বাড়ি ফেরার পথে ‘বিতর্কিত’ বিজেপি নেতা কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গাড়িতে হামলা করার অভিযোগ উঠল তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। রবিবার গভীর রাতে আসানসোলের রবীন্দ্রনগর এলাকার ঘটনা। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে সোমবার হিরাপুর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান বিজেপির কয়েকশো সদস্য-সমর্থক। দলের জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের নেতৃত্বে বেলা সাড়ে এগারোটা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত বিক্ষোভ চলে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘যখন তৃণমূল ভাঙতে শুরু করেছে, সেখান থেকে বিধায়ক, সাংসদেরা বিজেপিতে আসতে শুরু করেছেন, তখন হতাশা থেকে বিজেপি কর্মীদের উপরে গুলি চালানো হচ্ছে। নানা ধরনের আক্রমণ করা হচ্ছে। আমরা গণতান্ত্রিক ভাবে আন্দোলন করছি। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই এর প্রতিকার করার চেষ্টা করব।’’ তবে অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের দাবি, ‘‘এটা ওঁদের গোষ্ঠী কোন্দল। আমরাও চাই, দুষ্কৃতীদের ধরুক পুলিশ। তবেই সত্যিটা প্রকাশ পাবে।’’
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি (পশ্চিম) বিশ্বজিৎ মাহাতা বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। দুষ্কৃতীদের খুঁজে বের করা হবেই।’’ এলাকায় থাকা সিসি টিভির ফুটেজ দেখে দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
বছরখানেক আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন রবীন্দ্রনগরের বাসিন্দা প্রাক্তন তৃণমূল কর্মী কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়। বর্তমানে তিনি বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে কৃষ্ণেন্দুবাবু জানিয়েছেন, রবিবার রাত পৌনে ১২টা নাগাদ তিনি নিজের গাড়িতে করে কলকাতা থেকে ফেরেন। বাড়ির কাছে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ঘরে ঢুকছিলেন। ঢোকার মুখেই জনাতিনেক হামলাকারী তাঁকে তাক করে গুলি চালায়। কিন্তু গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। গাড়ির সামনের দরজায় গুলি লাগে। তাঁর ও গাড়ির চালকের চিৎকারে আশপাশের মানুষজন ছুটে এলে দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম বর্ধমানের শিল্পাঞ্চলের নানা থানায় কৃষ্ণেন্দুবাবুর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগে মামলা রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, বার্নপুরে ক্যাটারিং ব্যবসায়ী খুন, ইস্কোর এক ঠিকাদারকে বার্নপুরের নিউটাউনে লোক পাঠিয়ে মারধর ও তোলাবাজি, আসানসোলের গোপালপুর এলাকায় এক ব্যবসায়ীর নিকট আত্মীয়কে অপহরণ ও মারধর, আসানসোল পুলিশ লাইন এলাকায় এক ব্যবসায়ীর ফ্ল্যাট দখল করে রাখা ইত্যাদি। তাঁকে এর আগে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। জেল হেফাজতও হয়েছে। অতীতে কৃষ্ণেন্দুবাবুর বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলি রয়েছে, সেগুলির কয়েকটির তদন্ত শেষ করে চার্জশিট কোর্টে জমা পড়েছে।
এই হামলার সঙ্গে সে সব ঘটনার কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি? কৃষ্ণেন্দুবাবুর দাবি, ‘‘আমি বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় তৃণমূলের অনেকের সমস্যা হচ্ছে। ভোটে হেরে যাওয়ার ভয়েই তারা আমার উপরে হামলা চালিয়েছে।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়েরও দাবি, ‘‘এই ঘটনার পিছনে তৃণমূলের হাত রয়েছে বলে ধারণা। কারণ, শিল্পাঞ্চলে বিজেপির শক্তি বেড়েছে। তাই ভয় পেয়েছে রাজ্যের শাসকদল। ফলে, সর্বত্রই বিজেপি নেতা-কর্মীদের উপরে আক্রমণ চালানো হচ্ছে।’’
যদিও তৃণমূলের জেলার মুখ্যপাত্র অশোক রুদ্র বলেন, ‘‘অতীতে এই ব্যক্তি বহু অপরাধে অভিযুক্ত। পুলিশি রেকর্ড ঘাঁটলেই তা জানা যাবে। পুরনো শত্রুতা থেকেই এই হামলা হয়ে থাকতে পারে।’’ পুলিশ সূত্রেরও দাবি, এই ‘হামলা’য় পুরনো ঘটনার কোনও রেশ রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।