Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

খুদেদের জন্য ইটভাটাতেই স্কুল

আদুল গায়ে, রংচটা পোশাকে সারাদিন ধুলো আর ইটের গুঁড়ো মেখে খেলে বেড়াত ওরা। একটু বড় হলেই মা-বাবাদের সঙ্গে ইট তৈরির কাজে হাত লাগাত। পড়াশোনা থেকে শতহস্ত দূরের ওই শিশুদের জন্য ইটভাটাতেই স্কুল খুলল প্রশাসন।

পাঠ: সমুদ্রগড়ের ভাটায় খুদেরা। নিজস্ব চিত্র

পাঠ: সমুদ্রগড়ের ভাটায় খুদেরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৩৪
Share: Save:

আদুল গায়ে, রংচটা পোশাকে সারাদিন ধুলো আর ইটের গুঁড়ো মেখে খেলে বেড়াত ওরা। একটু বড় হলেই মা-বাবাদের সঙ্গে ইট তৈরির কাজে হাত লাগাত। পড়াশোনা থেকে শতহস্ত দূরের ওই শিশুদের জন্য ইটভাটাতেই স্কুল খুলল প্রশাসন।

পূর্বস্থলী ১ ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে সমুদ্রগড়ের বাঘাডাঙার একটি ইটভাটায় শনিবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ওই স্কুলের। এর আগে বেসরকারি উদ্যোগে পূর্বস্থলীর বিদ্যানগর ও কালনায় ইটভাটায় এক-দুটো স্কুল খোলা হলেও সরকারি উদ্যোগে এমন কাজ এই প্রথম।

কাঁচা ইট তৈরি, শুকোনো, বাঁকে করে নিয়ে যাওয়া, পোড়ানোর মতো কাজে বহু দক্ষ শ্রমিক প্রয়োজন হয়। বিহার, ঝাড়খণ্ড, গোয়া থেকে এজেন্ট মারফত আসে শ্রমিকেরা। প্রতি বছর নভেম্বর নাগাদ এ রাজ্যে জুলাই নাগাদ ফিরে যান তাঁরা। সারা দিন হাড়ভাঙা খাটুনির মধ্যে ভাটা শ্রমিক মায়েরা ছেলেমেয়েদের তেমন দেখভাল করতে পারেন না। পড়াশোনা তো আরও দূর। আবার ভাষার সমস্যাতেও অনেকে স্থানীয় স্কুলে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করাতে পারেন না। ফলে অনেকেই কমবয়সে নেশায় ডোবে। সেই টাকা জোগাতে গিয়ে মহাজনের খপ্পরেও পড়ে। দীর্ঘ নেশার অভ্যেস কাড়ে কর্মক্ষমতা।

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মার্চ নাগাদ মিশন নির্মল বাংলার একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে বাঘাডাঙা এলাকার একটি ইটভাটা ঘুরে দেখেন বিডিও পুষ্পেন চট্টোপাধ্যায়, সমুদ্রগড় পঞ্চায়েতের প্রধান অপর্ণা মুন্সি, উপপ্রধান রঞ্জিত দেবনাথেরা। চোখে পড়ে উস্কখুস্কো চেহারার অপুষ্ট খুদেদের দুর্দশা। এরপরেই ভাটার মধ্যে হিন্দিভাষী ছেলেমেয়েদের জন্য স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। ভাটা মালিকদের সাহায্যে তৈরি হয় স্কুল ভবন ও শৌচাগার। ৪ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৬২ জন ছেলেমেয়েকে নিয়ে শুরু হয় লেখাপড়া। স্থানীয় কামালপুর কালীতলা এফপি এবং উপর চাপাহাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক দিলীপকুমার ঘোষ এবং বিশ্বনাথ রায়কে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। পড়ুয়াদের বই, পোশাকও দেওয়া হয়। স্কুলের উদ্বোধনে আসা মন্ত্রী-কর্তাদের গত একমাসে শেখা ইংরাজি, হিন্দি, অঙ্কের নমুনা দেখায় পড়ুয়ারা। জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘এমন প্রচেষ্টাকে ধরে রাখতে হবে।’’ মন্ত্রী স্বপন দেবনাথও শিক্ষকদের আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন।

আর ছেলেমেয়েদের স্কুলের পোশাকে দেখে ভাটাশ্রমিক বাসন্তীদেবী, শাহা দেবী, বুরবানি কচ্ছপেরা বলেন, ‘‘লেখাপড়া শিখলে ওদের কেউ ঠকাতে পারাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School State Government Child Labour
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE