E-Paper

ট্যাব নিয়েও পরীক্ষায় বসছে না অনেক পড়ুয়া

করোনা সংক্রমণের সময় থেকে ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে রাজ্যের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ছাত্রছাত্রীদের ট্যাব বা মোবাইল কেনার জন্য অর্থ দেওয়া শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:০০
কাটোয়ার স্কুলে বসল সিসি ক্যামেরা।

কাটোয়ার স্কুলে বসল সিসি ক্যামেরা। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

ট্যাব কেনার টাকা নিয়েছে, কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে না প্রায় ১,৮৫১ জন। ওই পড়ুয়াদের ‘হদিস’ পেতেও বেগ পেতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের। আজ, শুক্রবার থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। ট্যাব নেওয়ার পরেও কেন ওই পড়ুয়ারা উচ্চ মাধ্যমিকে বসছে না, প্রধান শিক্ষকদের তার কারণ খুঁজে বার করতে বলেছেন জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের কর্তারা।

জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া ৩৮,৮৯৩ জন পড়ুয়া ট্যাব নিয়েছে। সেখানে পরীক্ষায় বসছে ৩৭,০৪২ জন। গত জানুয়ারিতেই জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর একটি সমীক্ষার পরে ট্যাব নেওয়া পড়ুয়াদের পরীক্ষায় বসাতে উদ্যোগী হয়েছিল। সে জন্য বৃহস্পতিবারও ৫৫ জন পড়ুয়াকে জরুরি ভিত্তিতে অ্যাডমিট কার্ড দিয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক সংসদ। স্কুল শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, “জানুয়ারি মাসে একটি সমীক্ষা-তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। তার ভিত্তিতে কেন পড়ুয়ারা পরীক্ষায় বসল না, প্রধান শিক্ষকদের জানাতে বলা হয়েছে।” জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছর ৪৩,৮৩৪ জন ট্যাব নিয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষায় বসেছিল ৪০,১৪৭ জন। ২০২২ সালে ৩৯,৪৩৯ জন ট্যাব নেওয়া পড়ুয়ায় সবাই পরীক্ষার অ্যাডমিট নিয়েছিল। প্রধান শিক্ষকদের একাংশের দাবি, সে বছর করোনার কারণে ‘হোম সেন্টারে’ পরীক্ষা হয়েছিল। সে জন্য সব পড়ুয়াই উচ্চ মাধ্যমিকে বসার প্রস্তুতি নিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা কেন্দ্রে সবাই আসেনি।

করোনা সংক্রমণের সময় থেকে ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে রাজ্যের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ছাত্রছাত্রীদের ট্যাব বা মোবাইল কেনার জন্য অর্থ দেওয়া শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা-কাল কেটে গেলেও, সেই প্রকল্প চলছে। সামনের বছরে একাদশ শ্রেণিতে উঠলেই ট্যাব দেওয়া হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী বাজেটে ঘোষণা করেছেন। রাজ্য সরকারের যুক্তি, ছাত্রছাত্রীরা যাতে অনলাইনে ঠিক ভাবে পড়াশোনা করতে পারে, সে জন্যই এই প্রকল্প। কিন্তু শেষ দু’বছরে শিক্ষা দফতর দেখছে, ট্যাব বা মোবাইল কেনার অর্থ পাওয়ার পরেও বহু ছাত্রছাত্রী উচ্চ মাধ্যমিকে বসছে না। দফতরের নজরে ওই পড়ুয়ারা ‘স্কুলছুট’ গণ্য হচ্ছে।

‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর জেলা সভাপতি রূপক রায় বলেন, “দ্বাদশ শ্রেণিতে ওঠার পরে অনেক ছেলেমেয়েই নানা কাজে যুক্ত হয়ে যায়। অনেকে আবার কারিগরি শিক্ষাতেও ভর্তি হয়। তবে তারা ট্যাবের জন্য স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। ট্যাব পাওয়ার পরে আর স্কুলে আসে না।” বিজেপি প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনের নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র মনে করেন, “করোনা-কালে অনলাইনে পড়াশোনার জন্য ট্যাব বা মোবাইল আবশ্যিক হয়ে পড়েছিল। তখন সরকারি সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল। এখন পরিস্থিতি বদলেছে। অফলাইনে পড়াশোনা হচ্ছে। সেখানে ট্যাব বা মোবাইল দিয়ে পড়া-বিমুখ করে তোলা হচ্ছে। তা ছাড়া, ট্যাব পাইয়ে দেওয়া রাজনীতির অঙ্গও হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি তপন দাসের পাল্টা দাবি, “সব সময় শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে না দেখা উচিত বলে আমরা মনে করি। হয়তো ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্প একটি বিশেষ সময়ের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল, কিন্তু আচমকা তা বন্ধ করে দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। করোনা পরবর্তী সময়ে পড়াশোনা অনেক বেশি প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে গিয়েছে।” উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অমিতকুমার ঘোষেরও মত, “কোনও গরিব এবং প্রান্তিক পরিবারের ছেলেমেয়ে, যাদের মোবাইল বা ট্যাব কেনার পয়সা নেই, তারা সরকারি অর্থে মোবাইল বা ট্যাব কিনে বড় পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারবে। প্রযুক্তিই তাকে সেই জায়গা করে দেবে। বিষয়টিকে এ ভাবে দেখা উচিত।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy