Advertisement
E-Paper

হদিস নেই ছেলের, কান্না পুজোবাড়িতে

গ্রামে একটাই পুজো হয়। তিনশো বছরের পুরনো পুজোকে ঘিরে মেতে ওঠে গোটা গ্রাম। কিন্তু এ বার পুজোর দিন চারেক আগে হঠাৎই শোকের আবহ সেখানে। সুনসান মণ্ডপ চত্বর। তার সামনে দাঁড়িয়ে জনা তিনেক কিশোর বলে, ‘‘দেবীর গায়ে রং লাগলেও গোটা গ্রামটা যেন রংহীন হয়ে পড়েছে!’’

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৫২
প্রিয়দীপ।

প্রিয়দীপ।

ম্যারাপ বাঁধা হয়ে গিয়েছে। প্রতিমার গায়ে রঙের প্রলেপ পড়েছে। সেখানে দাঁড়ালে মাঝে-মধ্যেই ভেসে আসছে কান্নার রোল।

গ্রামে একটাই পুজো হয়। তিনশো বছরের পুরনো পুজোকে ঘিরে মেতে ওঠে গোটা গ্রাম। কিন্তু এ বার পুজোর দিন চারেক আগে হঠাৎই শোকের আবহ সেখানে। সুনসান মণ্ডপ চত্বর। তার সামনে দাঁড়িয়ে জনা তিনেক কিশোর বলে, ‘‘দেবীর গায়ে রং লাগলেও গোটা গ্রামটা যেন রংহীন হয়ে পড়েছে!’’

বর্ধমান শহরের নবাবহাট থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে বর্ধমান-সিউড়ি রোডের উপরে দে পাড়া গ্রাম। সেখানে একমাত্র পুজোটি হয় কুণ্ডু পরিবারে। রীতি মেনে প্রতি বছর ভাগীরথীতে স্নানের জন্য কাটোয়ায় ভাগীরথীর দেবরাজ ঘাটে যান তাঁরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানে স্নান করতে গিয়ে তলিয়ে গিয়েছে বাড়ির ছেলে প্রিয়দীপ কুণ্ডু (সায়ন)। শুক্রবার রাত পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়েও তালিত গৌড়েশ্বর হাইস্কুলের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী প্রিয়দীপের। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, রাজ্য থেকে বিপর্যয় মোকাবিলার একটি দল কাটোয়া যাচ্ছে।

শুক্রবার বাড়িতে বসে প্রিয়দীপের বাবা হরনাথ কুণ্ডু বলেন, ‘‘আমরা ঘাটের পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ছেলে জলে নেমে দু’টি ডুব মারার পরে আঙুল দেখিয়ে জানায়, আরেক বার ডুব দিয়ে পাড়ে উঠে আসবে। তার পর থেকে আর খোঁজ নেই।” প্রিয়দীপের পিসি জবা রুদ্র বলেন, “আমি ওকে স্নানে যেতে নিষেধ করেছিলাম। শুনল না!’’

কুণ্ডু বাড়ির পুজো মণ্ডপ।

পরিবারের লোকজন জানান, প্রতি বছর কলা বৌ নিয়ে আসা থেকে বিসর্জন, পুজোর সব কিছুতেই থাকে প্রিয়দীপ। বাড়ির কিশোর সদস্য রূপম কুণ্ডু, অয়ন রুদ্রদের কথায়, ‘‘ক্যারম খেলা থেকে ঠাকুর দেখতে যাওয়া, কত পরিকল্পনা ছিল। পুজোর গন্ধটাই উবে গেল!’’ প্রিয়দীপের জেঠিমা বলছিলেন, ‘‘পুজোর সময়ে বাড়ির চার ছেলে এক সঙ্গে আনন্দ করে। বাজি ফাটানো, নাচ-গান। এ বার আবহটাই পাল্টে গেল।”

পরিবারের প্রবীণ সদস্য গুরুচরণ কুণ্ডু জানান, বাইরের লোকজন কোনও রকমের পুজো করবেন। পুজোমণ্ডপে প্রতিমার দিকে তাকিয়ে প্রিয়দীপের বন্ধু শুভদীপ দে, ইন্দ্রনীল বেজ, আকাশ চক্রবর্তীরা বলে, ‘‘এখানে পুজোতে কত আনন্দ করেছি। আমরা বন্ধুকেই খুঁজছি।’’ গ্রামের যুবক অরিন্দম কোনার বললেন, ‘‘পুজোর সময়ে গোটা গ্রাম একান্নবর্তী পরিবার হয়ে ওঠে। এ বার সেই সুতোটা যেন কেটে গিয়েছে।’’ ছেলে তলিয়ে যাওয়ার পর থেকেই প্রলাপ বকছেন মৃদুলাদেবী। শুক্রবার তিনি বলছিলেন, ‘‘আমার ছেলে এসেছে? ঘট ভরতে যাবে। কোথায় সে?’’

—নিজস্ব চিত্র।

Durga Puja Bhagirathi River
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy