Advertisement
E-Paper

২৯২ রক্ষী থেকে কী লাভ, প্রশ্ন

পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী থাকা আর না-থাকার মধ্যে কোনও পার্থক্য বুঝতে পারছেন না বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। তাঁদের একাংশ বলছেন, মাত্র ৩৬ জন নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে যখন হাসপাতাল চলত, তখনও ওয়ার্ডে ঢুকে রোগীর পরিজনেরা হামলা চালিয়েছে। এখন হাসপাতালে ২৯২ জন নিরাপত্তারক্ষী।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৮ ০২:৪৩

পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী থাকা আর না-থাকার মধ্যে কোনও পার্থক্য বুঝতে পারছেন না বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। তাঁদের একাংশ বলছেন, মাত্র ৩৬ জন নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে যখন হাসপাতাল চলত, তখনও ওয়ার্ডে ঢুকে রোগীর পরিজনেরা হামলা চালিয়েছে। এখন হাসপাতালে ২৯২ জন নিরাপত্তারক্ষী। তাতেও চিকিৎসকদের উপরে হামলার একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত ফেব্রুয়ারিতে হাসপাতালে ৮ জন সুপারভাইজার এবং ২৮৪ জন নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করা হয়। কিন্তু, চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা বলছে, আট গুণ রক্ষী বাড়িয়েও হাসপাতালের ওয়ার্ডের ভিতরে অবাঞ্ছিত লোকেদের প্রবেশ আটকানো যায়নি। আর সে কারণে চিকিৎসকদের উপরে হামলাও বন্ধ করতে পারেননি নিরাপত্তারক্ষীরা। সোমবার দুপুরে জরুরি বিভাগের তিন তলায় হাসপাতালের প্রবীণ ও জুনিয়র চিকিৎসক মিলে পাঁচ জনকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে এক রোগীর পরিজনেদের বিরুদ্ধে। এ দিনই বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রাধারানি ওয়ার্ড অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে!

জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, চলতি এপ্রিলে রাধারানি ওয়ার্ডের ভিতরে এক মহিলা ইন্টার্নকে রোগীর পরিজনেরা হেনস্থা করেছিলেন। এ মাসে গত বুধবার এক দম্পতি কীটনাশক পান করে রাধারানি ওয়ার্ডে ভর্তি হন। পরিজনেদের চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, দম্পতির অবস্থা খুব ভাল নয়। সে জন্য ‘রেগে’ গিয়ে চিকিৎসককে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তাঁকে আটকাতে গিয়ে নিরাপত্তারক্ষী থেকে পুলিশকর্মীরাও জখম হন। ওই ঘটনায় পুলিশ এক জনকে গ্রেফতারও করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, সামনের রাস্তার ফুটপাত দখল করে থাকা ব্যবসায়ীদের একাংশের মদতে ওই ঘটনা ঘটেছে। এ দিনের ঘটনাতেও ওই মদতের কথা উঠে আসছে।

হাসপাতালের সুপার উৎপল দাঁ বলেন, “আমরা চেষ্টা করে চলেছি। কিন্তু, পরিকল্পিত ভাবে এই ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। চারদিকে দুষ্কৃতীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। দু’হাজার রক্ষী রেখেও কী লাভ? প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারাই বিষয়টি দেখুক।’’ জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, “কারা করছে, কেন করছে—সব খবর আমরা পাচ্ছি। আমরাও কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে বলেছি।’’

আক্রান্ত হওয়ার প্রতিবাদে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে বারবার হাসপাতাল অচল হয়েছে। কিন্তু পরের পর ঘটনা হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁকফোকর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। গত ডিসেম্বরে নিরাপত্তার দাবিতে টানা ২৮ ঘণ্টা কর্মবিরতি করেছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, অপ্রতুল নিরাপত্তারক্ষীর জন্য বিনা বাধায় রোগীর বাড়ির লোকজন ওয়ার্ডে ঢুকে মারধর করে চলে যাচ্ছে। মহিলা চিকিৎসকেরাও ‘ডিউটি’ করতে ভয় পাচ্ছেন। প্রায় একই সুর শোনা যায় সোমবার। চিকিৎসক-মারধরের ঘটনার পরে জুনিয়র চিকিৎসকরা কর্মবিরতি করে। ওই কর্মবিরতি তুলতে গিয়ে ঘেরাও হয়ে যান ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা। তাঁর কাছে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “রক্ষী রয়েছে। তাতে কি আমাদের আদৌ লাভ হয়েছে? একই সপ্তাহে দু’বার চিকিৎসকেরা মার খেলেন। এই সব রক্ষীর কর্মদক্ষতা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।’’ তাঁদের দাবি, নেই। জরুরি বিভাগ-সহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে একাধিক গেট রয়েছে। রোগীর পরিজনেরা নিজেদের ইচ্ছেমতো ঢুকে পড়ছেন। এক জন রোগীর সঙ্গে এক গাদা লোক চলে আসছেন।

ডেপুটি সুপারের কথায়, “আমরা ধৈর্য ধরে জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি শুনেছি। আমরা ঠিক করেছি, সমস্ত ওয়ার্ডে একই সময়ে ‘ভিজিটিং আওয়ার’ থাকবে। রোগী দেখার ক্ষেত্রে আমরা আরও কঠোর হব। এ ছাড়া রক্ষীদেরও তাঁদের কাজের প্রতি দায়িত্ববান হওয়ার জন্য বলা হচ্ছে।’’ তিনি আরও জানান, রোগীর প্রয়োজনের জন্য এক জনকে হলুদ কার্ড দেওয়া হয়। তাতেও এ বার কড়াকাড়ি করা হবে।

Doctors Beaten Burdwan Medical College and Hospital Security
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy