পরিচর্যা: জারবেরা চাষ চলছে বেতপুকুর গ্রামে পরিতোষবাবুর বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র
প্রায় ২২ বিঘা জমি রয়েছে। কিন্তু গতানুগতিক ধান, পাট চাষ করে তেমন লাভ হত না। উল্টে ক্ষতির মুখও দেখেছেন। নিজের তাগিদ আর কৃষি দফতরের উৎসাহে ধীরে ধীরে মিশ্র চাষে ঝোঁকেন পূর্বস্থলী ২ ব্লকের উত্তর শ্রীরামপুর এলাকার শঙ্কর মণ্ডল। আর তাতেই এল সাফল্য।
মঙ্গলবার, কৃষক দিবসের দিনে কলকাতার নজরুল মঞ্চে কৃষক সম্মান পেলেন কালনা মহকুমার দুই চাষি। শঙ্করবাবু ছাড়াও এই পুরস্কার পেয়েছেন পূর্বস্থলী ১ ব্লকের বেতপুকুর গ্রামের পরিতোষ দেবনাথ। মঙ্গলবার তাঁদের হাতে নগদ ২৫ হাজার টাকা-সহ নানা পুরষ্কার তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
কী করেছেন এঁরা?
শঙ্করবাবু নিজেই জানাচ্ছেন, বছর সাতেক আগে ২২ বিঘে জমি টুকরো টুকরো করে ভেঙে পেঁয়াজ, পাট, সব্জি, কলাই, মুসুরি, সরষে, আখ চাষ শুরু করেন। বাজার দর ভাল থাকায় ফসল বেচে লাভও পেতে থাকেন। যেটা কয়েক বছর আগেও গতানুগতিক চাষ থেকে হত না। পড়ে থাকা চার বিঘে জমিতে তৈরি করেন আমবাগান। সেখানে আম্রপালি, হিমসাগর লাগান। আমবাগান থেকে দু’বছর পর পর মোটা অঙ্কের টাকা পান। এ ছাড়াও বাড়িতে রয়েছে দুটি শঙ্কর জাতের গরু। সেখান থেকে মেলে ১৭ লিটার দুধ।
কৃষি দফতরের দাবি, নিজের চাষ নিয়ে অত্যন্ত সচেতন এই চাষি। নিয়মিত জমির মাটি পরীক্ষা করান। চাষে ব্যবহার করেন জৈব সার এবং উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি। পূর্বস্থলী ২ ব্লকের কৃষি আধিকারিক জনার্দন ভট্টাচার্য জানান, গতানুগতিক চাষ আঁকড়ে না ধরে শঙ্করবাবু জোর দিয়েছেন মিশ্র চাষে। বাজার দর ভাল থাকতে থাকতেই জমি থেকে ফসল তোলেন। ফলে চাষে লাভ নিশ্চিত করতে পেরেছেন। এলাকার অন্য চাষিদের কাছে উনি মডেল।
আরও পড়ুন: ছেলের স্মৃতিতে রং খেলা কচিকাঁচাদের সঙ্গে
অ্যাকোয়াকালচার বিভাগেও এ দিন পুরস্কার দেওয়া হয়। ফিশারি উপবিভাগে পুরস্কৃত হয়েছেন বিজয় রায়। তাঁর বাড়ি কালনা শহরের ছোট দেউড়িপাড়া। মাছের ডিমপোনা থেকে শুরু করে বড় মাছের ব্যবসা রয়েছে তাঁর। কালনা ছাড়াও কাটোয়া, মঙ্গলকোট, মেমারির সাতগাছিয়া সহ নানা জায়গার ৪০টি পুকুর চাষ করেন তিনি। বছরে তৈরি করেন ৮০ কোটি চারাপোনা। বড় মাছ প্রায় ৩০০ টন। এঁদের দেখে এলাকার লোকজন উৎসাহিত হচ্ছেন বলে মহকুমা উদ্যান পালন আধিকারিকের দাবি। মহকুমা কৃষি দফতরের সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ জানান, সে কারণেই পুরস্কার। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পুরস্কার নিয়ে খুশি দুই চাষি। এই পুরস্কার কাজে উৎসাহ দেবে বলেও জানাচ্ছেন তাঁরা।
সম্প্রতি জেলা কৃষি দফতরের তরফে চাষিদের তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয় ব্লক দফতরে। তার ভিত্তিতে জেলার ৩১ ব্লকের একজন করে চাষিকে পুরষ্কার দেওয়া হয়। নগদ দশ হাজার টাকা, মানপাত্র ছাড়াও দেওয়া হয় কাঁসার থালা। এ দিন বর্ধমান ১, ২, মেমারি ২, পূর্বস্থলী ১ ব্লকের অনুষ্ঠানে ছিলেন প্রাণী সম্পদ দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। চাষিদের উদ্দেশে মন্ত্রীর পরামর্শ, ‘‘বাড়ির উঠোনে ভেষজ চাষ করুন। তার ভাল বাজার রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy