Advertisement
E-Paper

থ্যালাসেমিয়া নিয়েই অন্যদের জন্য লড়ছেন ভাই-বোন

বছর খানেক আগে বাবা-মা মারা গিয়েছেন। পরিবারের আরও চার জনকে হারিয়েছেন তাঁরা। সাংসারিক অভাবও বেড়েছে।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:৫৯
শিবিরে সবার খেয়াল রাখছেন বিনয় ও মীরা। নিজস্ব চিত্র

শিবিরে সবার খেয়াল রাখছেন বিনয় ও মীরা। নিজস্ব চিত্র

জন্মের পর থেকেই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত দুই ভাই-বোন। ৩০ বছরেও সে লড়াই থামেনি। তবে লড়াইটা শুধু নিজেদের জন্য নয়, ওই এলাকায় থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত আরও বহু ছেলেমেয়ের জন্যও রক্ত সংগ্রহ করেন মীরা ও বিনয় মোদক।

বছর খানেক আগে বাবা-মা মারা গিয়েছেন। পরিবারের আরও চার জনকে হারিয়েছেন তাঁরা। সাংসারিক অভাবও বেড়েছে। তবু অভাব পিছুটান নয়, বরং লড়াইয়ের ইন্ধন জুগিয়েছে তাঁদের।

তাঁতের এলাকা ধাত্রীগ্রামের পাকা রাস্তা থেকে একটি সরু পথ ধরে কিছুটা গেলেই গ্রামকালনা। গ্রামের বকুলতলায় একটি মন্দিরে সোমবার বসেছিল এই রক্তদান শিবির। সকাল থেকেই তা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন মীরা ও বিনয়। কখনও রক্ত দানের সময়ে দাতাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দেখা যায় বছর তিরিশের মীরাকে। আবার কখনও রক্তদাতাদের দুধ দিতে দেখা যায় বছর আটাশের বিনয়কে। মন্দির থেকে কিছুটা দূরে রঙিন কাপড় দিয়ে ঢাকা একটি প্যান্ডেলে রক্তদাতা, সংগ্রহকারীদের জন্য আয়োজন ছিল খাবারের। এলাকার মানুষজনও পাশে দাঁড়িয়েছেন ওই দুজনের।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জন্মের পর থেকে দুই ভাইবোন থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। বর্তমানে মাসে দুই থেকে তিন বার রক্তের প্রয়োজন হয় তাঁদের। ১৭ বছর আগে মীরা, বিনয়ের বাবা উৎপলকুমার মোদক এই রক্তদান শিবির শুরু করেছিলেন। তার পর থেকে চলছে সেটি। ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর উৎপলবাবু মারা যান। দুই পিসি আভা এবং বিভা মোদকও মারা যান। ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মারা যান মীরা, বিনয়ের মা সুপ্রিয়া মোদকও। চার জনকে হারিয়ে মানসিক ভাবে কিছুটা ভেঙে পড়েন ভাইবোন। অর্থকষ্টও ছিল। হার মানেননি তাঁরা।

প্রতিবেশীরা জানান, শোক কাটিয়ে নিজেরই রক্তদান শিবির করবেন বলে ঠিক করেন মীরা, বিনয়। এ দিন প্রায় ৬০ জন রক্ত দান করেন সেখানে। বিনয় জানান, মীরা কালনা শহরে একটি পরীক্ষাগারের কর্মী। আর তিনি একটি স্টুডিয়োয় কাজ করেন। দুজনের স্বল্প আয় আর পিসির আর্থিক সাহায্যে শিবিরটি করা হয়। ‘‘কষ্ট হলেও শিবির চালিয়ে যাব’’, দাবি বিনয়ের।

জানা গিয়েছে, শিবিরে মাইক দিয়ে সাহায্য করেছেন বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়। প্রচারের জন্য নিজের টোটো দেন বাপন সাধুখাঁ। মীরার কথায়, ‘‘আমাদের মতো থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের জন্য রক্ত যে কী, তা জানি। যত বাধাই আসুক, শিবির করব আমরা।’’ বর্ধমান শহর থেকে ওই শিবিরে রক্ত দিতে এসেছিলেন পার্থ সাহা। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা দারুন কাজ করছেন। পরের বারও রক্ত দিতে আসার ইচ্ছে রইল।’’ অভিজিৎ বসাক, তারক সাধুখাঁ, অমিত মুখোপাধ্যায়, চঞ্চল ঘোষ, প্রবীর দাসেরাও জানান, এমন কাজ আরও অনেক মানুষকে ভাবাবে। কালনা মহকুমা হাসপাতালের প্রাক্তন সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বরাই বলেন, ‘‘ওঁদের জন্য কোনও প্রশংসা যথেষ্ট নয়।’’

Thalassemia Kalna
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy