Advertisement
E-Paper

দেখভালের অভাব, ডালপালায় নষ্ট হচ্ছে ঐতিহ্য

শিল্পাঞ্চলের দর্শনীয় স্থানগুলির জনপ্রিয়তা বাড়াতে ‘ভ্রমণ’ বাস পরিষেবা চালু করেছেন আসানসোল পুর-কর্তৃপক্ষ। ‘আসানসোলকে জানুন’ বিষয়ক এই কর্মসূচিতে ভ্রমণার্থীদের পুরো একটি দিন শিল্পাঞ্চলের দর্শনীয় স্থানগুলি ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে এই বাস।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৪০
নজরদারির অভাবে নষ্ট হচ্ছে মন্দির। নিজস্ব চিত্র

নজরদারির অভাবে নষ্ট হচ্ছে মন্দির। নিজস্ব চিত্র

শিল্পাঞ্চলের দর্শনীয় স্থানগুলির জনপ্রিয়তা বাড়াতে ‘ভ্রমণ’ বাস পরিষেবা চালু করেছেন আসানসোল পুর-কর্তৃপক্ষ। ‘আসানসোলকে জানুন’ বিষয়ক এই কর্মসূচিতে ভ্রমণার্থীদের পুরো একটি দিন শিল্পাঞ্চলের দর্শনীয় স্থানগুলি ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে এই বাস। সেই তালিকায় জায়গা পেয়েছে বরাকরের সিদ্ধেশ্বর মন্দির।

কিন্তু শিল্পাঞ্চলবাসীর অভিযোগ, অত্যন্ত অযত্নে পড়ে রয়েছে এই মন্দির। তাঁরা এই মন্দিরের যত্ন ও উপযুক্ত সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন। বাসিন্দাদের এই দাবি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন শহরের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি।

বরাকরের বেগুনিয়া চৌমাথা থেকে স্টেশনের দিকে কয়েক পা এগোলেই বাঁদিকের ফাঁকা মাঠে দেখা যায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে চারটি বেলে পাথরের মন্দির। মন্দিরগুলির নির্মাণকাল বিষয়ে ঐতিহাসিকদের ভিন্ন মত রয়েছে। তবে পুরাতত্ত্ব বিভাগ এই মন্দিরগুলির নির্মাণকাল ঘোষণা করেছে ১৪১৬ সাল। মন্দিরগুলি এখন সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধীনে রয়েছে। ওই বিভাগের উদ্যোগেই এগুলি সংরক্ষণের ব্যবস্থাও হয়েছে। তবুও প্রাচীন এই ঐতিহ্যগুলি অত্যন্ত অযত্নে পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁদের আরও অভিযোগ, পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধীনে থাকা প্রাচীন মন্দিরে পূজার্চনা করার নিয়ম নেই। অথচ প্রতিদিনই মন্দিরের দেওয়াল ও মেঝেতে সিঁদুর লেপে আগুন জ্বালিয়ে যজ্ঞ করে চলছে পূজা পাঠ। বিকেল পাঁচটার পরে এখানে পাহারা দেওয়ার কেউ থাকেন না। তারই সুযোগ নিয়ে এলাকার দুষ্কৃতীরা মন্দির চত্বরে মদ-জুয়ার আসর বসাচ্ছে। সেখানে গিয়ে দেখা গিয়েছে, মন্দিরগুলির গা বেয়ে গজিয়ে উঠেছে অশ্বত্থ গাছের ডালপালা।

দিনের পর দিন ধরে চলা এই অযত্ন ও বেনিয়ম কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না? দেখভালের দায়িত্বে থাকা পুরাতত্ত্ব বিভাগের কর্মী সঞ্জীব মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমার একার পক্ষে যতটা দেখভাল করা সম্ভব ততটাই করি।’’ স্থানীয় বাসিন্দারাও জানিয়েছেন, বিকেল পাঁচটার পরে এখানে পাহারা দেওয়ার কেউ থাকেন না। তারই সুযোগ নিয়ে এলাকার দুষ্কৃতীরা মন্দির চত্বরে মদ-জুয়ার আসর বসাচ্ছে।

শিল্পাঞ্চলের এই দর্শনীয় মন্দিরগুলিকে যত্ন ও উপযুক্ত সংরক্ষণের আবেদন করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। বরাকর নাগরিক কমিটির সদস্য শুভময় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা চাই আসানসোল পুর-কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিক।’’ বাসিন্দাদের যুক্তি, গ্রিন সিটি মিশনের অন্তর্গত শহরের সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। নাগরিকদের দ্রষ্টব্য স্থানও ঘুরিয়ে দেখানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সুতরাং সেই তালিকায় জায়গা পাওয়া এই মন্দিরগুলিরও উপযুক্ত সংরক্ষণ করা উচিত।

শহরের বিশিষ্ট ভাস্কর আশিস পাল বলেন, ‘‘পুরসভার তরফে এই উদ্যোগ নেওয়া হলে প্রায় সাতশো বছরের প্রাচীন এই ঐতিহ্য রক্ষা পাবে।’’

শহরের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি জানিয়েছেন, এই ধরনের প্রাচীন স্থাপত্য সংরক্ষণ করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের। ইতিমধ্যে এটি পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধীনে এসেছে। মেয়র বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন এই ব্যপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়, সে বিষয়ে আমরা সচেষ্ট হব।’’ জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠিও জানিয়েছেন, শহরের ঐতিহাসিক স্থানগুলির উপযুক্ত দেখভাল করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।

Temple Surveillance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy