ঘটনা ১: ইদ উপলক্ষে হুগলির বাঁশবেড়িয়ায় বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য শুক্রবার মেমারি স্টেশনে ট্রেন ধরতে এসেছিলেন জামালপুরের শুঁড়ে কালনার বাসিন্দা এক মহিলা। সঙ্গে ছিলেন স্বামী ও দুই পুত্র। মেমারি স্টেশনের কাছে রেললাইন পারাপার করার সময়ে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় মহিলার।
ঘটনা ২: রেললাইন পারাপার করতে গিয়ে এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল দুই মহিলার। গত ২৯ ডিসেম্বর রবিবার বিকেলে দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল মেমারি স্টেশনে। ঘঠনার পরে বেশ কিছুক্ষণ ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছিল। রেল পুলিশ জানায়, মৃত বাঁকুড়ার রানিবাঁধের গোড়াবাড়ির পাখি ভুঁইয়া (৪০) ও তাঁর বোন ঝর্না ভুঁইয়া (৩৮) মেমারি থেকে হুগলির খন্যান যাওয়ার জন্য ট্রেন ধরতে এসেছিলেন। ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে লাইন পেরোতে গিয়ে বিপদের মুখে পড়েন। ঘটনাস্থলেই দু’জনের মৃত্যু হয়।
ঘটনা ৩: গত মাসে লাইন পারাপার করতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় মেমারির সুলতানপুরের দেবদীপ হাজরার।
ঘটনা ৪: বছর খানেক আগে একই ভাবে লাইন পারাপার করতে গিয়ে মালগাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় বীরভূমের এক বৃদ্ধার।
নিত্যযাত্রীদের অনেকেই বলছেন, আপ ও ডাউন— দু’দিকেই ট্রেন ঢোকার সময়েও লাইন টপকে প্ল্যাটফর্মে উঠতে দেখা যায় অনেককে। লাইনের ধারে ফলের দোকানের সামনে হোঁচট খান অনেকে। এমনকি, দ্রুত গতিতে ট্রেন আসতে দেখলে, কিংবা ট্রেন ছাড়ার মুহূর্তেও লাইন পারাপার করতে দেখা যায়। এই অভ্যাস বদলের জন্য রেলিং দেওয়া হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে, ট্রেন ধরার তাড়ায় সেই রেলিং-ও টপকে যাচ্ছেন যাত্রীরা।
বর্ধমান-হাওড়া মেন লাইনের মেমারি স্টেশনে এই ছবি রোজই দেখা যায়। ফুট ওভারব্রিজ থাকলেও লাইন টপকানোই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে, ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যুমিছিল চলছেই। রেলের কর্তাদের দাবি, লাইন পারাপার না করে ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারের জন্য নিয়মিত প্রচার চালানো হয়। তাতেও যাত্রীরা সচেতন হন না। জিআরপি সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করেছে। আরপিএফ টহল দেয়। তবুও যাত্রীরা বেপরোয়া। জিআরপির এক আধিকারিক বলেন, “ফুট ওভারব্রিজ গিয়েছে রেলের পুরনো টিকিট কাউন্টারের পাশ দিয়ে। ঠিক তার পাশ দিয়েই হেঁটে যাত্রীরা লাইন পারাপার করেন। ওই রাস্তা বন্ধ না করলে যাত্রীদের ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারের অভ্যাস তৈরি হবে না।’’
যাত্রীদের একাংশের যদিও দাবি, সন্ধ্যার পরে ফুট ওভারব্রিজ কিছু যুবকের দখলে চলে যায়। সেই কারণে ওই পথ এড়িয়ে যান অনেকে। বয়স্কদের ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে অসুবিধা হয়। তা ছাড়া, প্লাটফর্ম শেষ হচ্ছে ব্যান্ডেলের দিকে। সেই দিক দিয়ে শহরে যাতায়াত অনেক বেশি সুবিধাজনক। আর তা করতে গিয়েই দুর্ঘটনার মুখে পড়ছেন অনেকে।
রেলের এক আধিকারিক বলেন, “অনেক জায়গায় ফুট ওভারব্রিজে ভিড় থাকায় যাত্রীরা লাইন পারাপার করেন। কিন্তু মেমারিতে ফুট ওভারব্রিজ কেউ ব্যবহারই করতে চান না। অনেক প্রচার হয়েছে। নানা ব্যবস্থা নেওয়া হলেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)