E-Paper

মুখ্যমন্ত্রীর উপরে আস্থা: সিদ্দিকুল্লা

মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আহমেদ হোসেন শেখের গোষ্ঠীর সঙ্গে মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠদের সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছিল।

সুদিন মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৫ ০৬:৫৮
সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী।

সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।

গ্রন্থাগারমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর গাড়িতে হামলার ঘটনায় তেতে রয়েছে মন্তেশ্বর। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ ঘিরে রাজ্যের শাসক দলের অন্দরের চোরাস্রোত ক্রমশ বেড়েই চলেছে।

হামলার পরে সিদ্দিকুল্লা হুঙ্কার দিয়েছিলেন, শীর্ষ নেতৃত্ব ব্যবস্থা না নিলে তিনি পথে নামবেন। প্রয়োজনে দলও ছাড়তে পারেন। শনিবার সুর কিছুটা নরম করে মন্ত্রী বলেন, ‘‘দলের বিরুদ্ধে লড়াই নয়। কোনও মিছিল নয়। মুখ্যমন্ত্রীর উপরে আস্থা রেখেছি। উনি নিজে আমাকে ফোন করেছেন। সমস্ত অভিযোগ ফাইলবন্দি করে ওঁকে দিতে বলেছেন।’’ শুক্রবার জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দের (সিদ্দিকুল্লা যে সংগঠনের অন্যতম শীর্ষনেতা) কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। বিভিন্ন জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক-সহ ২০ জন পদাধিকারী উপস্থিত ছিলেন সেখানে। সিদ্দিকুল্লা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। উনি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’’ দলের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, দলের উপরে চাপ তৈরি করতেই মন্ত্রী ওই সংগঠনকে ব্যবহার করতে চাইছেন। মন্ত্রী অবশ্য তা মানতে চাননি। এ দিন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘যা হয়েছে তা গুন্ডামি। তৃণমূল এ সব সহ্য করবে না। কড়া পদক্ষেপ হবে।’’ বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের যত বদরক্ত আছে তা বার করতে গেলে পুরো বডিটাই শেষ হয়ে যাবে।’’

মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আহমেদ হোসেন শেখের গোষ্ঠীর সঙ্গে মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠদের সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছিল। হামলার ঘটনার জন্য সরাসরি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে দায়ী করেন সিদ্দিকুল্লা। আহমেদের পাল্টা, ‘‘উনি মঙ্গলকোটে অশান্তি পাকিয়েছেন। মন্তেশ্বরে এসেও সেই কাজ করছেন। মুর্শিদাবাদে অশান্তি লাগানোর মূলে রয়েছেন মন্ত্রীর ভাইয়েরা। ওয়াকফ আন্দোলনের নামে মুসলিমদের উনি বিভ্রান্ত করছেন, বোকা বানাচ্ছেন, ধোঁকা দিচ্ছেন। এই কারণে বিভিন্ন জায়গায় ওঁর বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠছে।’’ মন্ত্রীর দাবি, ‘‘ তোলাবাজির বিরুদ্ধে সরব হওয়ায় ভুল বকতে শুরু করেছে আহমেদ। ওর জন্য মন্তেশ্বর ব্লক জুড়ে সন্ত্রাসের শাসন চলছে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির ঘরে ঢুকিয়ে চার জন ইঞ্জিনিয়ারকে নির্মম ভাবে মারধর করা হয়েছে। এলাকা জুড়ে এমনই আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে যে, মানুষ ওর বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পান না।’’ সিদ্দিকুল্লার আরও দাবি, ‘‘আমি মন্তেশ্বরে কর্মসূচি করি না বলে আওয়াজ তুলছে আহমেদের লোকজন। অথচ গত সাড়ে চার বছরে প্রতিটি দুর্গাপুজোর আগে বস্ত্র বিতরণ করেছি। মালডাঙা বাস স্ট্যান্ড, কুসুমগ্রাম একতা মঞ্চ-সহ বিভিন্ন এলাকায় সভা, কর্মিসভা করেছি। আহমেদের লোকজনদের হাত দিয়ে গোছা গোছা শংসাপত্র পাঠিয়েছি।’’

মন্ত্রীর গাড়িতে হামলার পরেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসা কয়েক জন আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। তাঁদের বাঁচাতে এসে আহত হন মন্তেশ্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। গোষ্ঠী সমীকরণে তিনি মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। এ দিন তাঁর বাড়ির সামনে সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয়। তন্ময় বলেন, ‘‘বংশ পরস্পরায় আমার পরিবার দক্ষিণপন্থী দলের সঙ্গে যুক্ত। সিপিএম আমলে জেলও খাটতে হয়েছে। আবার নিজেদের সুসময়েও আমরা আক্রান্ত। মন্তেশ্বর ব্লক জুড়ে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। দলীয় কর্মীদেরই যেখানে কথা বলার স্বাধীনতা নেই, সেখানে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা, তা বোঝাই যাচ্ছে।’’ এ দিনও মন্তেশ্বর ছিল থমথমে। সারা দিন থানায় ছিলেন এসডিপিও (কালনা) রাকেশ চৌধুরী।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

manteswar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy