ঝকঝকে রাস্তা, রাস্তার পাশে ফুটপাথে ফুলের বাগানে চলছে প্রাতর্ভ্রমণ। নিজস্ব চিত্র।
চকিতে দেখলে মনে হবে অন্য বর্ধমান। বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বর্ধমানের ভিতরে ‘উপনগরী’ আখ্যা দিয়েছেন। কাঞ্চন উৎসবে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও সামগ্রিক পরিবেশ, পরিকাঠামোর প্রশংসা করেছেন। জেলা প্রশাসনের কর্তারাও বিভিন্ন বৈঠক কিংবা ঘনিষ্ঠ মহলে ওই এলাকা উন্নয়নের নিরিখে ‘মডেল’ হওয়া উচিত বলে জানান।
জনপদটি হল বর্ধমান পুর এলাকার রথতলা-কাঞ্চননগর। একদিকে চলে গিয়েছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে, অন্য দিকে বইছে দামোদর। তার মাঝেই রয়েছে বর্ধমান পুরসভার ২৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ড। শহরের বেশির ভাগ এলাকা যেখানে অপরিস্কার, সেখানে রথতলা-কাঞ্চননগর এলাকার রাস্তার দু’ধারে ফুলগাছ বসানো হচ্ছে। জমির জন্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প যে রাজ্যে আটকে যাচ্ছে, সেখানে রাস্তা চওড়া করার জন্য স্বেচ্ছায় স্থানীয় বাসিন্দারা জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন। বর্ধমানের পুরপিতা পরিষদের সদস্য তথা স্থানীয় কাউন্সিলর খোকন দাসের কথায়, “এলাকার বাসিন্দাদের সহযোগিতায় কাঞ্চননগরের মরা গাঙে জোয়ার আনার চেষ্টা করছি। হলফ করে বলতে পারি, বর্ধমানের ভিতর থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এই এলাকা ঘুরতে আসেন।” স্থানীয় সিপিএম নেতা গোপাল দাসও মেনে নিচ্ছেন, আপাতদৃষ্টিতে কাঞ্চননগরের শ্রী ফিরেছে।
ইতিহাস বলছে, পাল বংশের আমলে কাঞ্চননগরে জনপদের পত্তন। বর্ধমানের রাজ পরিবারের উত্তরসূরীদেরও বাসস্থান ছিল কাঞ্চননগর। সেখান থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে আধিপত্য বাড়তে শুরু করে। কীর্তিচন্দর আমলে কাঞ্চননগরকে ঢেলে সাজা হয়। সেখানে বারদ্বারিতে রাজবাড়ি বানানো হয়েছিল। দামোদরের বন্যার কারণে রাজবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হত বলে পরে মহাতাবচন্দ বর্তমানের রাজবাড়ি তৈরি করেন। ধীরে ধীরে কাঞ্চননগর গুরুত্ব হারাতে শুরু করে। কিন্তু রাজ পরিবারের পুরনো রীতি এখনও কাঞ্চননগরে পালিত হয়। কাঞ্চননগর বিখ্যাত ছুরি-কাঁচির জন্যেও। তারও গুরুত্ব হারাচ্ছে। বর্ধমানের গবেষক সর্বজিৎ যশের কথায়, “কঙ্কালেশ্বরী কালীমন্দিরকে ঘিরে কাঞ্চননগর আবার অন্য ভাবে সাজছে। ওখানে গেলে অন্য রকম অনুভূতি হয়।” জনশ্রুতি, মানব কঙ্কালের মতো দেখতে একটি কালীমূর্তি ১৯১৩ সালে দামোদর থেকে পাওয়া যায়। পাথরের তৈরি অষ্টভূজা এই মূর্তির গলায় নরমুণ্ডমালা, পদতলে শিব ও তাঁর দুই পাশে দু’জন সহচরী। আটটি হাতে নরমুণ্ড, শঙ্খ-চক্র, ধনু-খড়্গ রয়েছে।
কঙ্কালেশ্বরী মন্দির সংস্কার করা হয়েছে। সেখানকার দিঘিকে সংস্কার করে সৌন্দর্যায়ন ঘটানো হয়েছে। কাঞ্চন উৎসবকে সামনে রেখে রেখে রাস্তা চওড়া ও ফুলের টব লাগানো হয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিটি বিদ্যুতের খুঁটিতে লাগানো হয়েছে নীল-সাদা এলএইডি আলো। কাঞ্চননগর বাজারের বংশীবদন দত্ত থেকে হিমাদ্রী সিংহরা বলেন, “রথতলা থেকে উদয়পল্লি রাস্তা চওড়া করার জন্য তিরিশ জনের বেশি ব্যবসায়ী কিংবা স্থায়ী বাসিন্দা জায়গা ছেড়েছেন।” ফলে ১৫ ফুটের রাস্তা ২০ ফুটের হয়েছে। বর্ধমান পুরসভা ও বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার যৌথ উদ্যোগে পরিকাঠামো থেকে সৌন্দর্যয়ানের কাজ হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শহরের ভিতর বিসি রোড বা জিটি রোড হকার-সমস্যায় জর্জরিত। আর কাঞ্চননগরে হকারদের তুলে দিয়ে উন্নয়নের কাজ করা গিয়েছে। পুরপ্রধান স্বরূপ দত্তের কথায়, “শুধু ওই এলাকা নয়, শহর জুড়েই সৌন্দর্যায়নের কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” হচ্ছে না কেন? পুরসভার অন্দরে খবর: হকার-রাজের গলায় ঘণ্টা বাঁধতে হবে তো, বাঁধার লোক পাওয়া যাচ্ছে না! খোকন দাস-বিরোধী এক কাউন্সিলর বলেন, “পুরপ্রধান ও বিধায়ককে পকেটে পুরে রেখেছেন খোকনবাবু। সে জন্যেই গোটা শহর অন্ধকারে কাটালেও কাঞ্চননগর আলোয় ভাসে!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy