প্রচার: পথে নেমেছেন শিল্পীরাও। নিজস্ব চিত্র
এই চাষের সঙ্গে আফিম, হেরোইন-সহ নানা ধরনের মাদকদ্রব্যের কারবার জড়িত। জেলার নানা প্রান্তের বাসিন্দাদের অভিযোগ, কোথাও আড়াল-আবডালে, কোথাও বা পুলিশ-প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ উপায়ে চলে এই পোস্ত চাষ। শেষমেশ পশ্চিম বর্ধমানে অবৈধ উপায়ে হওয়া পোস্ত চাষ সম্পূর্ণ বন্ধ করতে সক্রিয় হল জেলা প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে প্রথমেই বৃহস্পতিবার থেকে জেলা জুড়ে সাত দিন শিল্পীদের নিয়ে নানা এলাকায় প্রচার অভিযান শুরু হয়েছে।
পোস্ত চাষ বন্ধে জেলার আবগারি দফতর বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এ ছাড়া তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সহযোগিতায় এ দিন থেকে লোকশিল্পীরা বিভিন্ন ব্লকে পথনাটিকা, গান ও নৃত্যের মাধ্যমে পোস্ত চাষের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করেছেন। জেলার নানা প্রান্তে দেখা গেল, ‘পোস্ত চাষ/ হাজতবাস’, এই স্লোগানকে সামনে রেখে ট্যাবলো ঘুরছে নানা এলাকায়। আবগারি দফতর জানায়, ১৯৮৫ সালের ‘নারকোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যান্সেস’ আইনে বলা হয়েছে, অবৈধ উপায়ে পোস্ত চাষ করলে, দু’লক্ষ টাকা জরিমানা ও ২০ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। দফতরের কর্তাদের দাবি, গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় পোস্তচাষের খবর অনেক সময় পাওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে ভরসা করতে হয় এলাকাবাসীর উপরেই। তাই তাঁদের সচেতনতা বাড়াতেই এই প্রচার অভিযান শুরু হয়েছে বলে জানান আবগারি দফতরের কর্তারা।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আসানসোল ও দুর্গাপুর, এই দুই মহকুমাতেই নানা জায়গায় অবৈধ ভাবে পোস্ত চাষ হয়। জেলায় অবৈধ উপায়ে পোস্ত চাষের এলাকাগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানান আবগারি দফতরের কর্তারা। ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে আসানসোল মহকুমার জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ, বারাবনি এবং দুর্গাপুর মহকুমার অন্ডাল, পাণ্ডবেশ্বর, কাঁকসায় পোস্ত চাষের রমরমা রয়েছে। বিশেষ করে জামুড়িয়ার বাড়ুল, লালাবাজার, বীরকুলটি, চিচুড়িয়ায় সরকারি খাসজমিতে, বারাবনির লালগঞ্জ খনি এলাকা এবং অজয়ের পাড়ে মোতিপুর চরে, রানিগঞ্জের বল্লভপুর, অন্ডালের শ্রীরামপুর, পাণ্ডবেশ্বরের রামনগর ও ঘুটুলিয়া ঘাট লাগোয়া অঞ্চল, কাঁকসার রানিপুর, দেহিবাটি, কুনুর-সহ বেশ কিছু এলাকায় পোস্ত চাষ চলে বলে দাবি।
কী ভাবে হয় এই চাষ? আবগারি দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, এক শ্রেণির দালাল জমি চিহ্নিত করে এলাকার কৃষকদের টাকা দিয়ে পোস্ত চাষ করায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই দালালরা বিঘা প্রতি জমিতে পোস্ত চাষের জন্য ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচ করে। আয় প্রায় তিন লাখ টাকা। আবগারি দফতরের পশ্চিম বর্ধমান জেলার সুপারিন্টেন্ডেন্ট তুহিন নাগ বলেন, ‘‘পোস্তর খোলের আঠা থেকে তৈরি হয় আফিম, হেরোইনের মতো মাদক। তাই লাভের অঙ্কটা এত বেশি। গরীব চাষিদের টাকার লোভ দেখিয়ে মাফিয়ারা এ সব চাষ করায়।’’
সম্প্রতি জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) শশাঙ্ক শেঠির উপস্থিতিতে একটি বৈঠকে পোস্ত চাষ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে। তার পরেই এই চাষ রুখতে ধারাবাহিক অভিযানে নামা হয় বলে জানান তুহিনবাবু। আবগারি দফতর জানায়, সাধারণত, সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে পোস্ত চাষ শুরু হয়। এ বার অভিযানের কারণে তা হয়নি বলে দাবি তুহিনবাবুর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy