাকার এই নির্মাণ নিয়েই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র।

অবৈধ নির্মাণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে সামনে এসে গেল তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। কাটোয়ার নবনির্বাচিত তৃণমূল বিধায়ক দুষলেন পুরসভাকে। পুরপ্রধান যদিও অভিযোগের কথা স্বীকার করেননি।

বেশ কয়েক মাস ধরে প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়েই একাধিক বেআইনি বহুতল নির্মাণের কাজ চলছে কাটোয়ার বিভিন্ন এলাকায়— এমনই অভিযোগ করেছেন বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর আরও অভিযোগ, বেআইনি নির্মানের পিছনে পুরসভার প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে। নানা ওয়ার্ডের বাসিন্দারাও কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে অবৈধ নির্মাণে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছেন। যদিও কোনও অভিযোগ মানতে চাননি কাটোয়ার পুরপ্রধান অমর রাম। তাঁর দাবি, বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দলের কেউ এর সঙ্গে জড়িত নন।

দু’দিন আগেই বর্ধমান জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ গোলাম জার্জিসের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ তোলেন দলেরই সংখ্যলঘু সেলের সভাপতি শেখ সুরেমান আলি। মঙ্গলবার কর্মাধ্যক্ষ পদ থেকে সরিয়েও দেওয়া হয় গোলাম জার্জিসকে। জেলার এক দিকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দিতে না দিতেই কাটোয়ায় দ্বন্দ্বের খবর প্রকাশ্যে এসে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে দল। যদিও জেলা স্তরের নেতারা কেউই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাননি।

গত ২১শে মে কাটোয়ার শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা বেআইনি নির্মাণে মদত দেওয়ার অভিযোগ করেন ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শ্যামল ঠাকুরের বিরুদ্ধে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নির্মাণের পরিকল্পনা না মেনেই শ্যামল ঠাকুর ও তাঁর স্ত্রী দিপালীদেবী সার্কাস ময়দানে একটি বাণিজ্যিক বহুতল নির্মাণ করছেন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বেআইনি ও বিপজ্জনক ভাবে ওই নির্মাণ চলছে বলেও তাঁদের অভিযোগ। নির্মাণ বন্ধ না হলে যে কোনও দিন বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলেও তাঁদের দাবি। কাটোয়া স্টেশন বাজার এলাকার আশীর্বাদ লজ লাগোয়া ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ব্যবসায়ী স্নেহাংশু ভট্টাচার্যেরও অভিযোগ, তাঁর দোকানের পাশে আধকাঠা জায়গার উপর বেআইনি ভাবে তিনতলা বাড়ি নির্মাণ করছেন তাঁরই প্রতিবেশী ব্রজগোপাল পান। স্নেহাংশুবাবু ও তাঁর স্ত্রী বিদিশাদেবী ব্রজগোপালবাবুর বিরুদ্ধে থানায় ও পুরসভায় অভিযোগও জানিয়েছেন। পুরসভার তরফে গত ১৩ই মে কাজ বন্ধের নোটিসও দেওয়া হয়। তার দিন তিনের পরে কাটোয়া আদালতে ১৪৪ ধারায় আবেদন জানালে তা মঞ্জুরও হয়ে যায়। কিন্তু তারপরেও পুরসভার নির্দেশ না মেনেই নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে তাঁদের দাবি। পুরপ্রধানের দিকে সরাসরি অভিযোগের আঙুল তুলে বিদিশাদেবী বলেন, ‘‘রাত ১২টার সময় ঢালাই হয়ে যাচ্ছে। বারবার পুরপ্রধানের নজরে আনা হলেও তিনি কোনও দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। থানাতেও গিয়েছি। কিন্তু কোন সুফল পাইনি।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমার সন্দেহ এই দুর্নীতির সাথে পুরপ্রধান নিজে যুক্ত, নাহলে তাঁর আদেশ অমান্য করে নির্মাণ কাজ চালানোর সাহস কি করে হয়?’’ তবে অভিযুক্ত ব্রজগোপালবাবুর ছেলে অরূপজ্যোতি পান বলেন, ‘‘আমরা এই বিষয়ে আইনি সাহায্য নেব।’’

বিদিশাদেবীর মতোই ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের জাকির হোসেন, চিরঞ্জিত পণ্ডিত, রঞ্জিত বিশ্বাস, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের গৌরদাস বণিক, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বিনয় দাস, ১ নম্বর ওয়ার্ডের অধীরকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়দেরও অভিযোগ, বারেবারে জানানোর পরেও বেআইনি বহুতল নির্মাণ বন্ধ হয়নি।

বিধায়ক রবিবাবুও কাটোয়া স্টেশন বাজারে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের উল্টো দিকেই এ রকম একটি বহুতল নির্মাণের অভিযোগ করেছেন। সঙ্গে পুরসভার গাফিলতি ও কোনও দৃঢ় পদক্ষেপ না নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘কাটোয়া শহরে অনেকদিন ধরেই বহু বেআইনি বহুতল নির্মাণ ও পুকুর ভরাটের কাজ চলছে। পুরসভাকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। শুধু নোটিসটুকু পাঠিয়েই কাজ শেষ করছে পুরসভা। তাতে আখেরে কোনও লাভ হচ্ছে না।’’ পুরসভা দুর্নীতিতে ভরে গিয়েছে বলেও তাঁর অভিযোগ।

পুরপ্রধান অমর রামের পাল্টা দাবি, ‘‘কিছু অবৈধ নির্মাণের খবর আমার কানে এসেছে। আমি কোনও দুর্নীতি মেনে নেব না। এই ব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে। নোটিস পাঠানো হয়েছে। নির্মাণকারীদের হিয়ারিং-এ ডাকা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তাঁদের বক্তব্যে অসঙ্গতি থাকলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে রবিবাবু কি অভিযোগ করেছেন তা জানা নেই।’’ পুরবোর্ডের কেউ এ কাজে জড়িত নন, বরং বেপরোয়া ভাবে কিছু অসাধু লোক এই কাজ করছে বলেও তাঁর দাবি।

TMC Municipality Buildings
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy