প্রতীকী ছবি।
পড়াশোনা তো বটেই, ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল আরও বেশি। স্কুলের পরে পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ানো, পড়া বুঝিয়ে দেওয়া এমনকী, পাঠ্যের বাইরেও নানা জিনিস শেখাতেন তিনি। ছাত্রছাত্রীদের কাছেও ‘স্যার’ ছিলেন বাবার মতো। এমন ‘স্যারে’র বদলির খবরে আব্দার, অনুরোধ, কান্নাকাটি পড়ে যায় স্কুলে। টান কাটিয়ে যেতে পারেননি বছর পঞ্চাশের ওই শিক্ষকও।
বুধবার বাংলার শিক্ষক সোমনাথ মাফদার পারুলিয়া কুলকামিনী উচ্চ বিদ্যালয়ে ঢুকতেই তাঁকে ঘিরে ধরে পড়ুয়ারা। আর্জি একটাই, ‘আমাদের ফেলে যাবেন না স্যার।’ বাড়ির কাছে স্কুলে বদলির সুযোগ পেয়েও ছেড়ে দেন সোমনাথবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘ছাত্রছাত্রী, সহকর্মীদের অনুরোধ ফেলে যেতে পারলাম না। ওদের নিয়ে এভাবেই জীবন কাটিয়ে দেব।’’
স্কুল সূত্রে জানা যায়, বেশ কিছু দিন আগেই পারস্পরিক বদলির জন্য আবেদন করেছিলেন ওই শিক্ষক। বাড়ির কাছে সমুদ্রগড় পারুলডাঙা উচ্চবিদ্যালয়ে বদলির সুযোগও পেয়ে যান। এই স্কুলে বদলি হলে প্রতিদিনের চার ঘণ্টা যাতায়াত কমে অর্ধেক হয়ে যেত তাঁর। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই ওই শিক্ষককে ছাড়তে চায়নি স্কুল। স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ সাহা জানান, সোমনাথবাবু বছর দশেক এই স্কুলে রয়েছেন। তিনি আসায় অনেক কিছুই বদলেছে স্কুলে। বরাবরই দুর্বল, পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের ক্লাসের পরে আলাদা করে সময় দেন তিনি। কেউ স্কুলে না এলে খোঁজখবর করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি পড়ুয়াদের সংস্কৃতিমনস্ক করে তোলাতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। স্বাভাবিক ভাবেই ছাত্রছাত্রীদের কাছেও জনপ্রিয় তিনি।
সোমনাথবাবুর থেকে উৎসাহ পেয়ে অন্য শিক্ষকেরাও পড়ুয়াদের নানা ভাবে সাহায্য করেন বলেও তাঁর দাবি। শিক্ষক সুব্রত সামন্ত, অশোক সাহা বলেন, ‘‘ওঁর থেকে অনেক কিছু পেয়েছে স্কুল। উনি চলে গেলে অনেক কিছু হারাব আমরা।’’
শিক্ষককে ধরে রাখতে পেরে খুশি রাহুল দাস, শুভ দেবনাথ, সাগর রায়, সায়ন্তী সরকার, জয়শ্রী শীলরা। তাঁদের কথায়, ‘‘উনি আমাদের অভিভাবকের মতো। উনি স্কুলে থাকবেন না ভাবতেই পারি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy