Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হ্যাঁচকা টানে স্কুলবাসে খুদেরা

দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ছুটছে পুলকার। খোলা জানলা দিয়ে হাত বের করে বৃষ্টিতে ভিজছে দুই খুদে।

ঝুঁকি: জায়গা নেই, তবু ঠেসাঠেসি করে পুলকারে। ছবি: উদিত সিংহ

ঝুঁকি: জায়গা নেই, তবু ঠেসাঠেসি করে পুলকারে। ছবি: উদিত সিংহ

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৮ ০০:২৫
Share: Save:

কালীবাজার মোড়ে বিকট শব্দে ব্রেক কষে দাঁড়াল হলুদ বাস। যানজট, পিছনের গাড়ি, রিকশার তাড়ার মাঝেই বাসের পাদানি থেকে রাস্তার ধারে দাঁড়ানো কয়েকজন পড়ুয়াকে প্রায় ঘাড় ধরে টেনে নিলেন এক বাসকর্মী। এত তাড়া কেন— প্রশ্ন করতেই চেঁচিয়ে বললেন, ‘স্কুলে দেরি হয়ে যাচ্ছে তো’। এক অভিভাবক জানালেন, কয়েকদিন আগে এ ভাবে ছোঁ মেরে পড়ুয়াদের তোলার সময় পাদানি থেকে পড়ে যাচ্ছিল এক খুদে। কোনও মতে ধরে ফেলা হয় তাকে।

বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল স্কুলের সামনে জিটি রোডের ধারেও কচিকাঁচাদের নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন অভিভাবকেরা। পুলকার আসতেই বস্তা তোলার মতো তুলে নেওয়া হয় খুদেদের। জালে ঘেরা পুলকারে সবার বসার জায়গাও হল না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে, এ ওর ঘাড়ে পড়ে যেতে যেতেই চলল স্কুলে। এক অভিভাবিক বলেন, ‘‘৮ জনের জায়গায় যাচ্ছে ১৫ জন। স্কুল কর্তৃপক্ষকে বহু বার বলেছি। কে শোনে!’’

দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ছুটছে পুলকার। খোলা জানলা দিয়ে হাত বের করে বৃষ্টিতে ভিজছে দুই খুদে। পথচারীরা চেঁচিয়ে চালককে সতর্ক করলেও তিনি চলছেন নিজের তালে।

রোজ এ ভাবেই স্কুলে যায় বর্ধমানের ছেলেমেয়েরা। লজঝড়ে পুলকার, ভাঙাচোরা বাসে তাদের পাঠিয়ে প্রাণ হাতে বসে থাকেন অভিভাবকেরা। দুর্ঘটনা ঘটে, তারপরেও হুঁশ ফেরে না প্রশাসনের।

‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ নিয়ে জেলা পুলিশ, প্রশাসন একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়েছে। কিন্তু স্কুল পড়ুয়াদের দিকে নজর নেই কেন? পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘শহর বা লাগোয়া এলাকায় কত স্কুলবাস বা পুলকার চলে তার কোনও হিসেব আমাদের কাছে নেই। অনেক জায়গায় ভ্যানে করেও বিপজ্জনক ভাবে পড়ুয়াদের আনা-নেওয়া করা হয়। কিন্তু সেগুলি বৈধ না অবৈধ তা জানা নেই।’’

ট্র্যাফিক পুলিশের মতে, পুলকার চিহ্নিত ও নিয়ন্ত্রণ করা পরিবহণ দফতরের কাজ। পরিবহণ দফতরও জানিয়েছে, বারবার দুর্ঘটনার সময় জেলা থেকে পুলকার নিয়ন্ত্রণের জন্য তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু এখন তাতে ভাটা। ফলে পুলকার নিয়ে কোনও তথ্যই পুরোপুরি তাদের কাছে নেই। এমনকি পুলকার চালকদের অধিকাংশের লাইসেন্স নেই বলেও অভিযোগ। জেলা পরিবহণ আধিকারিক মহম্মদ আবরার আলমের যদিও দাবি, ‘‘দ্রুত অভিযান করে নতুন করে পুলকার নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু হবে। চালকদেরও লাইসেন্স রয়েছে কি না দেখা হবে।’’

তবে এ আশ্বাসসে নিশ্চিন্ত হতে পারেন না অভিভাবকেরা। অনেকেই সময়ের অভাবে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পৌঁছে দিতে পারেন না। ভরসা স্কুলের গাড়ি। মলিনা দাস, রঞ্জনা নায়েকদের দাবি, ‘‘কাঁধে ভারী ব্যাগ নিয়ে ছেলেমেয়েরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। কখনও বাস থেকে টেনে তুলে নেওয়া হয়, কখনও পুলকারের ভাঙাচোরা গাড়ি দেখে মনে হয় এই বুঝি দুর্ঘটনা ঘটল। ওরা ফিরলে তবে শান্তি।’’ বাসগুলিতে শিশুদের দেখভালের জন্য স্কুলের তরফে সবসময় কেউ থাকে না বলেও তাঁদের দাবি। তাঁদের অভিযোগ, নিয়মিত নজরদারি না থাকাতেই এই হাল।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, যানজট রুখতে স্কুলগুলি শহরের ভিতর ছোট বাস নামাবে। কিন্তু সেই প্রস্তাবও কার্যকর হয়নি। তত দিন স্কুলের ‘পথ’টা বড়ই দুশ্চিন্তার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Burdwan Poolcar School students Road Safety
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE