Advertisement
E-Paper

যাত্রীরা নামতেই দাউদাউ করে জ্বলে গেল সরকারি বাস

একটুর জন্য দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেলেন ৪০ জন যাত্রী। সকাল দশটা নাগাদ কলকাতার করুণাময়ী থেকে রওনা দিয়েছিল দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার বাসটি। সাড়ে ১২টা নাগাদ বর্ধমান শহরে ঢুকেও দিব্যি চলছিল। তবে সদরঘাট উড়ালপুলের কাছে আসতেই চিৎকার শুরু করে দেন যাত্রীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৫৬
বাঁ দিকে, জ্বলছে বাস। ডান দিকে, বাসের আশপাশে ভিড় করে রয়েছেন স্থানীয়েরা, চলছে আগুন নেভানো। নিজস্ব চিত্র।

বাঁ দিকে, জ্বলছে বাস। ডান দিকে, বাসের আশপাশে ভিড় করে রয়েছেন স্থানীয়েরা, চলছে আগুন নেভানো। নিজস্ব চিত্র।

একটুর জন্য দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেলেন ৪০ জন যাত্রী।

সকাল দশটা নাগাদ কলকাতার করুণাময়ী থেকে রওনা দিয়েছিল দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার বাসটি। সাড়ে ১২টা নাগাদ বর্ধমান শহরে ঢুকেও দিব্যি চলছিল। তবে সদরঘাট উড়ালপুলের কাছে আসতেই চিৎকার শুরু করে দেন যাত্রীরা। কয়েক মুর্হুর্তেই আগুন-ধোঁয়ায় ভরে যায় বাস। আতঙ্কে হুড়মুড়িয়ে নামতে থাকেন যাত্রীরা। শেষমেশ দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরেই ভস্মীভূত হয় বাসটি। যাত্রীদের কারও অবশ্য তেমন ক্ষতি হয়নি।

পুলিশের দাবি, পূর্ত ভবনের কাছে বাসটি দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করে। ইঞ্জিনের কাছ থেকে আগুন বেরোচ্ছে দেখেই চম্পট দেয় চালক ও কন্ডাক্টর। পরে দমকলের একটি ইঞ্জিন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এসবিএসটিসি-র বর্ধমান ডিপোর অন্যতম কর্তা হৃদয় রাজা বলেন, ‘‘প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর আমাদের ধারণা, শর্ট সার্কিটের জন্যই আগুন লেগেছিল। ব্যাটারি গরম হয়ে যাওয়ায় তেলের পাইপ লাইনের ভাল্ভ ফেটে গিয়ে আগুন লেগে গিয়েছে।’’

ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই সরকারি বাসের রক্ষণাবেক্ষন ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, এসবিএসটিসির বর্ধমান ডিপোয় গাড়িগুলিকে ভাল ভাবে পরীক্ষা না করেই ছেড়ে দেওয়া হয়। এ দিন তারই মাসুল দিতে হল। তাঁদের ক্ষোভ, কপাল জোরে শহরের কাছে ঘটনাটি ঘটনায় বড় রকমের দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচা গিয়েছে। মাঝ রাস্তায় হলে কী হত ভেবেই তাঁরা আতঙ্কিত। এ ব্যাপারে এসবিএসটিসির বর্ধমান ডিপোর ম্যানেজারকে বারবার ফোন করে বা এসএমএস করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাসটির শহরের ভিতর না ঢুকে তেলিপুকুর হয়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে সাড়ে ১২টা নাগাদ সোজা নবাবহাট বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই সদরঘাটের উড়ালপুলের কাছে যাত্রীরা দেখতে পান বাসের নীচে থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরেই আগুনের শিখা দেখতে পেয়ে যাত্রীরা বাস থামানোর জন্য চিৎকার শুরু করে দেন। পূর্তভবনের কাছে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজনও বাসের নীচে থেকে আগুন ছিটকোচ্ছে দেখে চিৎকার শুরু করেন। চালক বাসটিকে রাস্তার উপরেই থামিয়ে পালান। সঙ্গী কন্ডাক্টরেরও খোঁজ পায়নি পুলিশ। ওই অবস্থায় হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হন। স্থানীয় বাসিন্দারা বালতি করে জল নিয়ে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। ততক্ষণে আগুনের লেলিহান শিখা বাসটিকে গিলে ফেলেছে।

সল্টলেকের বাসিন্দা সুনেত্রা মজুমদার বলেন, “করুণাময়ী থেকে আসছিলাম। নবাবহাটে নেমে শহর লাগোয়া উপনগরীতে যেতাম। আগুন থেকে তড়িঘড়ি মেয়েকে নিয়ে নামতে গিয়ে পায়ে লাগে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর, রাস্তায় পা দেওয়ার পরেই বাসটি দাউদাউ করে জ্বলে যায়।’’ বাসের অন্য যাত্রী শ্যামা চট্টোপাধ্যায় ও অখিল কর্মকাররা বলেন, ‘‘এখনও বুক ধড়পড় করছে। কয়েক সেকেন্ড দেরি হয়ে গেলে কী হত ভাবতেই ভয় লাগছে।’’ আশুতোষ অধিকারী ও রমেশ দাস নামে আরও দুই যাত্রীর আবার দাবি, ‘‘বাসের নীচের দিক থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে দেখে চিৎকার করতে থাকি। কিন্তু চালক আমাদের কথা না শুনে আরও তীব্র বেগে বাস চালাতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুন দেখতে পেলে সবাই মিলে বাস থামানোর জন্য চেঁচামেচি শুরু করে দেয়।’’ স্থানীয় বাসিন্দা বরুণ দাস, সুমন কার্ফারা বলেন, ‘‘আমরা রাস্তার ধারে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি বাসের নীচে থেকে আগুন বের হচ্ছে। আমরা সবাই মিলে চিৎকার করে বাস দাঁড় করাই। যাত্রীরা নামার কিছুক্ষণের মধ্যে বাসটি ভস্মীভূত হয়ে যায়।’’

ওই রুটের নিয়মিত যাত্রী জয়প্রকাশ রায়, সুমিত্রা দত্তগুপ্তদের কথায়, ‘‘বাসগুলো দেখতে ঝাঁ চকচকে হলেও ভিতর যে ফাঁপা, তে একটা ঘটনায় বুঝিয়ে দিল। যাত্রী নিরাপত্তার জন্য বাসগুলিকে নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষণ করা জরুরি।’’

Bus Catches Fire Bardhaman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy