Advertisement
১৯ মে ২০২৪

পড়া ছাড়ব না, দৃঢ় তনুপ্রিয়া

বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। অর্ধেক দিন ফেনাভাত খেয়েই স্কুলে যেতে হয় মেয়েটিকে। কিন্তু অভাব, অনটন কিছুই আটকাতে পারেনি তনুপ্রিয়া বন্দ্যোপাধ্যাকে। এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ডিডিসি গার্লস স্কুল থেকে ৪৩০ পেয়েছে কলা বিভাগের ওই ছাত্রী। তনুপ্রিয়ার বাবা তারকবাবু কাটোয়ার কাশীরাম দাস বিদ্যায়তনে রাত পাহারা দেন। আবার সকালে স্কুল খোলার সময় থেকে ছাত্রদের সাইকেল স্ট্যান্ডেও পাহারা দেন তিনি।

তনুপ্রিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়।

তনুপ্রিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৬ ০১:২৫
Share: Save:

বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। অর্ধেক দিন ফেনাভাত খেয়েই স্কুলে যেতে হয় মেয়েটিকে। কিন্তু অভাব, অনটন কিছুই আটকাতে পারেনি তনুপ্রিয়া বন্দ্যোপাধ্যাকে। এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ডিডিসি গার্লস স্কুল থেকে ৪৩০ পেয়েছে কলা বিভাগের ওই ছাত্রী।

তনুপ্রিয়ার বাবা তারকবাবু কাটোয়ার কাশীরাম দাস বিদ্যায়তনে রাত পাহারা দেন। আবার সকালে স্কুল খোলার সময় থেকে ছাত্রদের সাইকেল স্ট্যান্ডেও পাহারা দেন তিনি। মেয়ে ততক্ষণে পড়া সেরে স্কুলের পথে। সংসার চালানোয় তারকবাবুকে সাহায্য করেন তাঁর স্ত্রী রিনাদেবীও। মাসে হাজার টাকা বেতনে নাইট স্কুলে বয়স্কদের পড়ান তিনি। দু’জনেরই একটাই লক্ষ্য, মেয়ে যেন ভালমানুষ হয়। বাবা-মায়ের মুখ রেখেছে তনুপ্রিয়া। রিনাদেবী জানান, স্কুল থেকে সাইকেল পাওয়ার আগে হেঁটেই স্কুলে যেত মেয়েটা। চাল বাড়ন্ত থাকলে মুড়ি, চিঁড়েও খেয়ে নিত কিছু না বলে। কথা বলতে বলতে চোখটা ছলছল করে ওঠে তাঁর। মায়ের চোখ মুছিয়ে তনুপ্রিয়া জানায়, ‘‘অভাব যতই থাক, পড়াশুনা আমি চালিয়ে যাব। প্রয়োজন হলে এত দিন যেমন চেয়েচিন্তে পড়েছি, ভবিষ্যতেও তাই করব।’’ তারকবাবু জানান, বাড়িতে শৌচাগারও ছিল না তাঁদের। কাশীরাম দাস বিদ্যায়তনের শিক্ষকদের আর্থিক সাহায্যে শৌচাগার তৈরি সম্ভব হয়েছে। তনুপ্রিয়াও জানায়, নিজের স্কুল থেকে তেমন আর্থিক সাহায্য না পেলেও বাবার স্কুলের শিক্ষকেরা প্রয়োজনে বই দিয়ে বা বিনা পারিশ্রমিকেই পড়িয়েছেন। তাঁদের সাহায্য না হলে এমনটা সম্ভব হতো না বলেও তার দাবি।

তারকনাথবাবু বলেন, ‘‘মেয়েকে তো সেভাবে কোনও স্বাচ্ছন্দ্যই দিতে পারিনি। ভাবতে পারিনি এত নম্বর পাবে।’’ মাধ্যমিকেও ৬৯ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল তনুপ্রিয়া। এ বার অবশ্য সেই ফল ছাপিয়ে গিয়েছে সে। তবে তার একটাই আফশোস, ‘‘ইংরেজিতে ৮৮ পেয়েছি, এটাই একটু কমে গিয়েছে।’’ ভবিষ্যতে ইংরাজি নিয়ে পড়েই শিক্ষিকা হতে চায় সে। তনুপ্রিয়া বলে, ‘‘ইংরাজিতে আমায় আরও জোর দিতে হবে।’’ তবে শিক্ষিকা হতে এখনও অনেক পথ বাকি। অনেক খরচাও। তারকবাবুর শঙ্কা, ‘‘আমার এই সীমিত আয়ে এরপরে মেয়েকে পড়াব কি করে? কিন্তু মেয়েকে আমি মানুষের মতো মানুষ করতে চাই।’’

বাবার চিন্তার ছাপ তনুপ্রিয়ার মুখে পড়লেও পরক্ষণেই সে বলে ওঠে, ‘‘দরকার হয় টিউশন পড়াব। তবু পড়া ছাড়ব না কিছুতেই।’’ শিক্ষিকা যে তাকে হতেই হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Exam-result Student HS exam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE